

সন্তানদের আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৪ পিএম, ১২ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৩৭ এএম, ২০ আগস্ট,
বুধবার,২০২৫

পবিত্র রমজান ও ঈদে সন্তানদের আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন। আমাদের সঙ্গে অবিচার করবেন না, এমন আকুতি করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের স্বজনরা। গত ২৪ মার্চ শিবির সন্দেহে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে রাজধানীর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তিন দিনের রিমান্ড শেষে বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন ২৪ মার্চ গ্রেফতার হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থীর স্বজনরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মেহেদীর মা নুরজাহান বেগম।
তিনি বলেন, গত ২৪ মার্চ ভোররাতে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার একটি মেস থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীসহ মোট ১২ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যায় কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি টিম। আমরা গ্রেফতার হওয়া সেই শিক্ষার্থীদের পরিবার। আটকের পর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। পরে চারদিকে জানাজানি হলে পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে দেয়া একটি মামলায় ১২ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার দেখায়। এরপর আদালতের নির্দেশে তিনদিনের রিমান্ড শেষে এই শিক্ষার্থীদের জেলে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এইসব শিক্ষার্থী দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে আয়োজিত এক মিছিলে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেøাগান দেয় এবং এই সংক্রান্ত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছেন এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর কাজে লিপ্ত ছিল।
এদিকে এই ঘটনার পর বিভিন্ন স্থানে সরকারবিরোধী সেøাগান দিয়ে জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অজুহাতে ১১ শিক্ষার্থীকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। শুধু তাই নয়, এরপর তাদের আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানার বিস্ফোরক আইনের আরেকটি মামলায়। অথচ এই সময়ে করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমাদের সন্তানরা গ্রামের বাসায় অবস্থান করছিলেন। গ্রেফতার হওয়া ১২ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারজন চলতি বছরের মার্চে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। গত ৮ মার্চ ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে যুক্ত হতে এইসব শিক্ষার্থীর কেউ কেউ জীবনে প্রথম ঢাকায় এসেছেন। তাহলে এইসব শিক্ষার্থীরা ঢাকায় না এসেও কিভাবে ঢাকায় ঘটা একটা মামলার আসামি হন? ২০২১ সালে আমাদের অনেক সন্তান ঢাকায় ছিলেন না। তারা ঢাকায় এসেছেন মাত্র ২০ দিন। তাহলে কেন এক বছর আগের মামলার তাদের যুক্ত করা হলো?
তিনি আরও বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য কোনো আবাসিক হল নেই। যার কারণে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ¦বর্তী এলাকায় ভাড়া মেসে থাকছেন। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ যদি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সন্তানদের জন্য হলের ব্যবস্থা করতে পারতো তাহলে আমাদের এই দিন দেখতে হতো না। অথচ দেখেন যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় এইসব শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানোর কথা সেখানে তারা বিমাতাসুলভ আচরণ করে ১১ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আচরণে খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমরা জানতে চাই কোন আইনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে? পুলিশের মিথ্যা মামলা আমলে নিয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করে তাহলে শিক্ষার্থীরা কার কাছে যাবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আচরণের কারণে নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হবে। মেহেদীর মা বলেন, আমরা আশা করবো সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় বহিষ্কার আদেশ বাতিল করবেন। আমরা খুবই চিন্তায় আছি। এই পবিত্র রমজান ও ঈদে আমাদের সন্তানদের আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন। আমাদের সঙ্গে অবিচার করবেন না।