avertisements
Text

জিয়া আহমেদ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: সংখ্যা নয়, গুণগত মান জরুরি

প্রকাশ: ০৩:৪৬ পিএম, ২৮ এপ্রিল,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:৩৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

কোনো এক অস্পষ্ট কারণে সরকার দেশের ৬৪ জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা মতে, এই সরকারের আমলে আজ পর্যন্ত ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেগুলো একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং আরও ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবিত আছে। আমি মনে করি, দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা সাপেক্ষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে লিখতে গেলে সবার আগে আসে আমরা কি মানসম্পন্ন শিক্ষা চাই, নাকি ক্যাম্পাসে একটা নির্দিষ্ট সময় অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণই যথেষ্ট মনে করছি। দেখবেন, আমাদের জনপ্রতিনিধিরা তাদের রাজনৈতিক ইশতেহারে নিজ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আশ্বাস দিয়ে থাকেন এবং নির্বাচনের পর সেটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের উচ্চ মহলে যোগাযোগ বাড়ান। তাদের অনেকে সফল হয়েছেন, কেউ কেউ হয়তো ভবিষ্যতে সফল হবেন। 

আমার উদ্বেগের জায়গা হলো, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু তার আগে গবেষণাগার, ক্লাসরুম, পরিবহন ইত্যাদির মতো অবকাঠামোগত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন– তা পূরণ করতে পারছি না। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক– তার প্রায় কিছুই আমরা দিতে পারছি না। মোট কথা, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যথাযথ পরিকল্পনা, অবকাঠামো, ক্লাসরুম ও লাইব্রেরি ছাড়া। সর্বোপরি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা নিছক দলীয় বিবেচনায় একপ্রকার রাজনীতিক উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছি, যাদের অনেকেই বিগত সময়ে ঢাকা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। তারা ভাড়া করা একটি নির্দিষ্ট কলেজ কিংবা ভাড়া করা একটি নির্দিষ্ট বিল্ডিংয়ে তাদের সময় অতিবাহিত করে আসছেন। তারা না পারছেন একটি অবকাঠামো দাঁড় করাতে, না পারছেন একটি ভালো গবেষণাগার করতে। অনেক সময় হয়তো তারা অল্প সময় হাতে পান, যা কাঠামো করার জন্য যথেষ্ট নয়।

আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর জানি, যার একটি ব্যাচ অনার্স কোর্স শেষ করে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম কিংবা বের হয়ে গেছে, অথচ যার নিজস্ব কোনো অবকাঠামো নেই। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি রাজনৈতিক উপাচার্য নিয়োগের ফলে নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি হচ্ছে; অর্থাৎ আমরা এই যে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে যাচ্ছি তা প্রকৃতপক্ষে উচ্চশিক্ষার জন্য মঙ্গলজনক কিছু বয়ে নিয়ে আসছে না।
একজন উপাচার্য সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, শিক্ষকদের, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথা সবার অভিভাবক। সুতরাং, তাঁর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাকে জোর দেওয়া দরকার। কারণ উপাচার্য যদি একাডেমিক হন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে একটি স্বচ্ছতার ও জবাবদিহির জায়গায় নিয়ে আসতে পারবেন। আমরা জানি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়াটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। সরকার তার রাজনৈতিক আদর্শধারী ব্যক্তিকে উপাচার্য নিয়োগ দিক, আপত্তি নেই; কিন্তু একই রাজনৈতিক আদর্শসম্পন্ন একজন ভালো একাডেমিশিয়ান ও প্রশাসনিক কাজে দক্ষ ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিশীলতা আরও অনেক বেশি বাড়বে।

আমরা জানি, এখনও পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বিদেশে পড়তে যাওয়ার সংখ্যা বেশি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা বাইরে পড়তে যাচ্ছে না, তা নয়; কিন্তু সংখ্যাটা নগণ্য। আমি এর দায় ছাত্রছাত্রীদের ওপরে চাপাব না, আমরা যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের বের করে দিচ্ছি, সেটি এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে পর্যাপ্ত নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় করছি তা উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনার সঙ্গে একেবারেই বেমানান।

সরকারের উচিত আমাদের দেশের বিজ্ঞ অধ্যাপকদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করা এবং উচ্চশিক্ষার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রণয়ন করা। অবশ্যই সেই অধ্যাপকদের শিক্ষাবিষয়ক গবেষণা ও তার বাস্তবিক প্রয়োগ নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে তার আগে সরকারের উচিত নতুন কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন না দিয়ে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার সংকট দূর করা অর্থাৎ তার অবকাঠামো, বাজেট, গবেষণা, শিক্ষক নিয়োগ ও পরিবহন সমস্যা দূর করা। 
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুদিন ফিরে পাক– এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রইলাম।

জিয়া আহমেদ: পিএইচডি গবেষক, মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটি ও সহকারী অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট

বিষয়:

লেখকের আরও লেখা

avertisements
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
মহাসড়ক অবরোধ করে ফের রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মহাসড়ক অবরোধ করে ফের রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলেও বন্ধ থাকছে যেসব সামাজিক মাধ্যম
মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলেও বন্ধ থাকছে যেসব সামাজিক মাধ্যম
আইসিসির সভা অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে
আইসিসির সভা অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন
বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট নেই : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট নেই : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
ঋত্বিক-সাবার বিচ্ছেদ গুঞ্জন
ঋত্বিক-সাবার বিচ্ছেদ গুঞ্জন
পল্টন মোড় থেকে ৪ আন্দোলনকারী আটক
পল্টন মোড় থেকে ৪ আন্দোলনকারী আটক
ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পেলেন পেজেশকিয়ান
ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পেলেন পেজেশকিয়ান
আওয়ামী লীগের যৌথসভা মঙ্গলবার
আওয়ামী লীগের যৌথসভা মঙ্গলবার
ইসরায়েলে ঢুকতে পারে তুরস্ক : এরদোয়ান
ইসরায়েলে ঢুকতে পারে তুরস্ক : এরদোয়ান
আগরতলায় ২৩ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
আগরতলায় ২৩ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
বিক্ষোভে ছাত্রদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট
বিক্ষোভে ছাত্রদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট
আজ দেশে আনা হচ্ছে শাফিনের মরদেহ, কাল দাফন
আজ দেশে আনা হচ্ছে শাফিনের মরদেহ, কাল দাফন
পেনশন ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষকদের বৈঠক আজ
পেনশন ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষকদের বৈঠক আজ
কণ্ঠে আহাজারি শুনি নাই, চোখে আগুন দেখেছি : মির্জা ফখরুল
কণ্ঠে আহাজারি শুনি নাই, চোখে আগুন দেখেছি : মির্জা ফখরুল
ভোলা থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছিল এসআই কনক
ভোলা থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছিল এসআই কনক
আজ চিকিৎসক ও সমাজসেবী ডা. জুবাইদা রহমানের জন্মদিন
আজ চিকিৎসক ও সমাজসেবী ডা. জুবাইদা রহমানের জন্মদিন
বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, হার্ট ও লিভারের পরিক্ষা চলছে
বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, হার্ট ও লিভারের পরিক্ষা চলছে
লুটপাটের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা : মির্জা আব্বাস
লুটপাটের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা : মির্জা আব্বাস
দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে : জি এম কাদের
দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে : জি এম কাদের
ভৈরবে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে জন্ম সনদ সংশোধনে ঘুষ দাবীর অভিযোগ
ভৈরবে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে জন্ম সনদ সংশোধনে ঘুষ দাবীর অভিযোগ
মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকালে অবশ্যই অফিসে থাকতে হবে
মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকালে অবশ্যই অফিসে থাকতে হবে
২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের সব জেলায় বিএনপির পদযাত্রা
২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের সব জেলায় বিএনপির পদযাত্রা
জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা : ইতিহাসের পুনর্পাঠ
জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা : ইতিহাসের পুনর্পাঠ
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান : জাতীয় গৌরবের সূর্যসারণি
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান : জাতীয় গৌরবের সূর্যসারণি
হিংসাত্মক রাজনীতির দম্ভ : ভেঙে ফেলা হচ্ছে খুলনার নান্দনিক স্থাপনা 'জিয়া হল'
হিংসাত্মক রাজনীতির দম্ভ : ভেঙে ফেলা হচ্ছে খুলনার নান্দনিক স্থাপনা 'জিয়া হল'
নতুন পাঠ্যক্রমের ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে : শিক্ষামন্ত্রী
নতুন পাঠ্যক্রমের ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে : শিক্ষামন্ত্রী
গুম নিয়ে মিশেল ব্যাচেলেটের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করলো ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
গুম নিয়ে মিশেল ব্যাচেলেটের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করলো ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর নামে হাজার কোটি টাকা
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর নামে হাজার কোটি টাকা
avertisements
avertisements