অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
জাতির সংকটে জিয়া
প্রকাশ: ০১:৪৪ পিএম, ৩১ আগস্ট, বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১৫ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
পৃথিবীতে মানব জাতির কল্যাণ এবং মুক্তির জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা যুগে যুগে যে সব ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের আর্বিভাব ঘটিয়েছেন, জিয়া তাঁদের মধ্যে অন্যতম। এসব মহাপুরুষ বিভিন্ন ভূ-খন্ডে তাঁদের অবদানের জন্য ইতিহাসে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন, বাংলাদেশে জিয়া’র আর্বিভাব তেমনি একটি ঘটনা।
উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রাম সংগঠিত করার কাজে জিয়া সরাসরি অংশগ্রহন না করলেও পেশাগত কারণে শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিয়া ছিলেন সর্বদা সচেষ্ট, যা পরবর্তীতে দেশ মাতৃকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্বের মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয়। ‘আনুগত্য ও নির্দেশ পালনের দীক্ষায়’ দীক্ষিত একজন সেনা কর্মকর্তার পক্ষে বিদ্রোহ করে অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়ানো ছিল নিঃসন্দেহে জিয়া’র জন্য এক কঠিন সিদ্ধান্ত। যদিও এ বিদ্রোহের পেছনে ছিল তাঁর রাজনৈতিক চেতনা, ছিল মানবিক প্রবৃত্তি এবং নিজ ভূ-খন্ডের প্রতি গভীর দেশপ্রেম ও ভালোবাসা।
বাংলাদেশের ‘আইকন’ জিয়া’কে মানুষ প্রথম জানতে পায় ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ইথারে ভেসে আসা চার শব্দের সেই বাক্য- ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ যা পুরো জাতিকে উদ্দীপ্ত করেছিল, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনে। প্রফেসর রেহমান সোবহান, Untranquil Recollections: The Years of Fulfilment – এ লিখেছেন, “I spent the night of 27 March in my new refuge, that night we turned in on the radio and heard a faint broadcast by Major Zia, proclaiming the Independence of Bangladesh”। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জিয়াই সর্ব প্রথম ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে রাতে বিদ্রোহ করেন এবং চট্রগ্রামে তাঁর অধিনস্থ সৈন্যদের নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ‘জেড ফোর্স’ এ নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধশেষে জিয়া আবারও তাঁর পেশাগত জীবনে প্রত্যাবর্তন করেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে যারা সমরনায়ক থেকে জাতির সংকটময় মুহুর্তে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে, রাষ্ট্রনায়ক হয়েছেন তাঁদের সকলেই সফল না হলেও কেউ কেউ সফল হয়েছেন। সমকালীন ইতিহাসে কামাল আতার্তুক, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট দ্য গল, জামাল আবদুন নাছের এবং বাংলাদেশে জিয়া। রাজনীতি অধ্যয়নের পণ্ডিত এস পি হান্টিংটনের মন্তব্য এ প্রসঙ্গে প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেন- "A great military leader is one who can imagine, turning a conflict into equal opportunities for adversaries in a situation where people can make a living, trading peacefully, violence, become costly choices"।
যে মানুষটি জাতির সংকটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজের জীবনকে নিয়তির কাছে সমর্পন করেছিলেন তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি, জাতির আর একটি বড় সংকটে নিরব থাকার। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব জিয়া’কে জাতীয় জীবনের প্রাণকেন্দ্রে নিয়ে আসে। তখন দেশে কোন নিয়ন্ত্রণ কাঠামো অক্ষত ছিলনা। দেশে ছিল না কোন রাজনৈতিক দল। প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল স্থবির। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার অব্যবহিত পরেই, ২২ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকার দেশে প্রত্যাবর্তনের পূর্ব মুহুর্তে দেশের সকল ডানপন্থী দলগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ১৯৭৫ সালে একদলীয়শাসন ব্যবস্থা ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠিত হলে দেশের বামপন্থী দলসহ সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পরে খন্দকার মোশতাক আহমদ বাকশালকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ফলে ওই সময়ে গণতান্ত্রিক শাসন কেন, যে কোন ধরণের শাসনের জন্য জনসংযোগ অথবা যোগাযোগ কিংবা নির্দেশ দানের লক্ষ্যে যে অপরিহার্য মাধ্যম হিসেবে রাজনৈতিক দলেরও কোন অস্তিত্ব ছিল না। অন্তর্দ্বন্দ্ব ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা হয়ে পড়ে অকার্যকর। এই অবস্থায় দেশব্যাপী সূচনা হয় গভীর অনিশ্চয়তার। রাজনৈতিক ব্যবস্থা হয়ে ওঠে দ্বন্দ্বসঙ্কুল, ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। ব্যক্তিকেন্দ্রিক অশুভ প্রবণতায় চারদিকে সৃষ্টি হয় চরম সঙ্কট। ক্ষমতাশ্রয়ীদের চক্রান্তে জনজীবন হয়ে পড়ে অতিষ্ঠ। এমনি এক জাতির সংকটময় মুহূর্তে জিয়াকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করতে হয়। বলতে দ্বিধা নেই, তাঁর অগ্রবর্তী চিন্তা, সুগভীর জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
জিয়া নিহত হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই জিয়া বিরোধীরা তাঁর মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করার জন্য এক অশ্লীল লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। যে মানুষটি বিশ্বসভায় বাংলাদশের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছিলেন, জাতিগঠনে উদ্যোগী হয়েছিলেন, সে মানুষটির মর্যাদাকে ধূলায় মিশিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর প্রতিপক্ষরা এমন কোনো কাজ নেই যা তারা করেনি। তাঁকে কলুষিত করার জন্য এমন কোনো মিথ্যা ছিল না, যার আশ্রয় তারা নেয়নি। এই মিথ্যার চর্চা এখনো অব্যাহত আছে। জিয়া বিরোধীরা উপলব্ধি করেছিলেন, একজন জীবিত জিয়ার চেয়ে একজন মৃত জিয়া অনেক বেশী শক্তিশালী এবং কর্মের সাফল্য তাঁর জীবনকে ছাড়িয়ে গেছে। তারা তাঁর আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তাকে কখনও মেনে নিতে পারেননি, মেনে নিতে পারেন না। ঘরে বাহিরে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সত্বেও জিয়া সারা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি ও প্রশংসা অর্জন করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস্ জিয়া’কে‘ 'Hard working and apparently incorruptible in personal life’ বলে অবিহিত করে। লন্ডন টাইমস্ লিখে- ‘By and large president Zia kept the country away from hopes and pointes quarrels’।
প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জানের ভাষায় ‘Zia was on the few rulers from the military profession who understood the need for politics and politicians, the tend to prescribe simple unitary solutions to complex political problems. Zia clearly understood the destination in the functional roles of politics and arms. As he used to say frequently, politics should be met by politics, fire power by fire power’।
জিয়া’র ব্যক্তিগত সততা, দেশপ্রেম, কঠোর পরিশ্রম, শৃংঙ্খলাবোধ, দ্রুত সিন্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা, প্রবল ইচ্ছাশক্তি, সাধারণ জীবন যাপন, আত্মসংযম, আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস আধুনিক বাংলাদেশ বির্নিমানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। একটি আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদাপূর্ন বাংলাদেশ এবং জনগণের কল্যাণই ছিল জিয়া’র প্রথম ও প্রধান সাধনা। জিয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্র, সমাজ এবং ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন সেই বিরল রাষ্ট্রনায়ক, যিনি গণমানুষের হৃদয় বুঝতে সক্ষম ছিলেন। জিয়া যুদ্ধ-বিধস্ত অর্থনীতিতে রক্তসঞ্চালণ করেছেন, রাজনীতিতে এনেছেন স্থিতিশীলতা এবং সমাজে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করেছেন। সংস্কৃতিতে স্বকীয়তা, সেনাবাহিনীতে পেশাদারিত্ব এবং জন প্রশাসনে মর্যাদা ফিরিয়ে এনেছিলেন।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের নেপথ্যে অনেক কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের অবদান স্বীকার্য। তাঁদের কেউ কেউ অনেক সীমাবদ্ধতার ভিতর দিয়ে একটি সু নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছেন, আমরা তাদের ভুলে যাই। কিন্তু জিয়া এদের থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তিনি একবার নয়, বার বার জাতির সংকটময় মুহূর্ত্বে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কান্ডারি হিসেবে আর্বিভূত হয়েছেন। (এক) ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন ব্যর্থ, সংকট- সন্ধিক্ষণে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে জাতিকে উজ্জিবীত করেছেন। (দুই) ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে যে কঠিন সময় বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে জিয়া তা সফলভাবে মোকাবেলা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রফেসর এমাজ উদ্দিন আহমদ মন্তব্য করেন- ‘Zia saved Bangladesh army from an impending doom’ জিয়া সেই ব্যক্তি যার কোন ক্যু সংশ্লিষ্টতা নেই। জিয়া ক্ষমতা দখল করেননি বরং ঘটনা প্রবাহ এবং জাতির সংকটময় মূহুর্তে তাঁকে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বোচ্চ আসনে সিপাহী-জনতার বিপ্লব অধিষ্ঠিত করেছে মাত্র। তাঁর কৌশলী নেতৃত্ব বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত, ভারসাম্য নীতি বাংলাদেশকে বহি:শত্রুর আক্রমণ ও গৃহযুদ্ধের আশংকা থেকে মুক্ত করেছে। (তিন) রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি চুপচাপ বসে থাকেননি কিংবা সামরিক আইন দীর্ঘায়িত করেননি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গণতন্ত্রকে অবমুক্ত করে বহু দলীয় গণতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করেন, রাজনৈতিক কর্মকান্ড সচল করেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা আনয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সর্বোপরি তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ প্রণয়ন করেন। যার মাধ্যমে জাতীয় সংহতি ও জাতীয় ঐক্য বির্ণিমানে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি জনমানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন।
জিয়া হতাশায় নিমজ্জিত জাতিকে আলোর সন্ধান দিয়েছিলেন। তিনি বহুধাবিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে, দেশকে অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। “তলাবিহীন ঝুড়ি” অপবাদ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটি আত্মনির্ভরশীল, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই (Sustainable) বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল প্রদত্ত একটি রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচী ১৯ দফা প্রণয়ন করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণায় জনগণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার তথা রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির যে আকাঙ্খা ও চেতনা তার ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশের যাত্রাপথ রচনায় জিয়া’র ১৯ দফা কর্মসূচি ছিল একটি মাইলফলক।
জিয়ার নেতৃত্বে খুব অল্প সময়ে সরকার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি কঠিন সেতু বন্ধন সৃষ্টি করেছিল যা তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়। জিয়া বলেছিলেন- "I will make politics difficult”। এর শাব্দিক অর্থ ‘রাজনীতি কঠিন করা’ বোঝাতে বা বিধি-নিষেধ যুক্ত করতে তিনি একথা বলেননি। তাঁর এ কথার অর্থ ছিল ‘ব্যাক টু দ্য ভিলেজ’- বাংলাদেশের গণমানুষের পীঠস্থান গ্রামে ফিরে যেতে রাজনীতিবিদদের বাধ্য করা এবং রাজধানী কেন্দ্রিক প্রাসাদ রাজনীতির বেড়াজাল থেকে জনগণকে মুক্ত করা।
২০২১ সালে ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করেছে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখনও আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে বিশ্বপরিমন্ডলে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়নি। প্রশাসন ও সমাজের সকল স্তরে দূর্নীতির সূচক বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ জনগণ উন্নয়ন কর্মকান্ডের সুফল থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়াও সামাজিক বৈষম্য, মানবাধিকার লংঘন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, সীমান্ত হত্যা, পরনির্ভরশীল পররাষ্ট্রনীতি, নিয়ন্ত্রিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদের প্রভাবের ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আকাঙ্খাগুলো এখনও সুদূর পরাহত। গণতন্ত্র, মানুষের রাজনৈতিক অধিকার আজ এক কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন। সামাজিক ন্যায় বিচার, সামাজিক ও ধর্মীয় এবং মানবিক মূল্যবোধ আজ প্রায় সর্বক্ষেত্রে অনুপস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব চরমভাবে হুমকির সম্মুখীন। দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নগ্ন দলীয়করণ, কালোটাকা এবং মাদকের প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরকে গ্রাস করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বেকারত্ব এবং অদক্ষ বৃহৎ জনগোষ্ঠী আজ হতাশায় নিমজ্জিত। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনসেবার চাইতে রাজনৈতিক নির্দেশ পালনকেই মুখ্য মনে করে। সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কার্যত অকার্যকরে পরিণত হয়েছে। প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি ও নির্যাতন জনজীবনকে করেছে বিপর্যস্ত। ফলশ্রুতিতে আইনের শাসনের জায়গায় পেশী শক্তির অবারিত আস্ফালন এবং সমাজের সর্বস্তরে আতংকের পরিবেশ বিরাজ করছে।
সুতরাং স্বাধীনতার ৫০ বৎসর পূর্তিতে বাংলাদেশে এখনো অসুস্থ রাজনৈতিক চর্চা ধারাবাহিকভাবে জাতিকে বিভক্ত করে চলেছে। জাতি আজ বিরক্ত। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবনবাজি রেখে বীরত্ব গাঁথা ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় ‘খেতাব’ও আজ অসহায়। দূর্ভাগ্যজনকভাবে এ বিভাজন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রায় প্রতিটিক্ষেত্রে তা পরিব্যাপ্ত হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়াও গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে, শ্রমিক সংগঠনে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, এমনকি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এর দীর্ঘ ছায়া সবকিছুকে মলিন করে তুলছে। এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় শুধু জাতীয় ঐক্য নয়, জাতীয় অগ্রগতির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জিয়া বিশ্বাস করতেন জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া বাংলাদেশকে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই তিনি তাঁর মেধা তীক্ষèদৃষ্টি ও প্রজ্ঞাদিয়ে ভাষা, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
জিয়া কখনও সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে এমনকি পারিবারিক স্বার্থে রাষ্ট্র পরিচালনা করেননি বরং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী এবং জনগণের স্বার্থই ছিল মুখ্য ভূমিকায়। এটি তাঁর শ্রেষ্টতম অবদান যা আজও বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ শ্রদ্ধাভরে কৃতজ্ঞচিত্তে স্বরণ করে। আজকের বাংলাদেশকে অনগ্রসরতার অন্ধকার গুহা থেকে আলোর পথ দেখাতে জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে রাষ্ট্র ও জনগণের প্রয়োজনে নিবেদিত হয়ে জিয়া’র মত তারেক রহমানকে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে এটিই আজ সময়ের দাবী।
লেখক : ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, প্রফেসর, লোক প্রশাসন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, আজীবন সদস্য, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)।