কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর নামে হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪০ পিএম, ১১ এপ্রিল,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৩৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
কুষ্টিয়ায় এক স্কুল শিক্ষিকার নামে জ্ঞাত বহির্ভূত শত কোটি টাকার সম্পত্তি ও তার স্বামী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যানের নামে হাজার কোটি টাকার অবৈধ ভাবে অর্জিত সম্পত্তির অভিযোগ এনে নোটিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। আগামী ১৩ এপ্রিলের মধ্যে গোটা সম্পত্তির হিসেব দাখিল করতে বলা হয়েছে।
দুদকের নোটিশ সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া পৌর ৪ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শাম্মী আরা পারভীন তার স্বামী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জ্ঞাত বর্হিভূত শত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। পাশাপাশি তার স্বামী চেয়ারম্যান আতা টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বানিজ্য, চাঁদাবাজি করে ১ হাজার কোটি টাকা আয় করেছেন। চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা ও তার স্ত্রী শাম্মি আরা পারভীনকে আগামী ১৩ এপ্রিলের মধ্যে দুদকের নির্দিষ্ট ছকে সকল সম্পত্তি হিসেব দাখিল করতে বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ঝোল দাগের আব্দুস সাত্তার প্রমাণিকের পুত্র আতাউর রহমান আতা। আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে তিনি কুষ্টিয়ায় এসে মজমপুরের একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। এর পর খুলে যায় তার ভাগ্যের চাকা। তিনি রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। কুষ্টিয়ায় যখন তিনি আসেন তখন তার কোন সম্পত্তি না থাকলেও তিনি বাগিয়ে নেন আওয়ামীলীগের নমিশন। এরপর তাকে আর পিছে ফিরে দেখতে হয়নি। ২৬-০২-২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনের সময় আতাউর রহমান আতা তার নির্বাচনী হলফনামায় তার নামে ৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ টাকা ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে মর্মে প্রত্যয়ন দেন। কিন্তু মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকার ডি ব্লকে ৫ কাঠার দুইটি ৬ ও ৭ নং প্লটে নির্মান করেছেন ১০ তলা হাইয়ারেজ বিল্ডিং।
ভেড়ামারা সাতবাড়িয়ায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ৫ কাঠা জমি,ঢাকার উত্তরখান এলাকায় ৬ কাঠা জমি যার মূল্য ২ কোটি টাকা। ওই জায়গায় ১০ তলা বিল্ডিং নির্মানাধীন। ভেড়ামারা শহরে ২৫ বিঘা জমির ওপর বাগান তৈরী, ভেড়ামারা শহর এলাকায় ৯০ লাখ মূল্যে ২৪ শতক জমি, এছাড়া ভেড়ামারায় আরো প্রায় ১০ টি জমি তিনি শত কোটি টাকায় ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। কুষ্টিয়া প্রধান সড়কের হাইস্কুল মার্কেটের এ ব্লক দ্বিতীয় তলায় ৬ টি দোকান তিনি জোরপূর্বক তিনি নামে করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এছাড়া শহরের বড় দামী শপিং মল পরিমল টাওয়ারে তার রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের ২ টি দোকান, কেন্দ্রিয় সমবায় মার্কেটে ২২ নং দোকানের মালিকও আতাউর রহমান আতা। এছাড়া জেলা পরিষদের বিভিন্ন মার্কেট এবং খাস জমি তিনি তার নিজের নামে এবং স্ত্রীর নামে বরাদ্দ নিয়েছেন। কুষ্টিয়ার বটতৈল পাওয়ার গ্রীডের মার্কেটে ৮ টি দোকান আতাউর রহমান আতা ও তার স্ত্রী শাম্মি আরা পারভীনের নামে বলে নিশ্চিত করেছে কর্ত্তৃপক্ষ। ব্যাংক এশিয়ার পাংশা শাখায় আতাউর রহমান আতার নামে রয়েছে ২ কোটি টাকা।
পুর্বালী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, উত্তরা ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক ,ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে আতাউর রহমান আতা ও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, কুষ্টিয়ার প্রধান ডাকঘরে স্ত্রী শাম্মি আরা পারভীনের নামে রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তার ব্যবহৃত দুইটি ল্যান্ড ক্যুজার গাড়ি যার মূল্য ২ কোটি টাকার বেশী। খুলনার দাকোপ ও পটুয়াখালীতে ২ শত বিঘা জমির ওপর রয়েছে মাছের ঘের। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা জমি, নগদ অর্থ সহ বিপুল পরিমান সম্পত্তি রয়েছে আতার। এসব বিষয় নিয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই সব ব্যাপারে কান না দেয়ার পরামর্শ দেন।