ঢাকায় গাউছিয়ার মতো বিপণিবিতানসহ ২ হাজার ৬০০ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২১ পিএম, ৪ মার্চ,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৭:৫৩ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ঢাকার গাউছিয়া মার্কেটটি নারীদের কাছে জনপ্রিয় বিপণিবিতান। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেখানে কেনাকাটা করতে যান। অথচ তাঁরা জানেন না বিপণিবিতানটি আগুনের অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে।
গাউছিয়ার উল্টো দিকে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ)। গাউছিয়া ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটকে ২০১৯ সালে অগ্নিনিরাপত্তার দিক দিয়ে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে একাধিকবার নোটিশ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে গত বছরের এপ্রিলে আগুন লাগে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, গাউছিয়ায় আগুন লাগলে ভেতর থেকে মানুষের বের হওয়া কঠিন হবে। ফলে হতাহতের বড় আশঙ্কা রয়েছে।
গাউছিয়ার মতো রাজধানীর ২ হাজার ৬০৩টি ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের হালনাগাদ তথ্য বলছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ১০৬টি বিপণিবিতান। তালিকায় রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ভবন।
২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের এই তালিকা তৈরি করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ঢাকার সব ভবন পরিদর্শন করতে পারেনি। ফলে রাজধানীতে মোট কত ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, তা জানা সম্ভব নয়। পরিদর্শনে ফায়ার সার্ভিস অগ্নিঝুঁকির দিক দিয়ে দুটি শ্রেণিতে ভবনগুলোকে ভাগ করে—ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ। সংস্থাটির হিসাবে, ২ হাজার ৬০৩টি ভবনের মধ্যে কটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ, তা তাৎক্ষণিকভাবে হিসাব করে জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস ২০২৩ সালে ৫৮টি বিপণিবিতান পরিদর্শন করে। সংস্থাটি বলছে, সবগুলোতেই কমবেশি ঝুঁকি পাওয়া গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাওয়া গেছে ৩৫টি, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ পাওয়া গেছে ১৪টি এবং অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাওয়া গেছে ৯টি বিপণিবিতান। তার মধ্যে একটি গাউছিয়া।
২০২৩ সালের এপ্রিলে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিস রাজধানীর বিপণিবিতানগুলো নতুন করে পরিদর্শন শুরু করে। কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা গাউছিয়া গিয়ে দেখেন অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার চার বছর পরও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরে তাঁরা আবারও চিঠি দেন, সতর্ক করেন। কিন্তু এক বছরে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গাউছিয়া মার্কেট পরিদর্শনে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে আগুন লাগলে তা নেভানোর জন্য পানি পাওয়া কঠিন হবে। কারণ, আশপাশে পানির উৎস নেই। ভবনের সামনের দিক ছাড়া অন্য তিন দিক দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করার মতো জায়গা নেই। ভবনটিতে প্রতিটি দোকানের সামনে মালামাল রাখা হয়। সিঁড়িতেও বসানো হয়েছে দোকান। বৈদ্যুতিক তার ও মিটারগুলো অরক্ষিত।
ফায়ার সার্ভিস গত বছরের যে সময়ে গাউছিয়া মার্কেট পরিদর্শন করেছে, তখন বিপণিবিতানটির দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ছিলেন রফিকুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।
বিপণিবিতানটির দোকানমালিক সমিতির বর্তমান সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদও বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, কমিটি বিষয়টি বলতে পারবে। তিনি কিছু জানেন না।
গাউছিয়ায় তুলনামূলক কম দামে মেয়েদের পোশাক ও পোশাক তৈরির উপকরণ পাওয়া যায়। সেখানে নিয়মিত কেনাকাটা করতে যান পোশাক বিপণনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মী তাকিয়া সুলতানা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিপণিবিতানটির সামনে বা কোথাও তিনি অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্কবার্তা দেখেননি। দেখলে অন্য কোথাও গিয়ে কেনাকাটার চিন্তা করতেন।