মানবাধিকার রক্ষায় সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান এইচআরএসএসের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৫৯ পিএম, ১ জানুয়ারী,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:২৫ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। এ অবস্থায় মানবাধিকার রক্ষায় সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। শনিবার এইচআরএসএস বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২২ এর বার্ষিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক অনেক সাফল্য অর্জন করলেও স্বাধীনতার পর গত ৫১ বছরেও আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সভা সমাবেশ করার অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা, নারীর অধিকারসহ সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।
এইচআরএসএস জানায়, ২০২২ সালের বার্ষিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ বছরেও শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশে বাধা দেয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গায়েবি মামলা, রাজনৈতিক গ্রেফতার, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-, প্রশাসনের হেফাজতে নির্যাতন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইনবহির্ভূত আচরণ, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গুম করার অভিযোগ, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা অব্যাহত আছে।
এছাড়াও বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, গায়েবি মামলা, হামলা, গণগ্রেফতার, পরিবহন ধর্মঘট ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে জানিয়ে এইচআরএসএস জানায়, বিএনপির ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের আগে ডিবি পুলিশের একটি দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গভীর রাতে তাদের বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে আনে এবং পরবর্তীতে একটি মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়, যা উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনে মত প্রকাশের ওপর হস্তক্ষেপ বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাসমূহের অপ্রয়োগ, মামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে উঠে আসে। একটি পরিসংখানে দেখা গেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার প্রায় ৮১% মামলা সরকার ও সরকার দলীয় লোকজন দ্বারা হয়েছে বলে জানায় এইচআরএসএস।
এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক সহিংসতা, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যা ও নির্যাতন এবং ব্যাপক নির্বাচনী সহিংসতার মধ্য দিয়ে দেশে বিরাজমান মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উদ্বেগের চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছেছে।
২০২২ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএসের তথ্য অনুসন্ধান ইউনিট ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে বার্ষিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া ২০২২ সালে এইচআরএসএসে সংগৃহীত তথ্য ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১২৮৪ জন নারী, যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ৭৩২ জন (৫৭%) ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪২ জনকে ও ধর্ষণের শিকার ৮ জন আত্মহত্যা করেছেন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ বছর ৭৫৮টি 'রাজনৈতিক সহিংসতার' ঘটনায় নিহত হয়েছে ৯২ জন, আহত হয়েছে ৭৭৮৯ জন এবং গুলিবিদ্ধ হয়েছে ১২৩ জন, যার অধিকাংশ ঘটনায় সরকার দলীয় কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। তাছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির দ্বারা বিরোধীদলের ৩০৩৮ জন রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতারের শিকার হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক ৫১টি হামলার ঘটনায় শারীরিক নির্যাতন ও গুলি করে ২৩ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে ১৯ জনকে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে ২৮ জন। এছাড়াও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি কর্তৃক মর্টার সেল হামলায় ১ জন নিহত ও আহত হয় ৬ জন। অনতিবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে বলে মনে করে এইচআরএসএস।