বিধিনিষেধ : বাজারে কারও মুখে মাস্ক নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৫ পিএম, ১৩ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:১৩ পিএম, ৫ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৫
রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা মধ্যবয়সী বশির হোসেন বাজার করতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আসেন কারওয়ান বাজারের পাইকারি মার্কেটে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মানিব্যাগ, বাজারের ব্যাগসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি মাস্ক নেন। কারণ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি ১১ দফা বিধিনিষেধের নির্দেশনা আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বিধিনিষেধের মধ্যে ঘরে-বাইরে সর্বত্র মুখে মাস্ক পরিধান করার নির্দেশনা রয়েছে। মাস্ক না পরলে আর্থিক জরিমানা এমনকি জেলও হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সাত সকালে কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে প্রবেশ করে বশির হোসেন অবাক। শত শত ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি ও কলরবে গোটা বাজার মুখরিত। কিন্তু হাতে গোনা দু’চারজন ছাড়া কারও মুখে নেই মাস্ক। ক্রেতাদের মধ্যে দু’চারজন যারা মাস্ক পরে এসেছেন অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এ স্থানটিতে তারা বেমানান! বয়োবৃদ্ধ অনেক বিক্রেতাকেও মাস্ক পরিধান না করেই জনসমাগমে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তাদের অনেকেই মাস্ক পরিধানের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন-ই না। কেউবা জানলেও মাস্ক পরা প্রয়োজন বলে মনে করছেন না। অধিক বয়সী কয়েকজন দোকানির সঙ্গে আলাপকালে জানা গেলো তারা করোনার টিকা গ্রহণের জন্য এখনও নিবন্ধনই করেননি। আতাউর রহমান নামের এক শুঁটকি বিক্রেতাকে মাস্ক কেন পরেননি জিজ্ঞেস করতেই তড়িঘড়ি করে পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটি মাস্ক বের করে মুখে পরেন।
তিনি জানান, সারাদিন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকায় করোনার টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করা হয়ে ওঠেনি। তবে খুব শিগগির টিকা নিবেন বলে জানান। শাহাদাত হোসেন নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, সবজি বিক্রির জন্য সারাদিন ক্রেতাদের সঙ্গে প্রচুর কথা বলতে হয়। মাস্ক পরলে অনেক সময় কথা বোঝা যায় না। তাই মাস্ক পরেননি বলে জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশ ঊর্ধ্বমুখী। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় করোনা রোগী শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে থাকলেও ১ জানুয়ারির পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে তা ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটির পরামর্শ অনুসারে ১১ দফার বিধিনিষেধের নির্দেশনা জারি করে সরকার।
নির্দেশনাগুলো হলো-
১. দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।
৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকার সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
৪. ১২ বছরের বেশি বয়সী সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু চালক থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৬. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সবপ্রকার যানের চালক ও সহকারীকে আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।
৭. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরার বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তারা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।
১০. উন্মুক্ত স্থানে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ-পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
১১. কোনো এলাকায় ক্ষেত্রবিশেষ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।




