avertisements
Text

অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান

অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান

প্রেসিডেন্ট জিয়া : আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি

প্রকাশ: ০৮:১২ পিএম, ১৮ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:১২ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

হীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ; এক কিংবদন্তি নেতা ও রাষ্ট্রনায়ক। স্বাধীনতার পর উল্টোরথে চলা বাংলাদেশ নামক দেশটিকে রাষ্ট্র পরিণত করেছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়ার লক্ষ্য ছিল- যে চেতনা বুকে ধারণ করে এদেশের লাখো জনতা নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে নিপীড়ক পাকিস্তানিদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন, সে চেতনাকে সমুন্নত করা। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির অব্যবহিত পরই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ধ্বংস করার আয়োজন করা হয়েছিল। জিয়া সে বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে দেশের হাল ধরেন। জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে জিয়া এর আগেও ‘উই রিভোল্ট’ বলে জাতির মনে সাহস যুগিয়েছিলেন; আশার বাতিঘর হয়ে দেদীপ্যমান হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ অসীম সাহস বুকে নিয়ে জিয়া যদি এদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন, তাহলে হয়তোবা আমাদের আরো দীর্ঘ এক রক্তগঙ্গা পাড়ি দিতে হতো; আমাদের স্বাধীনতাপ্রাপ্তি বিলম্বিত হতে পারতো। কিন্তু অসীম সাহসী জিয়া তাঁর মনে দীর্ঘ লালিত স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পিছপা হননি। 

২৫শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং পরদিন মহান স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে আধুনিক ও উৎপাদনমুখী বাংলাদেশ রাষ্ট্র  গঠনে জিয়ার অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণোজ্জ্বল হয়ে থাকবে। জিয়ার সততা, দেশপ্রেম, দেশের কল্যাণ সাধনে একাগ্রতা এবং চারিত্রিক দৃঢ়তা ছিল এক ঈর্ষণীয় বিষয়। এসব গুণাবলী তাকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু জিয়ার এই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা বাংলাদেশবিরোধী শক্তির সহ্য হয়নি। তাই আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রে দেশি-বিদেশির যোগসাজশে ১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে কতিপয় বেপথু সৈন্যের হাতে জিয়া শাহাদত বরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪৬! ১৯৩৬ সালের ১৯শে জানুয়ারি এই মহান নেতা জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষণকালের অথচ বর্ণিল এই জীবনে জিয়া এদেশের মানুষের জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন, মানুষের কল্যাণ সাধনে যেভাবে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিরলস ছুটে বেড়িয়েছেন তাতে তার দেশপ্রেমের পূর্ণ পরিচয় মেলে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা, মহান স্বাধীনতার ঘোষণা, সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জনতার জিয়ায় রূপান্তর, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শনের প্রবর্তন, আধুনিক ও উৎপাদনমুখী বাংলাদেশ গড়ার মেনিফেস্টো তথা ১৯ দফা রচনার মত ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে জিয়া এ দেশের জনতার মাঝে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন। 

মুজিব আমলের দুঃশাসন সৃষ্ট ভঙ্গুর অর্থনীতি ও পরবর্তী নাজুক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে আসা ছিল এক মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আজন্ম লড়াকু জিয়া সেই চ্যালেঞ্জটা নিলেন। উৎপাদনমুখী রাজনীতির সূচনার মাধ্যমে জিয়া পূর্বেকার শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পদদলিত করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনরায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেন। সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে, বিপদসংকুল পথ মাড়িয়ে তিনি একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা করলেন। 

একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জিয়াউর রহমান গ্রামমুখী অর্থনীতির উপর জোর দেন। উপসামরিক আইন প্রশাসক থাকাকালে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। গ্রামমুখী অর্থনীতি গড়ার আহবান জানিয়ে জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থ গ্রাম। বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য আমাদের গ্রাম ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন করতে হবে। গ্রামীণ জনজীবনের সার্বিক উন্নতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, গ্রামের নিরক্ষর ও দরিদ্র মানুষের দ্বারে আমাদের সভ্যতার বাণী নিয়ে যেতে হবে। তাহলেই বলতে পারবো যে, বাংলাদেশের উন্নতির জন্য আমরা কাজ করেছি।’ খালখনন কর্মসূচি ছিল জিয়ার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ১৯৭৬ সালের ১ নভেম্বর কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান যশোরের উলশি-যদুনাথপুর খাল খনন প্রকল্প হাতে নেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের কৃষিভিত্তিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় সেচের পানির অপ্রতুলতা দূর করতে দেশব্যাপী ১৪০০০ খাল খনন করেন। 

শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতা উল্লেখযোগ্য। একটি সময়োপযোগী অন্তর্র্বর্তী শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য ১৯৭৮ সালে প্রফেসর মুস্তফা বিন কাসিমের নেতৃত্বে তিনি একটি জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেন। উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর শহীদ জিয়া ঢাকায় একটি ‘জাতীয় শিক্ষা ওয়ার্কসপ’ আয়োজন করেন। এতে শিক্ষাব্যবস্থার সাথে জড়িত সারাদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষাকর্মী এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার প্রসারে গ্রন্থাগারকে গুরুত্ব দিয়ে ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে ‘থানা পাবলিক লাইব্রেরি কাম অডিটোরিয়াম স্থাপন’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ (বিএনপি)- এর প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষণাপত্রের ২১ নং ধারায় বাংলাদেশে একটি গণমুখী ও জীবননির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল। গণশিক্ষা কার্যক্রম ও সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় জিয়াউর রহমানের অভূতপূর্ব সংযোজন। মাদ্রাসা শিক্ষার বহুমুখী উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যাদেশ বলে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। যুগের চাহিদা এবং জাতীয় ঐতিহ্য ও প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বিত উপায়ে ইসলাম ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে দেশে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া ও যশোরের সীমান্তবর্তী শান্তিডাঙ্গায় তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৮০ সালে জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করা হয়।  

দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের আঞ্চলিক সহযোগিতার ফোরাম সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন জিয়াউর রহমান। প্রতিবেশি ভারতের সাথে গঙ্গার পানি বণ্টনে ফারাক্কা চুক্তি, তিন বিঘা করিডোর হস্তান্তরের রূপরেখা প্রস্তুতকরণ, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা নির্ণয়ে যৌথ জরিপ ও আলোচনার মাধ্যমে অধীনতামূলক মিত্রতার বদলে সার্বভৌম মর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক নিরূপণে সচেষ্ট ছিলেন জিয়া। স্বাধীনতা-উত্তর মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্কোন্নয়নে উদাসীনতার প্রথা ভেঙে প্রেসিডেন্ট জিয়া দূরত্ব লাঘবে উদ্যোগী হন। এর ফলে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের বন্ধুভাবাপন্ন ও আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়। 

শিক্ষার পাশাপাশি সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি জিয়াউর রহমানের প্রবল আগ্রহ ও অনুরাগ ছিল। ১৯৭৬ সালে বায়ান্নের ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি প্রথমবারের মত ‘একুশে পদক’ পুরস্কার প্রবর্তন করেন। ১৯৭৭ সালে শহীদ জিয়া প্রথমবারের মত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রবর্তন করেন। এছাড়াও ১৯৭৯ সালের ৯ জানুয়ারি প্রথমবারের মত ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ১৯৭৭’ প্রদান করেন। জিয়ার আগ্রহেই ১৯৮১ সালের মার্চ-এপ্রিলে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশি জাতির মননের প্রতীক বাংলা একাডেমির উন্নয়নে তার আমলে ‘বাংলা একাডেমি অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮’ জারি করা হয়। শিশুর সুপ্ত মেধার সৃজনশীল বিকাশে শহীদ জিয়ার অবদান অসামান্য। তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৭৭ সালের ১৫ জুলাই পুরনো হাইকোর্ট ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে তিনি শিশু একাডেমির নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন। শিশুদের বিনোদনের লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে শাহবাগে জাতীয় শিশুপার্ক স্থাপন করা হয়। এছাড়া শিশুদের সাংস্কৃতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭৬ সালে তাঁর উদ্যোগে টেলিভিশনে ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়া উপজাতীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসারে রাঙ্গামাটিতে ‘উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (বর্তমান নাম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট)’ এবং নেত্রকোণার দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে ‘উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী’ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও চারটি বিভাগীয় শহরে তিনি ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। 

মুজিব শাসনামলে গণমাধ্যমের উপর যে খড়গ নেমে আসে জিয়া সে অবস্থান থেকে উত্তরণে প্রয়াসী হন। তিনি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। সাংবাদিকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) তারই চিন্তার ফসল। স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য প্রণীত আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়া ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে যেখানে জাতীয় প্রেসক্লাবের অবস্থান সে জায়গাটি প্রেসিডেন্ট জিয়াই বরাদ্দ দিয়েছিলেন। 

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান অসামান্য। ৫০ শয্যার ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দি হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, পিজি হাসপাতালের সি-ব্লক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ চিকিৎসকদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান বিএমএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। ১৯৭৮ সালে তিনি কলেরা (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। দক্ষ নার্স তৈরির লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি মহাখালিতে নার্সিং কলেজ এবং একই সালের ৩রা এপ্রিল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতাতেই নিপসম, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান ও ইপিআই প্রতিষ্ঠিত হয়। 

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রেসিডেন্ট জিয়া এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসেন। পাশ্চাত্যের কাছে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে পড়া বাংলাদেশের হৃত গৌরব তিনি পুনরুদ্ধার করেন। তাঁর গৃহীত একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম মর্যাদাসম্পন্ন পররাষ্ট্র দর্শনের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। জিয়ার পররাষ্ট্র দর্শনের মূলকথা ছিল জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণœ রাখা এবং সার্বভৌম মর্যাদা সমুন্নত রেখে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। জিয়ার এই আত্মমর্যাদাশীল নেতৃত্বের ফলেই তিনি বহির্বিশ্বে তৃতীয় বিশ্বের একজন আস্থাভাজন নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। তিনি ইরান-ইরাক যুদ্ধ নিরসনে বলিষ্ঠ কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করেন। দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের আঞ্চলিক সহযোগিতার ফোরাম সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন জিয়াউর রহমান। প্রতিবেশি ভারতের সাথে গঙ্গার পানি বণ্টনে ফারাক্কা চুক্তি, তিন বিঘা করিডোর হস্তান্তরের রূপরেখা প্রস্তুতকরণ, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা নির্ণয়ে যৌথ জরিপ ও আলোচনার মাধ্যমে অধীনতামূলক মিত্রতার বদলে সার্বভৌম মর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক নিরূপণে সচেষ্ট ছিলেন জিয়া। স্বাধীনতা-উত্তর মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্কোন্নয়নে উদাসীনতার প্রথা ভেঙে প্রেসিডেন্ট জিয়া দূরত্ব লাঘবে উদ্যোগী হন। এর ফলে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের বন্ধুভাবাপন্ন ও আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়। 

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। সেনা ছাউনির বেষ্টনীতে তাঁর কর্মজীবনের শুরু হলেও তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই গণমানুষের নেতা। তবে দুর্ভাগ্য যে, তাঁর শাসনামলের মতই তাঁর জীবনকালও দীর্ঘ ছিল না। তথাপিও একটি আধুনিক ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার যে বুনিয়াদ তিনি গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশ মূলত এখনো সেই রূপরেখাতেই চলছে। তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনীতিই আজ আমাদেরকে জাতি হিসেবে এতটা দূর নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম জিয়ার শাহাদতবরণের পর বলেছেন, ‘এটা কল্পনা করাও কঠিন যে, জিয়া যদি ১৯৮১ সালের পরিবর্তে ১৯৭৫ সালে নিহত হতেন তাহলে বাংলাদেশের ভাগ্যে কী ঘটতো। বাংলাদেশ খুব সহজেই আফগানিস্তান বা লাইবেরিয়ার মতো একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারতো। জিয়া সেই পরিণতি থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন।’ 

স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশ এখন পঞ্চাশ পেরিয়েছে। এর চেয়ে কম সময়ে বিশ্বের অনেক জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞানে, উন্নয়নে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, সঠিক এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের অভাবে আমরা এখনো যোজন যোজন পিছিয়ে রয়েছি। সেই যে প্রেসিডেন্ট জিয়া একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ আধুনিক রাষ্ট্রগঠনে নানা কর্মসূচি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন এরপর আর কোনো সরকারই সেরকম ভিশন নিয়ে এগোনোর কথা ভাবেনি। আজ তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ একটি রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত থাকতে পারতো। তার শাহাদত বরণের পর দৈনিক দেশ ‘অম্লান তাঁর আদর্শ’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয়তে লিখে : ‘যে মানুষকে আমরা দেখেছি শাসনের রাশ হাতে নিয়েও অধিকারের পবিত্রতাকে লঙ্ঘন করেননি, দেশকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে দেননি; জাতীয় স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য, ঐতিহ্যকে জানান দিয়ে গিয়েছেন, আজ হয়তো তিনি নেই। কিন্তু তাঁর পথ আছে, পথের দিশা আছে; আছে জনগণ এবং এক অম্লান আদর্শ। আমাদের তাই পথভ্রষ্ট হওয়া চলবে না। প্রেসিডেন্ট জিয়ার নির্দেশিত পথই আমাদের পথ।’

লেখক : 
অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান- শিক্ষক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।

avertisements
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
মহাসড়ক অবরোধ করে ফের রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মহাসড়ক অবরোধ করে ফের রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলেও বন্ধ থাকছে যেসব সামাজিক মাধ্যম
মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলেও বন্ধ থাকছে যেসব সামাজিক মাধ্যম
আইসিসির সভা অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে
আইসিসির সভা অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন
বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট নেই : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট নেই : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
ঋত্বিক-সাবার বিচ্ছেদ গুঞ্জন
ঋত্বিক-সাবার বিচ্ছেদ গুঞ্জন
পল্টন মোড় থেকে ৪ আন্দোলনকারী আটক
পল্টন মোড় থেকে ৪ আন্দোলনকারী আটক
ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পেলেন পেজেশকিয়ান
ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পেলেন পেজেশকিয়ান
আওয়ামী লীগের যৌথসভা মঙ্গলবার
আওয়ামী লীগের যৌথসভা মঙ্গলবার
ইসরায়েলে ঢুকতে পারে তুরস্ক : এরদোয়ান
ইসরায়েলে ঢুকতে পারে তুরস্ক : এরদোয়ান
আগরতলায় ২৩ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
আগরতলায় ২৩ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
বিক্ষোভে ছাত্রদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট
বিক্ষোভে ছাত্রদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট
আজ দেশে আনা হচ্ছে শাফিনের মরদেহ, কাল দাফন
আজ দেশে আনা হচ্ছে শাফিনের মরদেহ, কাল দাফন
পেনশন ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষকদের বৈঠক আজ
পেনশন ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষকদের বৈঠক আজ
কণ্ঠে আহাজারি শুনি নাই, চোখে আগুন দেখেছি : মির্জা ফখরুল
কণ্ঠে আহাজারি শুনি নাই, চোখে আগুন দেখেছি : মির্জা ফখরুল
ভোলা থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছিল এসআই কনক
ভোলা থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছিল এসআই কনক
আজ চিকিৎসক ও সমাজসেবী ডা. জুবাইদা রহমানের জন্মদিন
আজ চিকিৎসক ও সমাজসেবী ডা. জুবাইদা রহমানের জন্মদিন
বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, হার্ট ও লিভারের পরিক্ষা চলছে
বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, হার্ট ও লিভারের পরিক্ষা চলছে
লুটপাটের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা : মির্জা আব্বাস
লুটপাটের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা : মির্জা আব্বাস
দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে : জি এম কাদের
দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে : জি এম কাদের
ভৈরবে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে জন্ম সনদ সংশোধনে ঘুষ দাবীর অভিযোগ
ভৈরবে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে জন্ম সনদ সংশোধনে ঘুষ দাবীর অভিযোগ
মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকালে অবশ্যই অফিসে থাকতে হবে
মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকালে অবশ্যই অফিসে থাকতে হবে
২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের সব জেলায় বিএনপির পদযাত্রা
২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের সব জেলায় বিএনপির পদযাত্রা
জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা : ইতিহাসের পুনর্পাঠ
জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা : ইতিহাসের পুনর্পাঠ
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান : জাতীয় গৌরবের সূর্যসারণি
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান : জাতীয় গৌরবের সূর্যসারণি
হিংসাত্মক রাজনীতির দম্ভ : ভেঙে ফেলা হচ্ছে খুলনার নান্দনিক স্থাপনা 'জিয়া হল'
হিংসাত্মক রাজনীতির দম্ভ : ভেঙে ফেলা হচ্ছে খুলনার নান্দনিক স্থাপনা 'জিয়া হল'
নতুন পাঠ্যক্রমের ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে : শিক্ষামন্ত্রী
নতুন পাঠ্যক্রমের ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে : শিক্ষামন্ত্রী
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর নামে হাজার কোটি টাকা
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর নামে হাজার কোটি টাকা
গুম নিয়ে মিশেল ব্যাচেলেটের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করলো ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
গুম নিয়ে মিশেল ব্যাচেলেটের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করলো ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
avertisements
avertisements