আইনসম্মতভাবে আড়ি পাতা চালুর উদ্যোগ সংবিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্র তৈরি করবে : এইচআরএফবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৩ পিএম, ১৬ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৫৩ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধে ‘আইনসম্মতভাবে’ আড়ি পাতার ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। তারা বলেছে, এ ধরনের উদ্যোগ জনমনে ব্যাপক উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। একই সঙ্গে এ উদ্যোগ সংবিধান ও নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নামান্তর। গত বৃহস্পতিবার সংসদের অধিবেশনে ইন্টিগ্রেটেড লফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম (আইনসম্মতভাবে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট মাধ্যমে যোগাযোগে আড়ি পাতার ব্যবস্থা) চালুর উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে উদ্বেগের কথা জানায় এইচআরএফবি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংবিধানে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ও যোগাযোগের গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। সরকারের এমন উদ্যোগ তা গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এ ছাড়া ‘আড়ি পাতা’ ও ‘নজরদারি’ সংক্রান্ত বিদ্যমান নানাবিধ শঙ্কা ও ভীতি মানুষের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রবণতা বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি মুক্তবুদ্ধির চর্চা, গঠনমূলক সমালোচনা তথা গণতন্ত্রের চর্চার ক্ষেত্র আরও সংকুচিত করে ফেলবে।
এইচআরএফবি বলেছে, এমন উদ্যোগ নেয়ার সময় রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষার বিভিন্ন যুক্তি দেখানো হলেও পরে তা নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, বাক্স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশ, মুক্তচিন্তার চর্চা ও প্রকাশ বা সমবেত হওয়ার অধিকার লঙ্ঘনসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে চরমভাবে অপব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ ও ‘সরকারবিরোধী’ কর্মকান্ডকে একই পাল্লায় মাপা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার একটি প্রবণতা লক্ষ করা গেছে, যা থেকে মনে হয় এ ধরনের ‘আড়ি পাতা’র চর্চা ইতিমধ্যে রয়েছে। বিবৃতিতে ব্যক্তিগত তথ্য ও যোগাযোগের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন করে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে এইচআরএফবি। একই সঙ্গে আড়ি পাতার ব্যবস্থা চালুসংক্রান্ত যেকোনো উদ্যোগ সংবিধান, মানবাধিকারের মূলনীতি এবং নজরদারিসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে নেয়ার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্বেগ : ‘আইনসম্মতভাবে’ আড়ি পাতার ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগকে ‘সাংবিধানিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন’ বলেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল সোমবার জোটের এক সভায় এ উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন জোটের নেতারা। সভার প্রস্তাবে বলা হয়, সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বেআইনিভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির ফোনালাপ ফাঁস করার মাধ্যমে ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে আসছিল। এটি এখন আইনি রূপ দিতে যাচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতকে দমনের স্বার্থেই সরকার এ ধরনের অগণতান্ত্রিক অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। স্পিয়ারহেড নামের এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আশপাশের প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে থাকা এনক্রিপ্টেড হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা, ফেসবুক চ্যাট, যোগাযোগের তালিকা, কল ও টেক্সট মেসেজ সংগ্রহ করা যায় গতকাল রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ে এ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। সভায় বক্তব্য দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নজরুল ইসলাম, বাসদ (মার্ক্সবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, মানস নন্দী, শহীদুল ইসলাম সবুজ ও রুবেল সিকদার।