কণ্ঠে আহাজারি শুনি নাই, চোখে আগুন দেখেছি : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৮ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৫৮ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে শাওনের বাবার কণ্ঠে আহাজারি শুনি নাই, চোখে অশ্রু দেখেছি। কিন্তু তার চোখে একই সাথে আগুনও দেখেছি। বজ্রকণ্ঠে সে বলছেন, আমি আপস করবো না।
আজ শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদলের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।
'মুন্সিগঞ্জ জেলার মীরকাদীম পৌর শাখা যুবদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শাওন হত্যার প্রতিবাদে' এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, এক শাওনের মৃত্যুতে বা আরেক শাওনের মৃত্যুতে, রহিম বা নূরে আলমের মৃত্যুতে মানুষের যে দাবি ও আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং অভ্যু্ত্থান শুরু হয়েছে- সেই অভ্যুত্থানকে দমন ও বন্ধ করা সম্ভব হবে না। আর আজকে শাওনের বাবার কণ্ঠে আহাজারি শুনি নাই, চোখে অশ্রু দেখেছি। কিন্তু তার চোখে একই সাথে আগুন দেখেছি। বজ্রকণ্ঠে সে বলছেন, আমি আপস করবো না। তাকে ভয় দেখানো হয়েছে। বলো যে ইটের আঘাতে মারা গেছে। তুমি বলো যে, তাকে বিএনপির নেতারাই মেরেছে। কিন্তু আমাদেরকের কাছে পরিস্কার করে ডকুমেন্ট আছে। তার ডেট সার্টিফিকেটে ডাক্তাররা পরিস্কার করে বলেছেন, বন্দুকেই গুলিতেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাই এই মিথ্যাচার করবেন না।'
মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুক্ষণ আগে শাওনের বাবা আপনাদের সামনে যা বলেছেন- তিনি কিন্তু আহাজারি করেননি। তিনি বলেছেন, আমার ছেলে সংগ্রাম করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তারা এদেশের মানুষের অধিকারকে হত্যা করেছে।
পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'এরচেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। এখন আমাদের রাজপথে নেমে, পুরোপুরিভাবে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য যে দায়ী- তাকে সরাতে হবে। শুধু শাওন নয়। এই আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে, পরপর চারজনের রক্ত নিয়েছেন এই শেখ হাসিনা। আমাদের রহিমকে নিয়েছেন, আমাদের নূরে আলমকে নিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের শাওনকে নিয়েছেন, গত পরশু আমাদের মুন্সিগঞ্জের শাওনকে নিয়েছেন। আজকে এই রক্ত ঝরিয়ে, হত্যা করে, ভয় দেখিয়ে, গুম করে, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়ে, মিল- কারখানা পুড়িয়ে দিয়ে আজকে আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে চায়।'
ফখরুল বলেন, মুন্সিগঞ্জে তারা শুধু শাওনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। এরপরে তারা বিএনপির নেতার কারখানা জ্বালিয়ে দিয়েছে। গোটা মুন্সিগঞ্জে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। সারাদেশে একটা ত্রাস সৃষ্টি করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
জনগণের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে বলি না। ক্ষমতায় বসানোর কথা বলি, বাংলাদেশের জনগণকে। কারণ এদেশের মালিক হলো, এদেশের জনগণ। তাদের অধিকার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। কথায় কথায় গুলি করবেন, কথায় কথায় ফেলে দেবেন- এদেশের মানুষ সেটা আর সহ্য করবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা আজকে গত ১৫ বছরে আমার ৬শত ভাইকে (নেতাকর্মী) গুম করেছে, ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা করেছে, তারা জাতিসংঘে গিয়ে বলে- যুদ্ধ চাই না। তারা বলে, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কোন মুখে এই কথা বলেন? কারণ যে দেশে আপনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বাস করেন, যে দেশে আপনি প্রতিনিধিত্ব করছেন- সেই দেশের মানুষদেরকে আপনি হত্যা করছেন। তাদের একটি মাত্র অপরাধ, তারা গণতন্ত্র চায়। তারা তাদের অধিকার ও ভোটাধিকার ফিরে চায়। তারা বেঁচে থাকতে চায়। তারা মানুষের মতো জীবন-যাপন করতে চায়।
এরআগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার বিচারহীনতার ভুগছে। এই সরকার লুটেরা সরকার। তাই আর বিচার চাই না। এখন প্রতিরোধ করবো এবং বিচার করবো।
সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর ১টা থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাগম হতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। যুবদলসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার ও ফেস্টুনসহ খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন।
এদিকে সমাবেশকে ঘিরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ এর আশ-পাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তার বলায় গড়ে তুলেন।
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নার সঞ্চালনায় এ সমাবেশে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, কৃষকদল নেতা হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদল নেতা সাইফ মোহাম্মদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।