avertisements
Text

আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার

ঢাকার বর্তমান তাপদাহের প্রতিকার যেখানে

প্রকাশ: ০৩:৩৬ পিএম, ২০ এপ্রিল,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:১১ পিএম, ১০ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

গত বছর ১৫ এপ্রিল ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেটি ১৯৬৫ সালের পর অর্থাৎ ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী যা রোববার ৩৯ ডিগ্রি ছাড়াবে। এই তাপদাহ স্বাভাবিকভাবেই অনেকটা নাভিশ্বাস তুলেছে নাগরিক জীবনে। গত ২০ বছরে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরও শঙ্কা হলো, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ঢাকাসহ অন্য জেলা শহরে দিন ও রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসবে। যে কারণে সব সময় গরম অনুভূত হবে। 

প্রধানত বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয়– এই তিনটি কারণে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা বেড়েছে। বৈশ্বিক কারণের মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর ফুসফুস অ্যামাজন ফরেস্ট নষ্ট হওয়া, উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে কার্বন নিঃসরণ ও ফুয়েল বার্ন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপরে পড়ছে। অন্যদিকে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান ও চীন নিয়ে গঠিত জোনে এক সময় যত প্রবহমান নদী ছিল, দিন দিন বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে তার উল্লেখযোগ্য অংশকে মেরে ফেলা হয়েছে। এগুলোর কয়েকটিতে বালু ভরাট করা হয়েছে। আবার কোথাও স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রচুর তাপ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ছে। এর সঙ্গে হিমালয়ের বরফ গলার কারণে সেখানে কঠিন পাথর দেখা যাচ্ছে। এক সময় বরফে প্রতিফলিত হয়ে যে তাপ পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে যেত, তা এই পাথরে জমা হয়ে বাতাসের মাধ্যমে আশপাশ অঞ্চলে ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং এক ধরনের তাপদাহ সৃষ্টি করছে। এসব অঞ্চলে মেগা সিটি বা শহর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাড়ছে যানবাহন ও জনসংখ্যা। যেমন ভারতে লোকসংখ্যা বেড়ে এখন চীনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের বেশি মানুষ এ অঞ্চলে বসবাস করছে। এই বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যাকে তাদের নাগরিক সুবিধা দিতে গিয়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো স্থানীয়। এক সময় বাংলাদেশে ২৫ শতাংশের বেশি সবুজায়ন থাকলেও বর্তমানে এর পরিমাণ খুবই কম। গাছপালা পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও তাপ শোষণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফলে বাতাসে অক্সিজেন ছড়িয়ে আশপাশের এলাকা শীতল রাখে। কিন্তু এখন সবুজায়ন কমে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্প কমে গিয়ে তাপমাত্রা বাড়ছে। একই কারণে বৃষ্টিপাতও কমে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের জলাধার বা পুকুরের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। জলাধার মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এটিও তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

ইউএস-ইপিএর মতে, সাধারণত প্রতি ১০ লাখ লোকের জন্য যে কোনো এলাকার তাপমাত্রা ১ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়তে পারে। আবার মানুষের শরীরের একটি নিজস্ব তাপমাত্রা রয়েছে, যাকে বলা হয় মেটাবোলিক হিটিং এবং প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এই তাপমাত্রার পরিমাণ ১০০ ওয়াট। অর্থাৎ একই স্থানে যত বেশি সংখ্যক মানুষ থাকবে, সেই স্থানের তাপমাত্রা তত বেশি হবে। ঢাকা শহরের বর্তমান জনসংখ্যা দুই কোটিরও বেশি, যেটি প্রত্যক্ষভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। 

যত্রতত্র বর্জ্য পোড়ানোর ফলে এর ভেতরে থাকা বিভিন্ন রকম দূষিত গ্যাস ও মাইক্রো প্লাস্টিক বস্তুকণা বাতাসের সঙ্গে মিশে বাতাস দূষিত করছে। বাতাসে ভাসমান এই প্লাস্টিক কণা তাপ ধরে রেখে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে তুলছে। রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় ৫২ লাখ গাড়ির এক-তৃতীয়াংশ ফিটনেসহীন। যানজটের কারণে গাড়িগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইঞ্জিন চালু করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে ইঞ্জিন থেকে প্রচণ্ড পরিমাণে তাপ নির্গত হয়, যা শহরের পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তোলে। ঢাকা শহরের পিচঢালা রাস্তা দিনের বেলা উত্তপ্ত হয় এবং রাতের প্রথম ভাগ পর্যন্ত তাপ ধারণ করে থাকে। এর পর যখন তা রিলিজ করে তখন তা নগরে তাপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। বহুতল ভবনগুলোতে অতিরিক্ত গ্লাস এবং এসির ব্যবহারও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।
সব মিলিয়ে বলতে হয়, বর্তমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রমই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রিজিলিয়ান্স সেন্টারের ‘হট সিটিজ, চিল্ড ইকোনমিজ: ইমপ্যাক্টস অব এক্সট্রিম হিট অন গ্লোবাল সিটিজ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় উচ্চ তাপমাত্রার কারণে প্রতিবছর ৬০০ কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এই ক্ষতির পরিমাণ ৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রার ফলে ঢাকার মানুষের শ্রম উৎপাদনশীলতা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাপমাত্রা না কমলে ২০৫০ সাল নাগাদ এই ক্ষতি ১০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। 

ঢাকা শহরে তাপদাহের কারণে নভেল ভাইরাস ও প্যাথোজেনগুলোর বেঁচে থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগ বাড়িয়ে তুলছে। উচ্চ তাপমাত্রায় ডিহাইড্রেশন, অ্যালার্জি, হিটক্র্যাম্প, হিটস্ট্রোক দেখা দেয়। গ্রীষ্মকাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং বর্ষাকাল অনেক দেরি করে আসছে। 

ঢাকা শহরের এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সর্বপ্রথম যে পদক্ষেপ নিতে হবে তা হলো, শহরের প্রতিটি ফাঁকা স্থানে গাছ লাগাতে হবে। সড়ক বিভাজকে শোভাবর্ধক গাছ ছাড়াও ভূমির ধরনের ভিত্তিতে বিভিন্ন রকম উপকারী বৃক্ষ যেমন ফলের গাছ, ঔষধি গাছ, কাষ্ঠল গাছও রোপণ করতে হবে। ছাদবাগান বাড়াতে হবে। দখলকৃত জলাভূমি উদ্ধার করতে হবে। সর্বোপরি ওপরে বর্ণিত কারণগুলো বিবেচনায় রেখে রাজধানী-সংক্রান্ত যাবতীয় জননীতি ঢেলে সাজাতে হবে।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার: ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

বিষয়:

লেখকের আরও লেখা

avertisements
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
মহাসড়ক অবরোধ করে ফের রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মহাসড়ক অবরোধ করে ফের রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলেও বন্ধ থাকছে যেসব সামাজিক মাধ্যম
মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলেও বন্ধ থাকছে যেসব সামাজিক মাধ্যম
আইসিসির সভা অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে
আইসিসির সভা অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন
বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট নেই : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট নেই : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
ঋত্বিক-সাবার বিচ্ছেদ গুঞ্জন
ঋত্বিক-সাবার বিচ্ছেদ গুঞ্জন
পল্টন মোড় থেকে ৪ আন্দোলনকারী আটক
পল্টন মোড় থেকে ৪ আন্দোলনকারী আটক
ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পেলেন পেজেশকিয়ান
ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পেলেন পেজেশকিয়ান
আওয়ামী লীগের যৌথসভা মঙ্গলবার
আওয়ামী লীগের যৌথসভা মঙ্গলবার
ইসরায়েলে ঢুকতে পারে তুরস্ক : এরদোয়ান
ইসরায়েলে ঢুকতে পারে তুরস্ক : এরদোয়ান
আগরতলায় ২৩ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
আগরতলায় ২৩ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
বিক্ষোভে ছাত্রদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট
বিক্ষোভে ছাত্রদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট
আজ দেশে আনা হচ্ছে শাফিনের মরদেহ, কাল দাফন
আজ দেশে আনা হচ্ছে শাফিনের মরদেহ, কাল দাফন
পেনশন ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষকদের বৈঠক আজ
পেনশন ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষকদের বৈঠক আজ
কণ্ঠে আহাজারি শুনি নাই, চোখে আগুন দেখেছি : মির্জা ফখরুল
কণ্ঠে আহাজারি শুনি নাই, চোখে আগুন দেখেছি : মির্জা ফখরুল
ভোলা থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছিল এসআই কনক
ভোলা থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছিল এসআই কনক
আজ চিকিৎসক ও সমাজসেবী ডা. জুবাইদা রহমানের জন্মদিন
আজ চিকিৎসক ও সমাজসেবী ডা. জুবাইদা রহমানের জন্মদিন
বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, হার্ট ও লিভারের পরিক্ষা চলছে
বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, হার্ট ও লিভারের পরিক্ষা চলছে
লুটপাটের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা : মির্জা আব্বাস
লুটপাটের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা : মির্জা আব্বাস
দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে : জি এম কাদের
দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে : জি এম কাদের
ভৈরবে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে জন্ম সনদ সংশোধনে ঘুষ দাবীর অভিযোগ
ভৈরবে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে জন্ম সনদ সংশোধনে ঘুষ দাবীর অভিযোগ
মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকালে অবশ্যই অফিসে থাকতে হবে
মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকালে অবশ্যই অফিসে থাকতে হবে
২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের সব জেলায় বিএনপির পদযাত্রা
২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের সব জেলায় বিএনপির পদযাত্রা
জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা : ইতিহাসের পুনর্পাঠ
জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা : ইতিহাসের পুনর্পাঠ
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান : জাতীয় গৌরবের সূর্যসারণি
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান : জাতীয় গৌরবের সূর্যসারণি
হিংসাত্মক রাজনীতির দম্ভ : ভেঙে ফেলা হচ্ছে খুলনার নান্দনিক স্থাপনা 'জিয়া হল'
হিংসাত্মক রাজনীতির দম্ভ : ভেঙে ফেলা হচ্ছে খুলনার নান্দনিক স্থাপনা 'জিয়া হল'
নতুন পাঠ্যক্রমের ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে : শিক্ষামন্ত্রী
নতুন পাঠ্যক্রমের ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে : শিক্ষামন্ত্রী
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর নামে হাজার কোটি টাকা
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর নামে হাজার কোটি টাকা
গুম নিয়ে মিশেল ব্যাচেলেটের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করলো ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
গুম নিয়ে মিশেল ব্যাচেলেটের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করলো ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
avertisements
avertisements