নির্বাচন নিয়ে মার্কিন কাউন্সেলর বাংলাদেশ সফর ১৪ ফেব্রুয়ারি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫:৪৭ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৪৪ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক ২৪ ঘন্টার সফরে ঢাকা আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের কাউন্সেলর, আন্ডার সেক্রেটারি ডেরেক শোলে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর (সেক্রেটারি অব স্টেট) বিশেষ কূটনৈতিক অ্যাসাইনমেন্টগুলো পালন করে থাকেন ওই দফতরের অত্যন্ত প্রভাবশালী এই শীর্ষ কর্মকর্তা। সম্প্রতি গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কারা ম্যাকডোনাল্ডের ঢাকা সফর করার কথা ছিল। একেবারে শেষ মূহুর্তে তার না আসার খবরে খুব স্বাভাবিকভাবেই ডেরেক শোলে'র বাংলাদেশ সফরের তাৎপর্য আরো বেড়ে গেছে বলেই সচেতন মহলের উপলব্ধি।
বাংলাদেশে এসে তিনি কি কি বলবেন, কার কার সাথে বৈঠক করবেন এসব নিয়ে কূটনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ। এমতাবস্থায় সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে চ্যানেল আই'তে প্রচারিত জনপ্রিয় টকশো দতৃতীয় মাত্রা’য় অনলাইনে হাজির হয়েছেন ডেরেক শোলে। ইদানীং বাংলাদেশে যে (যুক্তরাষ্ট্রের) অনেক উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকের সফর লক্ষ্য করা যাচ্ছে, শুরুতেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জিল্লুর রহমান সে প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন। নিজের সফরকে দুই দেশের তরফে আগের সফরগুলোর 'ফলো আপ' সফর উল্লেখ করে ডেরেক শোলে বলেন, "দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক, এই অঞ্চল এবং সারা বিশ্বে দুই দেশের অংশীদারিত্বকে যুক্তরাষ্ট্র যে কতোটা গুরুত্ব দেয়, এই সফরগুলো তারই প্রমাণ। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। আমার সফরে এই সবগুলো ইস্যু নিয়েই ফলো আপ করবো। এছাড়া দুই দেশের অভিন্ন সমস্যা এবং সেসবের অভিন্ন সমাধান নিয়েও আলোচনা থাকবে।" মিয়ানমারের সংঘাত এবং রোহিঙ্গা গণহত্যা কি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অগ্রাধিকারে থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে ডেরেক শোলে বলেন, "হ্যা, এটা অগ্রাধিকার ছিল এবং অব্যাহতভাবে থাকবে।"
বাংলাদেশে নিজ সফরের অন্যতম কারণ রোহিঙ্গা ইস্যু এবং মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে- এমন মন্তব্য করে সেজন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ডেরেক শোলে জানান, বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য যা যা করা সম্ভব যুক্তরাষ্ট্র তাই করছে। বাংলাদেশের উপর থেকে শরণার্থী সংকটের চাপ কমানোর চেষ্টা করছে। মানবিক প্রয়োজনে সাহায্য করছে। কিছু শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেয়ারও প্রচেষ্টা রয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো বাড়াতে চাইছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলোর বাইরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজ চোখে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে দেখছে। সঞ্চালকের এমন কথার প্রেক্ষিতে ডেরেক শোলে বাংলাদেশের জনসংখ্যার আকার, এ দেশের গতিশীল অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে জানান, এসব কারণে বাংলাদেশে অনেক উচ্চ পর্যায়ের অতিথিদের আগমন দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব কারণেই (যুক্তরাষ্ট্রের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বলেছেন (বাংলাদেশের সাথে সাম্প্রতিক) আলোচনাগুলো চালিয়ে নিতে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ৫১ বছরের যাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করে ডেরেক শোলে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যাত্রায় বাংলাদেশের সাথে ছিল। সামনের দিনগুলোতে আমরা এই সম্পর্ক আরো বড় পরিসরে দেখতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে রয়েছে বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা।
এ বিষয়ে ডেরেক শোলে বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রও নিখুঁত নয়। কিন্তু, আমরা সেটা আরো ভালো করার চেষ্টায় লিপ্ত এবং আমরা নিজেদের ভুলগুলোকে স্বীকার করি। তাই, আমরা যখন (বাংলাদেশের) গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশীল সমাজের সংগঠিত হওয়া এবং মুক্তভাবে কথা বলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করি তখন সেটা নম্র হয়ে, আমাদের অংশীদারিত্ব এবং বন্ধুত্বের চেতনা থেকেই করি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আরো উন্নত এবং শক্তিশালী করতে আমরা দেশটির সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই।
কারণ, একবিংশ শতাব্দীতে কোনো দেশকে সফল হতে হলে তাকে গণতান্ত্রিক হতে হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।" বাংলাদেশের মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। চলতি বছর বাংলাদেশের নির্বাচনী বছর। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা ব্যক্ত করতে গিয়ে ডেরেক শোলে জানান, দেশটির আশা বাংলাদেশের যে কোনো নির্বাচনই অবাধ এবং সুষ্ঠু হবে। বিরোধী দলগুলো নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে সংগঠিত হতে পারবে।
তিনি বলেন, আমি জানি, গত বছর বাংলাদেশে অনেক বড় বড় গণসমাবেশ হয়েছে যেগুলো শান্তিপূর্ণ ছিল। বিরোধী দলের মুক্ত এবং নিরাপদভাবে মত প্রকাশ করতে পারাটা ভালো দিক। আমরা এগুলোর কথাই বলছি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের দ্বারা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য এসবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অংশীদারিত্ব এবং বন্ধুত্বের চেতনার জায়গা থেকেই এই ইস্যুগুলো তুলে ধরছি। এসব কারণেই 'গণতন্ত্র সম্মেলন' এর মতো আয়োজনগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গণতন্ত্র একের কাছ থেকে অন্যের শেখার বিষয়।