দৈনিক দিনকাল.নেট
“একদিন এই সরকার থাকবে না কিন্তু হামলার ফুটেজ থাকবে”
প্রকাশ: ০৬:০৭ পিএম, ১ অক্টোবর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৫৯ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একদল ছাত্রের হামলার সচিত্র বিবরণে মানুষ হতবাক। গত ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার এই হামলার ঘটনাটি ঘটে। রীতিমত ঘোষণা দিয়েই এই হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সরকারি ছাত্র সংগঠনের (ছাত্রলীগ) কথিত নেতাকর্মী। তাদের লাঠি পেটায় বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের ১৭ নেতাকর্মী আহত হয়। এরমধ্যে দুজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সেই মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন (২ মার্চ) হয়েছিল এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই। তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আসম আব্দুর রব সাহসিকতার সাথে লাল সবুজ পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। সেই ঢাবি ক্যাম্পাসে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের (ছাত্রদল)-এর নবনির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাবি শাখা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা পূর্ব নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী ভিসির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথেই আক্রান্ত হন। চরম নিপীড়নের শিকার হন পুলিশের সামনে।
এই ন্যক্কারজনক ঘটনার জবাব কি? এই ঘটনার পরপরই ইউট্যাবের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। শিক্ষকদের এই সংগঠনের মহাসচিব ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, এই ন্যক্কারজনক হামলার নিন্দার ভাষা আমাদের নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে যোগ্য ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
ডাকসুর সাবেক জিএস ও সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকন বলেন, এই হামলা একটি দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। এই ছাত্রলীগেরই এককালীন সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই হামলার ঘটনাটি বর্বরতার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো। একদিন এই সরকার থাকবে না, কিন্তু এই ‘ফুটেজ’ তো থাকবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গণ সাম্প্রতিককালে শান্ত। ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশুনার ব্যস্ত থাকেন। আবার অনেক শিক্ষার্থী দেশের বাইরে পড়তে যান। ইদানীং ভারত-চীনসহ অন্যান্য দেশে অধিকহারে শিক্ষার্থীরা যাচ্ছেন। পাবলিক ইউনিভার্সিটির চেয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পরিবেশ ভালো। অনেক পিতা-মাতা সন্তানদের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ছেলে মেয়েদের পড়তে পাঠাচ্ছেন। যদিও তা ব্যয়বহুল। দেশে বর্তমানে বেশকিছু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি নাম করেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করা শিক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষাতেও কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন। কিন্তু এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড (পরিচালনা পরিষদ) নিয়েও ষড়যন্ত্র চলছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ ঢাবি নিয়ে যা হলো তাতেও কি বার্তা পাওয়া যাচ্ছে?
মাস্তানি রুখতে হবে-খায়রুল কবির খোকন : ৯০-এর সর্বদলীয় ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা, ডাকসুর জিএস সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকনের দৃষ্টি আকষণ করা হলে তিনি বলেন, এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। শিক্ষাঙ্গনে সরকারি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের শিক্ষা বহির্ভূত কার্যক্রমে স্বাভাবিক শিক্ষা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। এরা মাদক ব্যবসা পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাবি ভিসির আমন্ত্রণে ছাত্রদলের ঢাবি নতুন কমিটির নেতা-কর্মীরা যখন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছে তখন তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা হলো। এ ধরনের মাস্তানি রুখে দাঁড়াতে হবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকেও এই হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে।
ফুটেজ তো থাকবে- হাবিব : ৯০’র ছাত্র আন্দোলনকালে তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি বর্তমানে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, একদিন এই সরকার থাকবে না, কিন্তু ন্যক্কারজনক ঐ হামলার ফুটেজ (ছবি) তো থাকবে। এই ছবি এই সরকারের অপকর্মের ঘটনাবলি মনে করিয়ে দেবে।
দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত- ড. মোর্শেদ হাসান খান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, এটি একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। ভিসির আমন্ত্রণে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাবি শাখার নতুন কমিটি ফুল নিয়ে দেখা করতে যাচ্ছিল। সেই ছাত্র নেতাদের ওপর হামলা একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। এই হামলার ছবিতে দেখা যাচ্ছে- কত নৃশংস ঘটনা এটি। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। দায়ী ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।