বাবাকে শেষ দেখা দেখতে পেলেন না ছাত্রদল নেতা রনি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৮ এএম, ১৫ জানুয়ারী,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:৪৬ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম রনি। গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে আছেন তিনি। শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার বাবা মো. মহসিন মোল্লা ইন্তেকাল করেন। পরে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে মানবিক দিক বিবেচনায় প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা হয়।
গতকাল শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশেষ প্রটোকল সুবিধা না পাওয়ায় রনির প্যারোলে মুক্তি মিলছে না।
রনির আইনজীবী ব্যারিস্টার সালেহ আকরাম সম্রাট জানান, শনিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে কাশিমপুর কারাগারে থাকা অবস্থায় তার বাবার মৃত্যুর খবর আসে। খবর পেয়ে আমরা কাশিমপুর কারাগারে যোগাযোগ করলে শনিবার সরকারি ছুটি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে মানবিক দিক বিবেচনায় প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা হয়। সারাদিন পর অবশেষে বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশেষ প্রটোকল সুবিধা না পাওয়ায় রনির প্যারোলে মুক্তি মিলছে না।’
রনির বড় ভাই জহিরুল ইসলাম জনি বলেন, শুক্রবার রাতে বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থা গুরুতর হলে তাকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে আনা হয়। আনতে আনতে প্রায় রাত আড়াইটা বেজে যায়। এরপর ভোর আনুমানিক ৬টায় মারা যান বাবা। বাবার মুত্যুর খবরটি সঙ্গে সঙ্গেই কাশিমপুর কারাগারে রনিকে জানানো হয়।
কাঁদতে কাঁদতে জনি বলেন, আমার বাবা তার যে ছোট ছেলে রনিকে নিয়ে বেশি টেনশন করতেন। সেই ছোট ছেলেই (রনি) বাবাকে শেষ দেখা দেখতে পেলেন না।
রনিকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে জনি বলেন, রনির জন্যই হার্ট অ্যাটাক করেছে আমার বাবা। উনি খুব টেনশন করতেন তাকে নিয়ে। হঠাৎ বাবা মারা গেলেন, ছোট ভাই জেলে এখন আমার মাও খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখানে তো আমাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দেওয়ার মানুষ আছে, আর জেলে রনিকে তো শান্তনা দেওয়ারও কেউ নেই।
রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় তাকে নয়াপল্টন থেকে গ্রেফতার হয় রনি।
ছাত্রদলের নিন্দা ও প্রতিবাদ: এদিকে বাবার মৃত্যুর পর রনিকে প্যারোলে মুক্তি না দেওয়ায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে তারা বলেন, রনি অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের কারাগারে অন্যায়ভাবে বন্দি। যথাযথ আইনানুসারে পিতার দাফনের জন্য প্যারোলের আবেদন করা সত্ত্বেও তাকে মুক্তি দেয়নি। এই কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট সরকার এবং আজ্ঞাবহ অমানবিক প্রশাসন আব্দুর রহিম রনিকে তার পিতার দাফনসহ শেষ বিদায়ে অংশ নিতে না দেয়ার মাধ্যমে চরম মানবাধিকার বিরোধী চরিত্রেরই পুনরাবৃত্তি করেছে।
বিবৃতিতে ছাত্রদলের শীর্ষ দুই নেতা রনির বাবা মো. মহসিন মোল্লার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানান।