অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
দুই পর্বের প্রথম পর্ব
যে কারণে তারেক রহমান অপশক্তির প্রধান টার্গেট
প্রকাশ: ০৬:৫৪ এএম, ২০ নভেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৪১ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
তারেক রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি অস্তিত্ব, একটি প্রতিষ্ঠান, একজন সম্ভাবনাময় তরুণ উদীয়মান নেতা। যাঁর পিতা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক এবং আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং মাতা মহিয়সী নারী, আপোসহীন নেত্রী, তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী, Mother of Democracy, সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এমন একটি গর্বিত পরিবারের সন্তান তারেক রহমান। পারিবারিক ঐতিহ্য, পিতার আদর্শ ও মাতার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের প্রভাব তাঁকে করেছে সমৃদ্ধ। এই সমৃদ্ধতা তারেক রহমানের জীবনে এক অনন্য সংযোজন। তারেক রহমান ছাড়া বাংলাদেশের ভবিষ্যত জাতীয়তাবাদী রাজনীতি অকল্পনীয়। আকস্মিক ভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের আগমন ঘটেনি। সময় এবং বাংলাদেশের রাজ‣নতিক প্রয়োজনেই তারেক রহমানের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৮৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বগুড়ার গাবতলি উপজেলায় বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শুরু করেন তাঁর রাজ‣নতিক জীবনের অগ্রযাত্রা। ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনী প্রচারে তারেক রহমান ছিলেন বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট। তারপর থেকে তিনি শুরু করেন রাজনীতি অধ্যয়ন, চর্চা এবং উপলব্ধিকরণ। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির ঐতিহাসিক বিজয়ের পেছনে তারেক রহমানের ভূমিকা ছিল অসামান্য। এ নির্বাচনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ‘গবেষণা ও মনিটরিং ইউনিট’ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ‘নির্বাচনী পরিচালনা সেল’ তাঁর নেতৃত্বেই আধুনিকতার স্পর্শে উজ্জীবিত ও ফলপ্রসূ হয়ে ওঠে (চে․ধুরী, ২০১৩)।
২০০২ সালে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারেক রহমান দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সর্বস্তরের কর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক গণসংযোগ, প্রতিনিধি সম্মেলন, মাঠ পর্যায়ে দলীয় কর্মকান্ড তদারকি, বিশেষ করে দল পরিচালনায় একটি ‘আধুনিক সক্ষম ব্যবস্থাপনা’ দক্ষতার সঙ্গে গড়ে তোলেন। রাষ্ট্রীয় পদ পদবি উপেক্ষা করে তারেক রহমান দলকে সুসংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বস্তরের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আশা ও উৎসাহের সৃষ্টি করেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সৃষ্টি হয় অভাবনীয় কর্মতৎপরতা। দল হয়ে ওঠে সুসংগঠিত। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজ‣নতিক বাস্তবতায় দলীয় নেতাকর্মীদের অদম্য উৎসাহে তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতেই একটি অতীব প্রতিকূল রাজনৈতিক অবস্থায় ২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশনে তারেক রহমান গণতান্ত্রিক পন্থায় সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হন দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান।
এ উপমহাদেশের রাজনীতিতে উত্তরাধিকার একটি ঐতিহাসিক ও ধারাবাহিক বিষয়। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের বহু দৃষ্টান্ত পূর্বেও ছিল বর্তমানে আছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মত আধুনিক ও সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক দেশেও উত্তরাধিকার রাজনীতি মুক্ত নয়। তারেক রহমান আকস্মিকভাবে শূন্যস্থান পূর্ণ করতে কিংবা উপমহাদেশের প্রচলিত উত্তরাধিকার ও গতানুগতিক পারিবারিক সূত্রে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতৃত্বের আসনে আসীন হননি। বরং দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় দলের প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রয়োজনে নিজ গুণ ও কর্ম প্রচেষ্টায় তৃণমূল থেকে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে তাঁর উত্থান হয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ এবং পরিবর্তন ঘটানোর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে বিএনপির রাজনীতি অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। দলকে সুসংগঠিত করার কোন উদ্যোগ তৎকালীন সংস্কারপন্থী মহাসচিব প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া গ্রহণ করেননি। এরূপ পরিস্থিতিতে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য একান্ত প্রয়োজন ছিল তরুণ মেধাবী, প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্ব। যে নেতৃত্ব তরুণ ও প্রবীণ, গ্রাম ও শহর, নেতা ও জনতার মধ্যেকার ব্যবধান দূর করে সম্মিলিত জনতার উন্নয়নমূখী ঐক্যবদ্ধ অভ্যুদয় ঘটাবে। এমনি এক গুরুত্বপূর্ণ পটভূমিতে দীপ্ত অঙ্গীকারে বাংলাদেশকে উৎপাদন-উন্নয়নের রাজ‣নতিক অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছানোর তাগিদে রাজনীতিতে অভিষেক তারেক রহমানের (পারভেজ, ২০১০)। তরুণ ও সম্ভাবনাময় মানব সম্পদ তৈরীর লক্ষ্যে তারেক রহমান বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী জনগোষ্ঠী বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে জাগ্রত ও সুসংগঠিত করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
সাড়া বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে তিনি চারণের মত ঘুরে সভা-সমাবেশ কাউন্সিল ও কনফারেন্স এর মাধ্যমে তৃণমূল বিএনপিকে সুসংগঠিত করেন। তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রণোদনা সৃষ্টির সঙ্গে অগ্রসর তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের চলমান গতানুগতিক ধারার রাজনীতিকে ডাটাবেজ এবং নেটওর্য়াকের মধ্যে নিয়ে আসেন এবং দলের ভিতরে ও সমগ্র বাংলাদেশের রাজ‣নতিক অঙ্গনেই একটি যথার্থ নবযুগের সূচনা করেন (পারভেজ, ২০১০)। তারেক রহমানের গতিশীল রাজনীতি এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে বাংলাদেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ, অগণিত তরুণ রাজ‣নতিক কর্মী, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজ। রাজনীতির মাঠে তারেক রহমানের একটি বিশেষ গুন হলো “ওপেন টু নিউ আইডিয়াজ” যা তাঁকে শহীদ জিয়ার অনুসারী ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত করেছে (হক, ২০১২)। তারেক রহমানের কর্মস্পৃহা হচ্ছে “একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা, এনে দিবে স্বচ্ছলতা, দেশে আসবে স্বনির্ভরতা”। তারেক রহমান বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান। সাংগঠনিক এবং দলীয় পদসোপান অনুযায়ী তাঁর অবস্থান দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরই।
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে বলা যায়, তারেক রহমান বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বৃহৎ রাজ‣নতিক দল বিএনপির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বিশ্ব পরিমন্ডলে তথা ভারত, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য দেশ আজ যে নতুন নেতৃত্বের উত্থান ও পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে, বাংলাদেশ সেই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছিল অনেক আগেই। তখন একবিংশ শতাব্দী শুরু হয়নি। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং জিডিপিকে দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দেশের ভিতরে ও বাহিরে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপও গ্রহণ করেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার। যার মধ্যে ব্যাপক ভে․ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জনসংখ্যাকে মানব সম্পদে রূপান্তর, শিক্ষার বিকাশ এবং অর্থ‣নতিক কূটনীতির (Economic Diplomacy) সাফল্যজনক ধারাসমূহ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, যা দেশে ও বিদেশের সমর্থন ও মনোযোগ আকর্ষণ করে (পারভেজ, ২০১০)।
ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে বিশ্ব দরবারে ‘উদীয়মান বাঘ’ (Economic Diplomacy) হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করে। শহীদ জিয়া যেমন গ্রাম বাংলার গণমানুষের রাজনীতি ও উন্নয়নের ধারায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, ঠিক তেমনি তারেক রহমানও বুঝতে পেরেছিলেন গ্রামমূখী উন্নয়ন ব্যতিরেকে বাংলাদেশকে কখনও আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি উন্নয়ন ও নেতৃত্বকে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করেন এবং সফলভাবে তা গণমানুষের মধ্যে বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হন।
গৌরবময় পারিবারিক ঐতিহ্য তারেক রহমানকে জুগিয়েছে অনুপ্রেরণা, দিয়েছে আলোর পথ কিন্তুরাজনীতিতে সংযোজন করেছেন তিনি নিজস্ব স্বকীয়তা। তারেক রহমান পরিবর্তন এনেছিলেন তথাকথিত রাজনীতির মোড়ক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সুস্থতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করার মধ্যে দিয়ে তা প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছেন। তাছাড়াও অপরাপর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি তারেক রহমান ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। তিনি সৃষ্টি করেছিলেন রাজনীতিকদের মর্যাদার আসন। উদ্ধার করেছেন মানুষের অধিকার। ফিরিয়ে এনেছিলেন সামাজিক অঙ্গীকার। তারেক রহমানের মনন ও মানসিকতায় ছিল অনন্য সাধারণ জনগণের গণতন্ত্র ও দেশপ্রেম।
তারেক রহমান রাজনীতিকে শহীদ জিয়ার মত রাজধানী কেন্দ্রীক প্রাসাদ রাজনীতির শৃংখল থেকে মুক্ত করে ছড়িয়ে দিয়েছেন গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে। বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষকে সম্পৃক্ত করেছেন জাতীয় ক্রিয়া-কলাপ এবং আশা আকঙ্খা বাস্তবায়নের স্বপ্ন ও সংগ্রামের সাথে, যা তাঁকে রাজনীতিতে অনন্য ভূমিকায় আসীন করেছে। জাতীয়তাবাদী চেতনার আকাঙ্খা এ ভূ-খন্ডের মানুষের মধ্যে যেমন নতুন নয়, তেমনি জাতীয়তাবাদী চেতনা ও শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রও কম হয়নি। যা আজও অব্যাহত আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদের শৃংখল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য জাতীয়তাবাদী শক্তিই ছিল মূল নিয়ামক উপাদান।
এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশিরভাগ দেশই জাতীয়তাবাদের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে একে একে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হলেও আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদীরা প্রতিনিয়ত সচেতন থেকেছে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিকাশের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ দর্শন প্রবর্তনের মধ্যে দিয়ে এদেশে শহীদ জিয়া সর্বস্তরের জনগণের আশা আকাঙ্খার বাস্তবরূপ নির্ণয় করতে সক্ষম হলেও তাঁর জাতীয়তাবাদী চেতনার অগ্রযাত্রাকে ধ্বংস করার জন্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মধ্যে তাঁকে জীবন দিতে হয়। এদেশে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধারা অব্যাহত থাকলে আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
শহীদ জিয়ার বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগমণ যেমন অনিবার্য, তেমনি ছিল সময়ের দাবী। তাঁর মানবিক গুনাবলী, নির্লোভ ব্যক্তিত্ব, সততা, সাহসিকতা, দেশপ্রেম, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা এবং বিনয়ী আচরণে তিনি ছিলেন এক অনন্য অসাধারণ উদাহরণ। যার ফলে খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের হৃদয়ে তিনি স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন যা আজও কোটি কোটি জনগন তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
তাছাড়াও শহীদ জিয়া সমন্বয়ের রাজনীতির পথ অবলম্বন করে বহুমত ও পথের মানুষকে তাঁর মত ও পথে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। দেশবরেণ্য যোগ্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা ছিলেন তাঁর সহযোদ্ধা, সহকর্মী ও উপদেষ্টা। তাঁর নিজের এবং সহকর্মীদের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি কর্মনীতি এবং কর্মপন্থা নির্ধারণ করতেন। জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরা ছিলেন তার হিতাকাঙ্খী যে কারণে অতি অল্প সময়ে শহীদ জিয়ার শাসনকাল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করে।
বাংলাদেশের গ্রাম - গ্রামান্তরে সর্বস্তরের মানুষের কাছে তারেক রহমান এক ‘আইকন’। সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয় বিএনপিকে তারেক রহমান সক্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সেসব উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি অনুষ্ঠান করেন তৃণমূল সংগঠন। তারেক রহমান উপলব্ধি করেছিলেন তৃণমূল সংগঠন শক্তিশালী না হলে তা কখনও (Sustainable) ‘টেকসই’ হবে না। সে লক্ষ্যে তারেক রহমান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি নিজেকে উপস্থিত করেছিলেন। প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা ও জেলায় প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পন্থায় নেতৃত্ব নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক চর্চার এক অভাবনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন গ্রামের মানুষের প্রাণের কথা, দুঃখ দুদর্শা কষ্ট-বেদনার কথা। ফলে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা বিএনপিকে তৃণমূল সম্মেলনের মাধ্যমে অভাবনীয়ভাবে জাগ্রত করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন তারেক রহমান। তাছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজ‣নতিক কার্যালয় হিসেবে খ্যাত ‘হাওয়া ভবন’ ছিল বিএনপি এবং তারেক রহমানের সকল রাজনৈতিক ক্রিয়া-কলাপের কেন্দ্র বিন্দু। তারেক রহমান ‘ডাটা বেজ’ তৈরী করেছিলেন প্রতিটি গ্রাম থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত। যে ‘ডাটা বেজে’ গ্রামের মানুষের সকল সমস্যার তথ্য সন্নিবেশিত ছিল। যে সমস্যাগুলো সমাধানের কর্মপরিকল্পনাও ছিল সেই ‘ডাটা বেজে’।
এ প্রবন্ধটি লিখতে গিয়ে জানার চেষ্টা করেছি ‘হাওয়া ভবন’ কেন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের মাথা ব্যাথার কারণ। হাওয়া ভবন ছিল মূলতঃ বিএনপির একটি ‘গবেষণা সেল’। যেখানে প্রশিক্ষিত তরুণ, উন্নয়নকর্মী, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বেকার সমস্যা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নানাবিধ বিষয় সন্নিবেশিত ছিল যা আত্মনির্ভশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার তথ্য সমৃদ্ধ ভবন। আলোকিত গ্রামই, আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার পূর্বশর্ত। তারেক রহমানের এরূপ কর্মপরিকল্পনায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, নতুন প্রজন্ম এবং অনেক শীর্ষ রাজ‣নতিক নেতৃবৃন্দ উচ্ছসিত হলেও শেখ হাসিনা মোটেই খুশী ছিলেন না।
নব্বই দশকের শেষ দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ‘হাওয়া ভবন’ স্থাপনের পর মিডিয়া প্রপাগাণ্ডায় না থাকলেও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয় তারেক রহমানের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা এবং সুস্থধারার রাজনীতি শেখ হাসিনা কখনও ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেননি যার প্রমাণ এ জাতি অনেকবার প্রত্যক্ষ করেছে। শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছিলেন তারেক রহমানের অগ্রযাত্রাকে যদি থামানো না যায় তাহলে ভবিষ্যত কান্ডারী হিসেবে তার দলে তারেক রহমানকে মোকাবিলা করার মত তেমন কেউ নাই। এরপর থেকে বিএনপির ‘গবেষণা সেল’ হিসেবে ‘হাওয়া ভবন’ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের মাথা ব্যাথা ও আতঙ্কের কারণে পরিণত হয়। ফলে তারেক রহমান হয়ে পড়েন আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদীদের মূল টার্গেট।
শুরু হল জিয়া, খালেদা এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ তারেক রহমানকে চলমান ইতিহাসের একজন খলনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে প্রতিহিংসাপরায়ণ মিডিয়া প্রপাগাণ্ডায় দীর্ঘদিন থেকে লিপ্ত রয়েছে। আওয়ামী লীগ এই কাজটি করেছে তাদের অনুগত মিডিয়া, নামধারী বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ ও সংস্কৃতিকর্মীদের ধারাবাহিক ‘গোয়েবলসীয়’ মিডিয়া প্রপাগাণ্ডার মাধ্যমে। তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপিকে সুসংগঠিত ও সম্প্রসারিত করার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের রাজ‣নতিক নেতৃত্বের উত্থানকে শেখ হাসিনা ইতিবাচক রাজ‣নতিক কর্মসূচি দ্বারা মোকাবিলা না করে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফ্যাসিবাদী, ক্সস্বরাচারী কায়দায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘গোয়েবলসীয়’ মিথ্যাচারে ভরপুর মিডিয়া প্রপাগাণ্ডায় নিয়োজিত হয়।
এই মিডিয়া অপপ্রচারের একমাত্র লক্ষ্য ছিল, চমক লাগানো মিথ্যাচারের কল্পকাহিনী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রচার করে তাঁর চরিত্র হনন এবং জনপ্রিয় ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করা। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হিটলারের জিঘাংসামূলক প্রপাগাণ্ডা নীতি এক্ষেত্রে অনুসরণ করলেও, হিটলারের শেষ জীবনের বোধোদয় সম্পর্কে অবহিত নয়। প্রপাগাণ্ডা সম্পর্কে হিটলারের সর্বশেষ মন্তব্য ছিল "Propaganda must not serve the truth especially not in so far it might bring out something favourable for the opponen” (উল্লাহ্,২০১০)।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের মিডিয়া প্রপাগাণ্ডার লক্ষ্যে হচ্ছে, দেশের ভিতরে ও বাহিরে আঞ্চলিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারেক রহমানকে দুর্নীতিবাজ, মাফিয়া ডন এবং জঙ্গিবাদের মদদদাতা হিসেবে দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক মিডিয়া ক্যু’র মাধ্যমে দেশের জনমনে গড়ে ওঠা তারেক রহমানের নেতৃত্বের ইমেজকে কালিমা লেপন করে, তাঁকে জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্ব থেকে উৎখাত ও ভবিষ্যত জাতীয়তাবাদী কাণ্ডারীর দায়িত্ব লাভের সম্ভাবনাকে স্থায়ীভাবে নস্যাৎ করা। ইংরেজীতে বহুল প্রচারিত একটি প্রবাদ আছে-“If you want to kill the dog, give it a bad name" তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন থেকে যে ধরনের ফিকশনীয় মিডিয়া অপপ্রচার করে যাচ্ছে তাতে ইংরেজী প্রবাদের মর্মবাণীটি অত্যন্ত পরিষ্কার ভাবে আওয়ামী লীগের মনঃস্তত্ত্বে প্রতিফলিত (উল্লাহ্, ২০১০)।
তারই ধারাবাহিকতায় মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াকে ইতিহাসের খলনায়ক, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং তারেক রহমান এবং হাওয়া ভবনকে নিয়ে কুৎসা রটনা করে একশ্রেণীর গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে, দেশব্যাপী জিয়া পরিবার এবং জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনীতিকে সর্বসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার মধ্যে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ২০০৭ ১/১১’র প্রেক্ষাপট তৈরী করা হয়। যে প্রেক্ষাপট ছিল দেশীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নীল নক্সা (Blue Print)। অনিরাপদ হয়ে পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। টার্গেট করা হয় জাতীয়তাবাদী শক্তির রক্ষাকবচ জিয়া, খালেদা ও তারেক রহমানকে। আধিপত্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা তথাকথিত আন্দোলনের নামে সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করে দেশব্যাপী এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। দেশকে এক ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে শেখ হাসিনা লগি-ক্সবঠার আন্দোলনের মাধ্যমে নরহত্যার এক মহোৎসব রচনা করেন ।
ষড়যন্ত্রকারীদের দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনা ও ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যর্থ করে দিয়ে কতিপয় সেনা অফিসার কর্তৃক ১/১১ ঘটিয়ে একটি অসাংবিধানিক বেআইনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আর্বিভাব ঘটানো হয়, যার নেপথ্যে জেনারেল মঈন উ আহমেদ এবং প্রকাশ্যে আসেন ফখরুদ্দীন আহমেদ। ভারতের ভাষায় ‘ফ্রেন্ডলি ক্যু’ ফলে এর সুবিধাভোগীরা ‘আস্থাভাজন’ রূপে প্রচারিত হয় (পারভেজ, ২০১০)।
২০০৭ সালের ১/১১’র সেনাসমর্থিত বেআইনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, এই সরকার তার আন্দোলনের ফসল। সুতরাং এ সরকারের সকল কর্মকান্ডকে পরবর্তীতে বৈধতারও ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। সেনাসমর্থিত বেআইনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই মাইনাস-টু ফর্মূলার নাটক মঞ্চস্থ করেন। তারই অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে বিভিন্নভাবে চাপ দেয়া হয়, পুত্র তারেক রহমান ও পরিবারসহ দেশ ত্যাগ করতে। কিন্তুআপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ এবং দেশের জনগণের কথা বিবেচনা করে, সে প্রস্তাব ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করেন। বেগম খালেদা জিয়া বলেন, এ দেশের বাহিরে আমার কোন ঠিকানা নাই, বাংলাদেশই আমার ঠিকানা। শুরু হয় বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং জিয়া পরিবারের ওপর জুলুম ও নির্যাতন।
৭ মার্চ ২০০৭ সালে তারেক রহমানকে তাঁর দীর্ঘদিনের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডের বাসা থেকে কল্পিত অভিযোগে ও মিথ্যা মামলায় গভীর রাতে ধরে নিয়ে যায়। তারেক রহমানকে জেলে অন্তরীন রেখে রিমান্ডের নামে তাঁর উপর চালানো হয় অমানুসিক নির্যাতন। উদ্দেশ্য ছিল তারেক রহমানকে শারীরিকভাবে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়া। তাছাড়াও আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্য করা গেল গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের নীল নক্সার অংশ হিসেবে বিএনপির রাজ‣নতিক কার্যালয় ‘হাওয়া ভবনে’ তল্লাশীর নামে তারেক রহমানের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও পরিকল্পনার ফসল রাজনৈতিক কর্মকান্ডের তথ্য উপাত্ত এবং ডাটাবেজ সমৃদ্ধ কম্পিউটার গুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয় মূলতঃ তারেক রহমানের তারুণ্য নির্ভর উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী রাজ‣নতিক তথ্য প্রবাহকে ধ্বংসের অংশ হিসেবে। শুধু তাই নয়। নিস্প্রভ বিএনপিকে উজ্জীবিত করার দৃপ্ত প্রত্যয় নিয়ে সারাদেশে তারেক রহমান যখন আলোড়ন সৃষ্টি করলেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল স্তরের নেতাকর্মী সমর্থকদের মাঝে আশার সঞ্চার সৃষ্টি করলেন, জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসীদের মধ্যে আস্থা জাগ্রত করলেন, কৃষক শ্রমিকসহ সকল স্তরের মানুষের মধ্যে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে যখন তিনি নিজেকে একজন ঐক্যের মূর্ত প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ২০০১ এ অক্টোবরে ভোট বিল্পবের মধ্যে বিপুল বিজয় অর্জিত হল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপির নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত উন্নয়নের আওতায় আনতে সক্ষম হলেন। কৃষি, শিক্ষা শিল্পায়ন,
যোগাযোগ, প্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, দারিদ্র বিমোচন, বেকার ও মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নানাবিধি সার্থক কর্মসূচী সফল করতে সক্ষম হন।
তারেক রহমান সৃষ্টি করেছেন নতুন দিগন্ত। পারিবারিক গৌরবের ঐতিহ্যকে ভিত্তিকরে উন্নয়ন, উৎপাদন এবং দেশপ্রেমের রাজনীতির গতি প্রকৃতিকে তিনি আরো বেগবান করেছেন তৃণমূলের রাজনীতিতে। তিনি এখানেই ক্ষান্ত হননি, রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করেছেন আধুনিকতা, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি। তারেক রহমানের নেতৃত্বেই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত যুক্ত হয় ডিজিটাল ইনফরমেশন ব্যাংক (সিকদার, ২০১৩)।
তাছাড়াও ১১ ডিসেম্বর ২০০৫ সালে ক্সদনিক মানব জমিন আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় “আমর স্বপ্নের বাংলাদেশ” শিরোনামে তারেক রহমান ভবিষ্যত বাংলাদেশ বির্নিমাণে অর্থাৎ আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরেন। ‘২০২৫ সালে বাংলাদেশ কিভাবে আত্মমর্যাদাপূর্ণ, অর্থনৈতিকভাবে সফল, উন্নত গণতান্ত্রিক একটি দেশ, যার দিকে বিশ্ববাসী সম্মানের দৃষ্টিতে তাকাবে। তারেক রহমান বলেন, অগ্রযাত্রার গতি হবে দ্রুত এবং লক্ষ্য হবে সুনির্দিষ্ট, (রহমান, ২০০৫)। এসব কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা উপলব্ধি করেছে, তারেক রহমানের চলমান এই অগ্রযাত্রা বন্ধ করতে না পারলে, জাতীয়তাবাদী শক্তি আরো বেশী শক্তিশালী হবে। এজন্য লগি- বৈঠার আন্দোলনের মাধ্যমে নরহত্যার মত জঘন্যতম ঘটনা সৃষ্টি করে। সফল হয় দীর্ঘ দিনের মিশন। তারই ধারাবাহিকতায় মঈন উ আহমেদ এবং ফখরুদ্দীনের আর্বিভাব ঘটে।
রাষ্ট্রঘাতী বিশ্বাস ঘাতক সেনাপতি মঈন উ আহমেদ দু’বছর ধরে শত চেষ্টা করেও তারেক রহমানের দুর্নীতির অনুসন্ধাণে কোন সাক্ষী জোগাড় করতে পারেনি। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, তারেক রহমানের দূর্নীতি মূল ইস্যু ছিল না, ইস্যু ছিল তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী’ চেতনার রাজনীতির যেন নবোত্থান ঘটেছিল তা চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। সেনাসমর্থিত অসাংবিধানিক বেআইনি তত্ত্বাধায়ক সরকার যখন বুঝতে পারল তাদের পক্ষে আর ক্সনরাজ্যকর শাসন অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়, তখন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতা করে একটি পাতানো নির্বাচন দিয়ে তাদের নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করে।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি লাভ করেন। তারেক রহমানও জামিনে মুক্ত হন ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে। বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হবার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানকে দেখতে যান, মা ও পুত্রের সাক্ষাত মুহুর্ত ছিল এক মর্মস্পর্শী দৃশ্য। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারেক রহমান আজও পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত তাঁকে এখনও নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তারেক রহমানের মাথার ওপর অনেক মামলার খড়গ ঝুলছে। সবচেয়ে ভয়াবহ মামলা হল ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলা। প্রকৃতঅর্থে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কান্ডারী হিসেবে তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে চির নির্বাসিত করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এ মামলায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়।
আধিপত্যবাদ ও এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের অস্তিত্বের ভিত্তিমূলে নাড়াঁ দেয় তারেক রহমানের তৃণমূল রাজনীতির আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা সমস্ত শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারেক রহমানের ওপর। টার্গেট করে জাতীয়তাবাদী চেতনার কান্ডারী জিয়া, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে। কারণ বেগম খালেদা জিয়ার পর তারেক রহমানই একমাত্র রাজ‣নতিক নেতা, যে ভবিষ্যতে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখেন। বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করার কুশীলবরা মীর জাফরের মত দাঁড় করায় মঈন উ আহমেদকে।
পরবর্তীতে ২০০৮ এ পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয় শেখ হাসিনার হাতে। যেভাবে মীর জাফরের কাছ থেকে ক্ষমতা চলে যায় ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে। ষড়যন্ত্রকারীদের উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার পথে বড় বাধা হয়ে দাড়ায় মূলতঃ তিনটি বিষয়। (ক) বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, জিয়ার দর্শন ও ব্যাক্তিগত ভাবমূর্তি (খ) মহিয়সী নারী, আপোসহীন নেত্রী, গণতন্ত্র ও ঐক্যের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনের চর্চাকারী দল বিএনপি এবং (গ) উদীয়মান নেতা, তরুণ প্রজন্মের প্রতীক, ভবিষ্যত জাতীয়তাবাদী আদর্শের কান্ডারী তারেক রহমান (সিকদার, ২০১৩)।
এদেশে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধারা অব্যাহতভাবে শক্তিশালী হলে ইন্দো-মার্কিনীদের জন্য তা অনেক বড় সংকট তৈরী করে। ফলে তারেক রহমানকে কিভাবে নিঃশেষ করা যায় এটাই ছিল অনেক ব্যক্তিকে ডিঙ্গিয়ে পদোন্নতি পাওয়া ইন্দো-মাকির্নীদের এজেন্ট মঈন উ আহমদের উদ্দেশ্য। তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় কর্তাব্যক্তিদের চিন্তা করা উচিত স্বজন, নিজ অঞ্চল এবং নিকট আত্মীয় কখনও পদোন্নতির জন্য বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। এসব ব্যতিক্রম কখনও শুভ হতে পারে না। এসব ব্যতিক্রম করতে গিয়ে অনেককে অনেকভাবে মূল্য দিতে হয়েছে। সে মূল্যের সর্বপ্রথম ও সবচাইতে নিষ্ঠুর শিকার তারেক রহমান (রেজোয়ান, ২০১৩)।
মঈন উ আহমেদ ও ফখরুদ্দীন আহমদের নিষ্ঠুর নির্মম নির্যাতনের ধারাবাহিকতা রিলে রেসিং এর মত তৎপরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য শেখ হাসিনার উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়। শেখ হাসিনা তাদের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় জিয়া, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম কলাকৌশল অবলম্বন করে, জিয়া পরিবারের অস্তিত্বকে নিঃশেষ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শহীদ জিয়া’র স্মৃতি বিজড়িত সেনা নিবাসের যে বাসা তৎকালীন সময় রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়, তা অন্যায়ভাবে বাতিল করে খালেদা জিয়াকে সেই বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন করা হয়। রাজনীতির সঙ্গে কোন সংশ্লিটতা নেই আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়। একের পর এক মিথ্যা মামলায় অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটক রেখে তাঁর মানসিক মনোবল দূর্বল করে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এমনকি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ জারি করা হয়। তাছাড়াও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতা, কর্মী, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকদের গুম, হত্যা, অপহরণের মাধ্যমে এক ভয়াবহ আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। এমনকি বিদেশে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশে ফেরত আসার পথ বন্ধ করা হয়। উদ্দেশ্য বিএনপি এবং জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধারাকে স্তব্ধ করে দেয়া।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থ‣নতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজ‣নতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একবিংশ শতকের রাজনীতির গতি প্রকৃতি, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ, মূল্যবোধ, বিশ্বাস আস্থা এবং তরুণ ও মেধাবীদের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি অনাগ্রহ ইত্যাদির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। তাছাড়াও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুবৃর্ত্তায়ন, দূর্নীতি, সন্ত্রাস, কালোটাকা, পেশীশক্তি ইত্যাদি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিপুল সংখ্যক ধণিক-বণিক শ্রেণীর যা ক্রমাগতভাবে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। তাছাড়াও বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষ পূর্বের ন্যায় পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের চেয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সম্পর্ক উন্নয়নে অধিক মাত্রায় গুরুত্ব প্রদানে আগ্রহী হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের মোট জন সংখ্যার সিংহভাগ তরুণ, তরুণরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কারণে সচেতন ও আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রাজনীতির কলাকে․শল নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরী।
লেখক : ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, প্রফেসর, লোক প্রশাসন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, আজীবন সদস্য, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)।