অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান
জিয়ার ১৯-দফা কর্মসূচি : টেকসই উন্নয়নের এক জলাভূমি-মডেল
প্রকাশ: ০৯:২০ পিএম, ১৯ জানুয়ারী, বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:০৩ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
জাতিসংঘের উদ্যোগে "The World Commission on Environment and Development : Our Common Future" শিরোনামে রচিত ‘Brundtland’ রিপোর্টে উপস্থাপিত উন্নয়নের ধারণাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যথাক্রমে ৮ টি ও ১৭ টি লক্ষ্য নির্ধারণ করে দুটি বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে: (১) সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Millennium Development Goals- MDGs) ও (২) টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Sustainable Development Goals - SDGs)। পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে এর যাত্রা শুরু করে। ২০০০ সালে ১৫ বছর মেয়াদী MDGs এবং পরবর্তীতে ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর মেয়াদে SDGs লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
জিয়াউর রহমান অনাকাঙ্গিত ভাবে শাহাদাত বরণ করেন ৩০ মে ১৯৮১ সালে। তিনি ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা ও এর বাস্তবায়ন শুরু করেন MDGs ও SDGs-এর ঘোষণার যথাক্রমে প্রায় ২০ বছর ও ৩৪ বছর পূর্বে। এখানে লক্ষণীয় যে, কয়েক যুগ পূর্বে জিয়াউর রহমানের ঘোষিত ১৯ দফার সঙ্গে MDGs ও SDGs ঘোষিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গুলো অনেকাংশেই অভিন্ন কিংবা সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন, জিয়াউর রহমান প্রস্তাবিত ৬ষ্ঠ দফায় বলা হয়েছে, কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। তার এই দফাটি MDGs এর ১ম দফা ও SDGs এর ১ম ও ২য় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে অভিন্ন। জিয়াউর রহমানের প্রস্তাবিত পঞ্চম দফায় বলা হয়েছে, কৃষির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে গ্রামীণ ও জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। তার এই দফাটি MDGs-এর ৭ম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং SDGs-এর ৭ম, ৮ম ও ১৫তম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রস্তাবিত ৫ম দফায় বলা হয়েছে, কৃষিখাত উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ ও জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে হবে। এই দফাটি MDGs-এর ১ম ও SDGs-এর ৭ম লক্ষ্য মাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সবার জন্য নূন্যতম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে ১৯ দফা ১০ম দফায়।
সকলের ন্যূনতম চিকিৎসা পাওয়ার সুবিধার্থে তিনি যে প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: আইসিডিডিআরবি, বারডেম হাসপাতাল, হৃদরোগ হাসপাতাল, চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। উল্লেখিত দফার বিষয়বস্তু ও লক্ষ্যের সঙ্গে MDGs-এর ৪র্থ, ও ৬ষ্ঠ লক্ষ্যমাত্রা এবং SDGs-এর ৩য় ও ৬ষ্ঠ লক্ষ্যমাত্রার সাযুজ্য পরিলক্ষিত হয়।
এভাবে গভীর পর্যবেক্ষণে পরিলক্ষিত হয় যে, জিয়াউর রহমান প্রস্তাবিত ১৯ দফা কর্মসূচির ৬ষ্ঠ, ৯ম, একাদশ, ১৬তম ও ১৯তম দফার সঙ্গে যথাক্রমে MDGs -এর ১ম, ২য়, ৬ষ্ঠ, ৩য় এবং ৮ম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাশাপাশি তাঁরপ্রস্তাবিত ১৯ দফার ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, একাদশ, দ্বাদশ, ১৬তম ও ১৯তম দফার সঙ্গে যথাক্রমে SDGs-এর ১ম, ২, ১০ম, ৪র্থ, ৩য়, ৫ম, ৯ম, ১৭তম ও ১৬তম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
উন্নয়ন নীতিবিদ্যার একজন গবেষক হিসেবে এক্ষেত্রে যে জিজ্ঞাসাটি আমাকে বিস্মিত ও আকৃষ্ট করেছে, তা হচ্ছে: জাতিসংঘ কর্তৃক বৈশ্বিক উন্নয়ন (টেকসই) ভাবনা উপস্থাপনের একাধিক যুগ পূর্বে জিয়াউর রহমান কিভাবে উন্নয়ন সম্পর্কে এতটা সচেতনতা ও ১৯ দফা (উন্নয়ন) কর্মসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন? আমার বিবেচনায়, তারমধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রভাব তৈরি করেছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একহল, স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার যথাযথ উন্নয়নমূলক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণে নজিরবিহীন ব্যর্থতার কারণে ঘটে যাওয়া ১৯৭৪ এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ (যাতে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন)।
অন্যদিকে MDGs ও SDGs-এর উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে জিয়াউর রহমানের ১৯ দফায় উল্লেখিত অনেকগুলো দফার অভিন্নতা ও সামঞ্জস্য প্রমাণ করে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা তথা মুক্তির রূপকার। উন্নয়নের ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে তার অতুলনীয় বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন যে, বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ (Delta) ভূখন্ড। বাংলাদেশের ভূবৈচিত্র (geodiversity) ও বাস্তব্যবস্থা (ecosystem) বিশ্বের অন্যান্য (অধিকাংশ) ভূখন্ড থেকে আলাদা। তাই এই বাস্তব্যবস্থাগত ভিন্নতা (ecological otherness) তথা ব-দ্বীপের জলাভূমি-সভ্যতা (wetland civilization) বিবেচনায় রেখেই উন্নয়নের (অর্থনৈতিক) ধরণ ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করার কোন বিকল্প নেই। জিয়ার ১৯ দফায় এর সুস্পস্ট প্রতিফলন রয়েছে।
ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণ ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন। এ বিষয়টি যথাযথোভাবে ব্যাখ্যার জন্য বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন, যা এই স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। সংক্ষেপে বললে, তিনি সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য খাল খনন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। এর সুফল হিসেবে শুকনো মৌসুমে পানির অভাব দেখা দেয়নি এবং ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা ও ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে আর্সেনিক দূষণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ এর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো: বীজ অধ্যাদেশ প্রণয়ন , শস্য সংগ্রহ করার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা, যুবসমাজকে হাঁস-মুরগী পালন সহ নানা ধরনের ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মমুখী করে তোলা, সার কারখানা স্থাপন ও চা বোর্ড গঠন করা, গম গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন, সিরডাপ এর ন্যায় আন্তর্জাতিক মানের কৃষি উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা, পল্লী বিদ্যুতয়ান বোর্ড গঠন সহ নানা ধরনের কৃষি ভিত্তিক উন্নয়ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।
পাশাপাশি তিনি তৈরি পোশাক শিল্প, উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি মুখিকরণ এবং এই শিল্প বিকাশের জন্য সর্ব প্রথম স্পেশাল বন্ডেড ওয়ারহাউজ স্কিম চালু করা, গ্রামীন ব্যাংক চালু করা, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট পদ্ধতির উদ্ভাবনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছেন। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য তিনি বিদেশে জনশক্তি প্রেরণ করার মাধ্যমে রেমিট্যান্স অর্জন করেন এবং নিজ দেশে বস্ত্র উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমেই অপার সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাক শিল্পের সূচনা করেন, যার ওপর আজ দেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে। তার সময়ে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রকৃত পক্ষেই জনসাধারনের জন্য সুফল বয়ে এনেছিল। ক্ষমতায় গিয়ে চাটকদার কিছু কর্মসূচি বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করে জনসাধারণকে গণতন্ত্রের দাবি থেকে সরিয়ে রাখাই হল সাময়িক শাসকদের সাধারণ বৈশিষ্ট, কিন্ত জিয়াউর রহমান সেই তুলনায় ছিল এর এক অনন্যসাধারণ ব্যতিক্রমধর্মী উদাহরণ।
জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচির উন্নয়ন পরিকল্পনা এদেশের বাস্তব্যবস্থা ও জলাভূমি- সভ্যতার আদলে প্রণয়ন করার সুবাদে পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের এক নবযুগের সূচনা হয়। MDGs ও SDGs-এর উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলোর অন্যতম একটি বিবেচ্য বিষয় হলো পরিবেশ সুরক্ষা করে উন্নয়ন নিশ্চিত করা। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করা যায় যে, বিশ্ববাসী টেকসই উন্নয়নের ধারণা অবহিত ও বাস্তবায়নের বহু পূর্বেই জিয়াউর রহমানের ১৯ দফার কল্যাণে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের এক “বদ্বীপ” তথা “জলাভূমি- মডেল" পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এবং পরবর্তীতে তার প্রণীত মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আপোষহীন নেএী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য নেতৃত্বে তিনবার সরকার পরিচালনা করার সুবাদে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি টেকসই ভিত্তির উপর দাঁড়াতে সক্ষম হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর এই মহেন্দ্রক্ষণে পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, গুটিকয় সূচকে অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও (যেমন, গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়, ও লিঙ্গ বৈষম্য) অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে (যেমন, রাজনৈতিক পথচলা অমসৃণ হয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমূলে বিনাশ হয়েছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিপরীতে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম হয়েছে, দুর্নীতি সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে ও মূল্যবোধের অবক্ষয় তলানিতে এসে পৌঁছেছে )।
বলা হয়ে থাকে, উন্নয়ননশীল বাংলাদেশ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করতে যাচ্ছে। আসলে কি তাই? মূলত: গত এক যুগেরও বেশি সময় যাবত উন্নয়নের নামে বাংলাদেশে মেঘা প্রকল্পের ঋণ ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে। ঋণ নির্ভর অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফাঁদে জড়িয়ে পড়া পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান ও শ্রীলংকার দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শ্রীলংকা মধ্যম আয়ের একটি দেশ। কিন্তু বাণিজ্যিক শর্তে চীনের দেওয়া ঋণের অর্থে বন্দর ও মহাসড়ক এর মত বড় প্রকল্পগুলোর ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় শ্রীলঙ্কার উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়েছে। ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় গভীর সমুদ্র বন্দর হাম্বানটোটাকে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে উক্ত উৎস থেকে রাজস্ব আয়ের ৯০ শতাংশ চলে যাচ্ছে চীনের ঋণের দায় শোধ করতে। পাকিস্তানের অবস্থাও তাই। বড় প্রকল্পগুলো বিশ্ব ব্যাংক ও চীনের বিনিয়োগ নির্ভর। যেমন, চীনের ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে পাকিস্তানের পাঁচটি জলবিদ্যুৎ নির্মাণ কাজ চলমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঋণ শোধ করতে ৪০ বছর সময় লাগবে। নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হতে বিলম্ব হওয়ায় এই ব্যয় ৯৮বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াতে পারে এবং এক বছরে এই ঋণের সুদ ৫ বিলিয়ন ডলার হারে বিশ বছরে দাঁড়াবে ২০০ বিলিয়ন ডলারে। পাকিস্তান সরকারের এই ঋণের বোঝা জনগণকে বছরের-পর-বছর বহন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার উন্নয়নের নামে বাণিজ্যিক শর্তে স্বল্পমেয়াদে গৃহীত ঋণের অর্থ যে মেঘা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে, তাতে করে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান এর অনুরূপ বাংলাদেশও ঋণ ফাঁদে জড়িয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের আপামর জনতা বছরের পর বছর এই ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হবে। স্বাধীনতা-উত্তর ৪০ বছরে বাংলাদেশের যে দায়দেনা হয়েছে তার তুলনায় অনেক বেশি ঋণগ্রস্ত হয়েছে বিগত এক যুগে। অতীতেও ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সেই ঋণদীর্ঘমেয়াদী ও পরিমাণে কম হওয়ার বোঝাও ছিল সহনীয়। কিন্তু বিগত এক যুগ যাবৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেগা প্রজেক্ট এর ঋণ নেওয়া হচ্ছে স্বল্পমেয়াদে বাণিজ্যিক শর্তে। তাই ঋণের বোঝা যেমন বেশি তেমনি দায় পরিশোধের পরিমাণ বেশি এবং অসহনীয়।
চেতাম হাউজ ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মনে করেন, মেঘা প্রোজেক্টের নামে এই বিনিয়োগের উদ্দেশ্য উন্নয়নে সহায়তা নয় বরং বাংলাদেশ কেন্দ্রিক চীনের ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নজরে ও চাপে রাখা। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে.কূঠনৈতিক অদক্ষতা ও স্থায়ী ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার দুরভিসন্ধির কারণে বাংলাদেশ ক্রমাগত ভাবে একটি ”বাফার” রাষ্ট্রে পরিনত হচ্ছে। এ ধরনের একটি ভয়াবহ ভবিষ্যৎ প্রমাণ করে, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতাই নন, ব-দ্বীপের ১৮ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে টেকসই উন্নয়নের এক “জলাভূমি- মডেল” তথা “প্রাচ্য মডেলের” জনকও বটে।
বর্তমান সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানে ধারাবাহিক ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঠিক ধারা থেকে বিচ্যুত। জিয়াউর রহমানের ১৯ দফার গুরুত্ব অনুধাবন ও বাস্তবায়নই হতে পারে বিদ্যমান সঙ্কট থেকে জাতিকে উদ্ধার করার কার্যকরী এক টেকসই পন্থা। এজন্য প্রয়োজন দেশে গণতন্ত্রের চর্চা ফিরিয়ে আনা। তাই টেকসই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য ১৯ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সর্বাত্মক সংগ্রাম রচনাই হওয়া উচিত ক্ষণজন্মা জিয়ার ৮৬তম জন্মবার্ষিকীর অঙ্গীকার।
লেখক: ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়