৪০ দিনের কর্মসূচিতে মাটি কেটে মজুরি পাননি ৩৫ শ্রমিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩২ পিএম, ২৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:১১ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ১নং রসুলপুর ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পে কাজ করেও মজুরি পাননি ৩৫ জন মাটিকাটা শ্রমিক। ইউপি চেয়ারম্যান, ইউএনও অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের জেলা-উপজেলার অফিসে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও মেলেনি কোনো সমাধান। দায় নিচ্ছে না কোনো অফিসও। এ অবস্থায় গরিবের শ্রমের টাকা কোথায় গেল তা তদন্ত করার দাবি শ্রমিকদের।
জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সাদুল্লাপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পে কাজ করেন ২২৪ জন সুবিধাভোগী নারী-পুরুষ। এর মধ্যে প্রথম দফায় ১২ জন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ২৩ জনসহ মোট ৩৫ জন শ্রমিক মজুরি পাননি। বেকার, অদক্ষ, ভূমিহীন ও স্বল্প আয়ের এসব শ্রমিক কাজ করেছেন সপ্তাহের পাঁচ দিন। প্রথম দফায় তারা ১২ দিন কাজ করেন এবং দ্বিতীয় দফায় কাজ করেন ৪০ দিন। এর মধ্যে ১২ জন শ্রমিকের প্রত্যেকেই এক (প্রথম) দফার কাজের মজুরি পাবেন ৪ হাজার ৮০০ টাকা। আর দুই দফায় বঞ্চিত হওয়া ২৩ জন শ্রমিকের প্রত্যেকেই পাবেন ২০ হাজার ৮০০ টাকা করে। এদের মধ্যে আবার যারা দলনেতা রয়েছেন তাদের প্রতিদিন ৫০ টাকা মজুরি বেশি হিসেবে তারা প্রত্যেকেই পাবেন ২৩ হাজার ৪০০ টাকা করে। সে অনুযায়ী মজুরি বঞ্চিত এসব শ্রমিক পাবেন প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। মজুরি বঞ্চিত শ্রমিকদের মধ্যে একজন সিরাজুল ইসলাম। যার সুবিধাভোগী নম্বর ১০৯। তিনি ২নং ওয়ার্ড প্রকল্পের দলনেতা। সিরাজুল ইসলাম প্রথম ও দ্বিতীয় দফা মিলে ২৩ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
সিরাজুল বলেন, আমার ওয়ার্ডে আমিসহ ছয়জন শ্রমিক মজুরি পাইনি। এ জন্য আমরা চেয়ারম্যানের কাছে, উপজেলায় পিআইওর কাছে, ইউএনওর কাছে, গাইবান্ধা অফিসে কয়েকবার করে গেছি। কিন্তু আমরা আমাদের শ্রমের মজুরি পাইনি। এর কারণ আমরা জানি না। আমরা রোদে পুড়ে কাজ করেছি, টাকার জন্য অনেক হয়রানি হয়েছি। কিন্তু আজও টাকা পাইনি।
পিআইও সাহেব আমাদেরকে বলেছেন, ‘আপনাদের টিকিট আছে, কিন্তু ট্রেন চলে গেছে’। এর মানে আমি বুঝিনি। এই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নারী শ্রমিক মাজেদা বেগম। তিনিও দুই দফার ২০ হাজার ৮০০ টাকা পাননি।
মাজেদা বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অভাবের কারণে মাটিকাটার কাজ করছি। ধারদেনা করে খাইছি। কিন্তু কেন টাকা পেলাম না জানি না। কেউ বলেনি কেন টাকা পাব না। পিআইও সাহেব আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা আমাদের শ্রমের দাম চাই। অনেক কষ্ট করে মাটির বোঝা মাথায় নিয়ে আমরা কাজ করছি।
রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, আমিও এই টাকার জন্য তাদেরকে নিয়ে কয়েকবার উপজেলায় গিয়েছিলাম। আসলে তারা কেন টাকা পেল না, এটা বের করা দরকার। আমিও চাই তারা টাকা পাক। আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যায়নও দিয়েছিলাম, তবুও ৩৫ জন শ্রমিক টাকা পাননি। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রেজাউল করিম ইজিপিপির শ্রমিকরা টাকা না পাওয়ার বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকসানা বেগম বলেন, প্রথমে তাদের ভুলের কারণে টাকা পাননি। পরে সংশোধন করে দেওয়ার পর কিছু কিছু টাকা পেয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট ডাচবাংলার মাধ্যমে করা হয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়ের বিষয়, আমরা বেশি কিছু বলতে পারব না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, আসলে তারা কেন টাকা পেলেন না বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।