মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম শাইয়্যান
দুর্বল পরিকল্পনা ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনাই বেতন দিতে না পারার কারণ
প্রকাশ: ০৫:১৭ পিএম, ১৭ এপ্রিল, বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:০৮ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৪
পত্রিকাতে ০৯ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে চমকে ওঠার মতো একটি খবর প্রকাশ হয়। খবরটির শিরোনাম - ‘শিল্পাঞ্চলে ৫১ শতাংশের বেশি কারখানায় মার্চের বেতন হয়নি’। এই রিপোর্টের খবর যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে বলতে হয়, আমাদের শিল্প কারখানাগুলো ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট যারা করেন, তারা খুবই বাজে লিডার।
কয়েকটি কারণে সময়মতো বেতন দেওয়া সম্ভব হয় না। সেগুলোর মাঝে অন্যতম দুটি হচ্ছে-
১. কারখানায় তৈরি পণ্যগুলো বিক্রি কম হয়েছে।
২. ক্লায়েন্ট সময়মতো পণ্যের দাম পরিশোধ করছে না।
প্রথম কারণটি সত্যি হয়ে থাকলে-
যদি প্রথম ঘটে থাকে, অর্থাৎ কারখানায় তৈরি পণ্যগুলো বিক্রি কম হওয়ায় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে না, তাহলে জিজ্ঞাসা করতেই হয়- সেলস টার্গেট কি ঠিকমতো করা হয়নি? ফলে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য বাজারে রয়ে গেছে যা বিক্রি হয়নি?... উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, এই সেলস টার্গেট কারা করেছিলেন তা খুঁজে বের করা দরকার। কারণ, সেলস টার্গেট ঠিক করার পরে যে পণ্য তৈরি হয়েছিল তা সঠিক প্রজেকশন ছাড়া বাজারে যাওয়ার ফলেই পণ্য বিক্রি হয়নি। ভোক্তার চাহিদা কী তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল সেলস ডিপার্টমেন্ট।
অথবা এমনও হতে পারে, ‘পুশ মেথড’ প্রয়োগ করে, বাজার যাচাই না করে পণ্য তৈরি করা হয়েছিল। যার ফলে অনেক পণ্য বাজারে অবিক্রিত থেকে যায়। ফলে, শ্রমিকের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দুটি ক্ষেত্রেই উত্তর হচ্ছে, সঠিক প্ল্যানের অভাবে বাজারে অতিরিক্ত পণ্য রয়ে গেছে। যার ফলে, শ্রমিকদের বেতন পণ্য বিক্রি থেকে ওঠে আসেনি। তাই, প্রশ্ন রাখতেই হচ্ছে- সঠিক প্ল্যান করতে পারল না কেন ম্যানেজমেন্ট? কেন রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো পণ্য তৈরির আগে যাচাই করে দেখা হলো না? কেন ব্যাংক বা ফাইন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশনগুলোর সঙ্গে আগে থেকেই যোগাযোগ করে শ্রমিকদের বেতনের জন্য লোন নেওয়া হলো না?
এর একটাই উত্তর হতে পারে, তা হচ্ছে উইক ম্যানেজমেন্ট। অর্থাৎ, অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণেই এমনটা হচ্ছে।
দ্বিতীয় কারণটি সত্যি হয়ে থাকলে-
দ্বিতীয় টি অর্থাৎ ক্লায়েন্ট সময়মতো পণ্যের দাম পরিশোধ করছে না এমনও হয়ে থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বাকিতে পণ্য বিক্রি করে। আবার, অনেক সময়ে দেখা যায় বাকিতে নেওয়া এই পণ্যগুলো সঠিক সময়ে বিক্রি হয় না। ফলে, ক্লায়েন্ট বা কাস্টমার সময়মতো পণ্যের দাম পরিশোধ করতে পারেন না। এ ছাড়াও, আমাদের শিল্প কারখানাগুলো বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে অর্ডার বাতিলের মতো সমস্যায় পড়ে যায়। ফলে পণ্য যারা তৈরি করেন, অর্থাৎ, শ্রমিকদের বেতন সময় মতো দেওয়া সম্ভব হয় না।
এক্ষেত্রে বলতে হয়, ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করেন যে ম্যানেজমেন্ট, তারা ঠিকমতো ক্লায়েন্টদের সঙ্গে চুক্তি করেন না। তাদের এই ব্যর্থতার ফলে, পণ্য সময়মতো বিক্রি হয় না। অনেক সময়ে, প্রডাকশন মূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়। ফলে, শ্রমিকদের পারিশ্রমিক সময়মতো দিতে ব্যর্থ হোন মালিকপক্ষ।
এসবের কারণও দুর্বল ব্যবস্থাপনা। যার ফলে, সঠিক পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হোন হায়ার ম্যানেজমেন্ট।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের দেশের ব্যবস্থাপকরা হয় পরিকল্পনায় কাঁচা, না হয় তারা পরিকল্পনার ধার ধারেন না। দুটি ক্ষেত্রেই বলতে হবে, ব্যবসায়িক ও মানবিক মনমানসিকতার বিচারে আমাদের এসব শিল্প কারাখানার মালিকপক্ষরা অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। সবাই হয়তো এরকম নন। কিছু কিছু শিল্প কারাখানার মালিকরা হয়তো ব্যতিক্রম। যারা ব্যতিক্রম, অর্থাৎ যারা সময়মতো শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করে যাচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে দুর্বল শিল্প মালিকপক্ষরা কী কিছু শিখতে পারবেন না?
যত তাড়াতাড়ি এইসব দুর্বল শিল্প কারখানা মালিকপক্ষ শিখতে পারবেন, ততটাই দেশের জন্য মঙ্গল। সর্বশেষে, সব শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দেওয়ার দাবি জানিয়ে দুর্বল শিল্প কারখানা মালিকপক্ষকে যথাযথ ট্রেনিং নিয়ে ব্যবসায় হাত দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম শাইয়্যান : আইটি উদ্যোক্তা