বিএনপির ১০ বিভাগীয় সফল সমাবেশ বাংলাদেশের জনগণকে ঝাঁকুনি দিয়েছে
আলী মামুদ, দিনকাল
প্রকাশ: ০৫:২৯ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫৪ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিদায়ী ২০২২ ইংরেজি বছরে রাজধানী ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় পর্যায়ের সফল সমাবেশের মধ্যদিয়ে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সারাদেশকে একটি ঝাঁকুনি দিয়েছে-যাতে মানুষের মধ্যে দাবি আদায়ের মহাঐকমত্য প্রকাশ পেয়েছে। শত বাধা- বিপত্তি উপেক্ষা করে কোটি মানুষের এই ঐকমত্যে বর্তমান জাতীয় সংসদ বাতিল করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করাসহ ১০ দফা দাবি পূরণের দাবি জানানো হয়েছে। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নেতাকর্মী নিহতের প্রতিবাদে এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সফল সমাবেশ করেছে বিএনপি। রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশের মধ্যদিয়ে আড়াই মাসের কর্মসূচি শেষ করে নতুন কর্মসূচি দেয় বিএনপি। সমুদ্র বন্দর নগরী চট্টগ্রামের শুরু হওয়া গুচ্ছ-সমাবেশ শেষে বিএনপির দাবিসমূহ সারাদেশের জনগণের মধ্য উত্থাপিত দাবিগুলো এখন মানুষের মুখে মুখে। ১০টি সমাবেশে প্রায় ২ কোটি মানুষের উপস্থিতি ঘটেছিল। বিএনপিসহ জোট ও সমমনা দলসমূহ এই দাবিসমূহের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ ব্যর্থ করতে সরকারি পক্ষের চেষ্টা-চরিত্রের শেষ ছিল না। এই টার্গেট সামনে রেখে বিএনপির ঢাকার নয়াপল্টনস্থ প্রধান কার্যালয়ে সরকারি ও সরকার দলীয় লোকজনের ন্যক্কারজনক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ন্যক্কারজনক ইতিহাসের সৃষ্টি করে। এই ঘটনার কারণে বিএনপি কার্যালয় ৪ দিন বন্ধ থাকে। বিএনপি ও সমমনা দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
এর আগে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সম্মেলনের স্থান নিয়ে সরকারের টানা-হেঁচড়া চলেছিল। বিএনপির নয়াপল্টনস্থ অফিসের সামনে এই সমাবেশ করতে দেয়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে। অথচ আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ অফিসের সামনের রাস্তাটি সারাবছরই বন্ধ থাকে। বিএনপির প্রতি এই ন্যক্কারজনক রাজনৈতিক হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দল।
শেষ পর্যন্ত রাজধানীর পূর্ব উপকণ্ঠ গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো সেখানে একদিন আগেই জনসাধারণের ভিড় মহাসমাবেশে রূপ নেয়। ওই মাঠের চারদিক অনেক দূর পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এই সমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি দেয়া হয়Ñ যা সারাদেশের সমাবেশগুলোর প্রতিধ্বনি। এদিকে সমমনা দলগুলোর পক্ষ থেকে এই দশ দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এই পর্যায়ে বিবৃতিদাতারা হলেনÑ মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (চেয়ারম্যান কল্যাণ পার্টি), ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (চেয়ারম্যান এনপিপি), অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা (চেয়ারম্যান বাংলাদেশ জাতীয় দল), খন্দকার লুৎফর রহমান (সভাপতি জাগপা), শাহাদাত হোসেন সেলিম (মহাসচিব বাংলাদেশ এলডিপি), মওলানা আব্দুর রকিব (চেয়ারম্যান ইসলামী ঐক্যজোট), ক্বারি মোহাম্মদ আবু তাহের (চেয়ারম্যান এনডিপি), অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম (চেয়ারম্যান ন্যাপ ভাসানী) প্রমুখ। নাগরিক ঐক্য, সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন বাম দলের পক্ষ থেকে শাসক দলের এই প্রতিহিংসার নিন্দা করা হয়। বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপনের মতে, আলোচ্য ১০ সমাবেশে প্রায় ২ কোটি মানুষের সম্মিলন ঘটে ছিল-যাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যাও অনেক বেশি। সরকার ও সরকারি দলের লোকজনের উসকানি সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণভাবে এই গুচ্ছ সমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে গত শুক্রবার বিকালে নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণমিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণ আছে কি নাই আপনারা এসে আজকের গণমিছিল দেখে যান। আপনারা যে বলেছেন, পাড়ায় পাড়ায় আপনারা পাহারা দেবেন। আজকে আপনারা পাহারা দিয়েছেন কিন্তু এদেশের জনগণকে আপনারা ঘরে রাখতে পারেন নাই। অতএব আমরা বলি, আগামী দিনে এদেশের জনগণ রাস্তায় নেমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে আপনাদের বিদায় করবেÑ তার নমুনা আজকের এই গণমিছিল দেখে যান।’
নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ১০ দফার যুগপৎ আন্দোলনের এই গণমিছিল হয়। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধরী এ্যানি, ফজলুল হক মিলন, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবির কথা গণমিছিলের ব্যানারে লেখা ছিল।
বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে গণমিছিল শুরু হয়ে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, মৌচাক হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়। দুপুরে জুমার নামাজের আগেই নয়াপল্টনে দীর্ঘ সড়ক কমলাপুর, মতিঝিল, ফকিরেরপুল মোড় থেকে কাকরাইলের মসজিদের মোড় পর্যন্ত মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। লাল, নীল, সবুজ টুপি মাথায় জাতীয় পতাকা ও বিএনপির পতাকা হাতে নিয়ে নেতাকর্মীরা এই গণমিছিলে অংশ নেন। এই গণমিছিলে মুক্তিযোদ্ধা দল, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, উলামা দল, জাসাস, ঢাকা উত্তর ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা অংশ নেন। গণমিছিল শুরুর আগে নয়াপল্টনের সড়ক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
দশ সমাবেশ শেষে ১০ দফা দাবি ঘোষণা
১. পথে পথে বাধা, হামলা ও যনবাহন ভাঙচুর সত্ত্বেও চট্টগ্রামে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ লোকে-লোকারণ্য হয়ে ওঠে। নগরীর অন্যতম বৃহৎ উন্মুক্ত ময়দান রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড প্রায় পূর্ণ হয়ে যায়। সমাগম ঘটে লক্ষাধিক মানুষের। মাঠের বাইরে রাস্তায়ও অবস্থান নেন চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজন।
গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার গণতন্ত্র হত্যাকারী। তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আপনারা নিরাপদে চলে যান। না হলে পালানোর পথও খুঁজে পাবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই দেশে জনগণ আর কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এটা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। তিনি বলেন, এই চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এই দেশকে আরেকবার পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড থেকে শুরু হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার আন্দোলন। চট্টগ্রামের মানুষ যে আগুন জ্বালিয়েছে, সেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে। আজ থেকে যে আন্দোলন শুরু হলো, সেটি সারা দেশে ছড়িয়ে দেব। ফয়সালা হবে রাজপথে।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সেই সরকার এখানে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই কমিশন সব রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করে জনগণের গ্রহণযোগ্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করবে। এর মধ্য দিয়ে একটি পার্লামেন্ট গঠন হবে, যেটা হবে জনগণের পার্লামেন্ট। যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তারাই গঠন করবে পার্লামেন্ট। যদি সেই পার্লামেন্ট গঠিত হয়, তাহলেই এই দেশের যত সমস্যা আছে, তা দূর করা সম্ভব হবে।
২. ময়মনসিংহে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত আন্দোলনের যে জোয়ার উঠেছে, সেই জোয়ারে আওয়ামী লীগ ভেসে যাবে। তিনি বলেন, পরিষ্কারভাবে বলছি, এ সরকারকে বিদায় করতে হবে। অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। গত ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ নগরীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনোদিন কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, চুরি-সন্ত্রাস আওয়ামী লীগের মুদ্রাগত ও প্রকৃতিগত দোষ। উন্নয়ন ও কুইক রেন্টালের নামে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করছে। আওয়ামী লীগ কথায় কথায় লাঠি নিয়ে আসে, হুংকার দেয়। হুংকার দিয়ে আর লাভ হবে না। সাধারণ মানুষও এখন সচেতন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। ফেসবুক, টুইটার নিয়ন্ত্রণ করতেই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীন। ১০ টাকায় চাল, ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলে কিছুই করতে পারেনি তারা (আওয়ামী লীগ)। বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করায় মানুষ সঠিক বিচার পায় না।
৩. গণসমাবেশ কেন্দ্র করে খুলনায় দুদিন ছিল পরিবহন ধর্মঘট। বন্ধ ছিল নৌযানও। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। হেঁটে কিংবা নসিমন-করিমনে করে তারা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যান। বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযানের পাশাপাশি পথে পথে বসানো হয় তল্লাশি চৌকি। সব বাধা উপেক্ষা করে খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশে জনতার ঢল নামে। বাস, লঞ্চ বন্ধ থাকায় ট্রাক, পিকআপ, বালুবাহী ট্রলার ও ট্রেনে নেতাকর্মী সমর্থকরা খুলনায় পৌঁছান। অনেকে মাইলের পর মাইল হেঁটে সমাবেশে যোগ দেন। সকাল থেকেই খুলনার প্রবেশপথে ক্ষমতাসীনরা লাঠিসোটাসহ অবস্থান নেন। কিন্তু সংঘাতে না জড়িয়ে কৌশলে এসব বাধা পেরিয়ে সমাবেশ যোগ দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
মধ্য রাতে নেতাকর্মীরা ডাকবাংলো সোনালী ব্যাংক চত্বর মোড়ে সমাবেশস্থলে অবস্থান নেন। রাতে শহরের রাজপথে দেখা গেছে অভিনব সব দৃশ্য। হাজার হাজার নেতাকর্মী নির্ঘুম রাত যাপন করেছেন রাজপথে। ছিল না কোনো বিছানা। অনেককে চিড়ামুড়ি খেতে দেখা গেছে। সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশ স্থল ও আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
গত ২২ অক্টোবর গণসমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ন্যক্কারজনক বাধা সত্ত্বেও নেতাকর্মীদের আটকাতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে। রাজপথেই হবে ফয়সালা। তাই সরকারকে বলছি, মানে মানে সরে যান।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছেন। কোথাও সহিংসতা করছেন না। বরং আওয়ামী লীগ সহিংসতা করছে। তারা সন্ত্রাসের দল, দেশকে নরকে পরিণত করেছে।
নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে হটাতে হলে একমাত্র বিকল্প আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলন। এখনো সময় আছে নিরাপদে চলে যান। না হলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে।
৪. গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রংপুরে পরিবহন বন্ধ ছিল। সব বাধা উপেক্ষা করে বিভাগের ৮ জেলার বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা বানের স্রোতের মতো সমাবেশে যোগ দেন। দুপুর নাগাদ সমাবেশের মাঠ ছাড়িয়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আশপাশের সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। এ গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে এ এলাকায় ধানের শীষের বীজ বপন হলো। ভবিষ্যতে এ বিভাগ হবে বিএনপির ঘাঁটি। রংপুর বিভাগের সন্তান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, রংপুরবাসী অসাধ্যকে সাধন করেছে।
গত ২৮ অক্টোবর রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশে নেতাকর্মীর ঢল নামে। এ বিশাল জনস্রোতে প্রধান অতিথি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা যাব না। ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন হতে দেব না। এটা সাফ কথা। আমাদের একমাত্র দাবি, এ সরকারের পদত্যাগ। সরকারকে পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে এবার ফয়সালা হবে রাজপথেই।
সরকার সবকিছু খেয়ে ফেলছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এরা সর্বভুক সরকার। সব গিলে খেয়ে ফেলেছে। কিছুই বাকি রাখেনি। দুর্ভিক্ষ হলে এজন্য শেখ হাসিনা ও তার সরকার দায়ী থাকবে।
বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘কেন আছেন বাহে? ভালা আছেন তো? আমরা রংপুর বিভাগের চাওয়াল। শত নির্যাতন উপেক্ষা করে আমরা রংপুরে ভালো থাকিমু। তিন দিন অমানবিক পরিশ্রম করে, অমানবিক পরিস্থিতিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিপ্লবের সমাবেশে পরিণত করেছেন।’
তিনি বলেন, সরকার বলছে তারা জনগণকে ভয় পায় না। ভয় না পেলে গাড়ি বন্ধ করে কেন? চাপাতি দিয়ে ও গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যা করে কেন? তারা সভা-সমাবেশ করতে দেয় না। তাদের লোকেরা কথায় কথায় পিস্তল, হকিস্টিক, রামদা, লাঠি নিয়ে বেরিয়ে আসে। এটা হতে দেব না। মানুষ এখন রুখে দেবে। ওই বন্দুক, পিস্তল, লাঠি, রিভলবার, হকিস্টিক-সব ভেঙে চুরমার করে দেবে। মানুষ জেগে উঠেছে। সরকারের পতন ঘটাবে।
৫. বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশ কেন্দ্র করে কীর্তনখোলা নদীর পারে নেমেছিল নেতাকর্মীদের স্রোত। নানা বাধা উপেক্ষা করে বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দেন তারা। তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থান নেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। মাঠের উত্তর পাশে সার্কিট হাউজ, দক্ষিণে চাঁনমারি, পূর্বে পুলিশ লাইন্স ও পশ্চিমে লঞ্চঘাট পর্যন্ত নেতাকর্মীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলেন। এ সময় তাদের বেশ উৎসবমুখর দেখা গেছে। এ কর্মসূচি কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে শুক্র ও শনিবার বন্ধ ছিল বাস, লঞ্চ, থ্রি-হুইলার, এমনকি খেয়াঘাটও। বাস ও লঞ্চ বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় কয়েকদিন ধরে বরিশাল শহর কার্যত সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এতে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। সবকিছু বন্ধ থাকবে-এমন আশঙ্কায় দুইদিন আগেই নেতাকর্মীরা শহরে চলে আসেন। পরিবহন বন্ধ থাকায় পরে যারা এসেছেন, তারা ট্রলার, বালুর জাহাজ ও হেঁটে সমাবেশ স্থলে পৌঁছান। সমাবেশের দিন মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
গত ৫ নভেম্বর গণসমাবেশে প্রধান অতিথি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, সামনে আন্দোলন-সংগ্রামের আরেকটি যুদ্ধ আছে। সেই যুদ্ধে জয়ী হতে বিভেদ ভুলে সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে। এবার ফয়সালা হবে রাজপথে। তিনি বলেন, আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। আজকের সমাবেশে প্রমাণ হয়েছে, আমরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন নই। কথা দিচ্ছি, আমরা জনগণের সঙ্গে থাকব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের চরিত্রের দুটি গুণ হচ্ছে ভোট চুরি ও সন্ত্রাস। এ দুটি বিষয় তাদের চরিত্রের সঙ্গে মিশে গেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। এখন নতুন করে ভোট চুরি করে কোনো রকম ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে।
এজন্য নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ বলে ধারণা দিচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলছে। ইভিএম-এ ভোট নেয়ার কথা বলে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু আমাদের কথা পরিষ্কার-শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন হতে হলে আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দেবে। তারপরই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
৬. নৌকার ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ফরিদপুরে ব্যাপক শোডাউন করে বিএনপি। বাস ধর্মঘটসহ নানা বাধা উপেক্ষা করে গত ১২ নভেম্বর ষষ্ঠ বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠে কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে গণসমাবেশে প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার যতদিন পুনর্বহাল না হবে ততদিন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মানুষ ভোট দিতে পারেনি।
গত দুটি নির্বাচনে মানুষকে প্রবঞ্চনা করে, মিথ্যা কথা বলে, ভুল বুঝিয়ে নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে ক্ষমতায় চলে গেছে। কিন্তু এবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনী খেলা খেলতে দেয়া হবে না। মার খেতে খেতে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আর পেছনে ফেরার সময় নেই, সামনে এগোতে হবে। জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এক দফা, এক দাবি। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।
বক্তব্যের শুরুতে ফরিদপুরের কৃতী সন্তানদের নাম উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই মাটির ইতিহাস আন্দোলন-সংগ্রামের। এ মাটিতে হাজী শরিয়ত উল্লাহ, শেখ মুজিবুর রহমান, কেএম ওবায়দুর রহমান ও চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফসহ অসংখ্য গুণী মানুষ জন্ম নিয়েছেন। তারা ব্রিটিশ ওপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের স্বাধীনতার লড়াই সংগ্রাম করেছেন। ফরিদপুরের জনগণ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ে নেমেছে।
৭. গত ১৯ নভেম্বর নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির দাবিতে সিলেটে আয়োজিত গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেটবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা একটি যুদ্ধ শুরু করেছেন। এই যুদ্ধ মুক্তির যুদ্ধ, অধিকার ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ, ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। সিলেটের ইতিহাস হচ্ছে যুদ্ধের ইতিহাস, যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস। আজকে এই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র ফেরাতে এই সিলেট থেকেই আবার যুদ্ধ শুরু হলো।’ তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা এর বিরোধিতা করবে তারা ‘গণশত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ।
গণসমাবেশের বিষয়ে আলোকপাত করে তিনি বলেন, এবার মানুষ জেগে উঠেছে। তারা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। মানুষ আর ঘরে ফিরবে না। মানুষ তার হারিয়ে যাওয়া অধিকার ‘ভোটের অধিকার’ প্রতিষ্ঠা করেই ঘরে ফিরবে। সরকার হুমকি-ধমকি দিয়ে আন্দোলন দমাতে পারবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক-শ্রমিক কিন্তু এখন শান্তিতে নেই। গতকালও চিনির দাম, তেলের দাম বেড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। মানুষ এখন খেতে পারে না। তিন কোটি মানুষ বেকার। অথচ তারা ১০ টাকা দামে চাল খাওয়াবে বলেছিল। ‘গত ১৪ বছরে এই সরকার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। এই সরকারের বিচার হবে জনগণের আদালতে। মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেয়ার অপরাধে এই বিচার হবে।’
৮. দেশের মানুষ আর ভাঙা নৌকায় উঠতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি আরও বলেন, উনি (শেখ হাসিনা) আবার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে নৌকায় ভোট চেয়েছেন। শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের একটা গান ছিল-আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না। বাংলাদেশের সব মানুষ এখন এই গান গাইতে শুরু করেছে। ভুলে যান ওই নৌকার কথা, ভুলে যান। মানুষ এখন আপনাদের বিদায় দেখতে চায়। দয়া করে সময় থাকতেই মানে মানে কেটে পড়ুন। তা না হলে এই বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের বিদায় করবে, কীভাবে করবে, সেটা আপনারা জানেন। অতীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ হবেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমাবেশ যাতে না হতে পারে, সেজন্য গায়েবি মামলা দেয়া শুরু করেছে। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার-আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। সেখানে আপনারা বিভিন্ন রকম কথা বলবেন, ধুয়া তুলবেন, এটা হয় না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন নয়। নেতাদের কারাগারে নিক্ষেপ করে দ্রুত সাজা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় সরকার। গোমতী নামে বিভাগ কুমিল্লার মানুষ মেনে নেবে না বলেও জানান তিনি।
৯. জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দলের নেতাকর্মীদের হত্যা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নানা অত্যাচার-নির্যাতনের পরও বিভাগীয় সমাবেশে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি দেখে সরকার ভয় পাচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ নিয়েও তারা ভয়ে আছে। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। কিন্তু সমাবেশ নিয়ে ওদের ঘুম নেই। ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা আতঙ্কে ভুগছে। নিজেরা নিজেরাই বলাবলি শুরু করছে ওইদিন নাকি তখতে তাউস উলটে যাবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিজের প্রতি কোনো আস্থা নেই? জনগণের প্রতি আস্থা নেই বলেই তারা প্রতি মুহূর্তে ভয় পায়। বিএনপিকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখে। এই বুঝি বিএনপি এলো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির সর্বশেষ বিভাগীয় গণসমাবেশ। এর আগে স্থানীয় ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হলো এই সমাবেশ। ধানের শীষের ঘাঁটি বলে পরিচিত এ এলাকায় ব্যাপক শোডাউন করে দলটি। নানা বাধা এবং শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় সমাবেশ।
বিএনপিকে সরকারকে ভয় পায় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারভাবে বিএনপিকে তারা এত পেটায়, এত মামলা দেয়, তারপরও নেতাকর্মীরা উঠে আসে কোত্থেকে? বিএনপি মাটি ফুটে বেরিয়ে আসে। ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে। এটাই বিএনপি। এজন্য তারা ভয় পেয়েছে।
১০. নানা নাটকীয়তা, উৎকণ্ঠার পর শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ। গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে দলটির সবশেষ বিভাগীয় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ১০ দফা দাবিতে সমমনা ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে থাকায় এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১০ দফা ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন দলীয় সাত সংসদ সদস্য।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে ১০ দফা উপস্থাপন করার কথা জানান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, সমমনার পাশাপাশি সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে এ ১০ দফা নিয়ে আলোচনা করেছি। এ ১০ দফা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দফা। এটা জনগণের দাবি। আমরা আশা করি, এ দাবির সঙ্গে সবাই একাত্মতা ঘোষণা করবেন। সরকার বিদায়ে জনগণ ধৈর্য সহকারে এ কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাবে- এমন আশা করে মোশাররফ বলেন, স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। শেখ হাসিনাকে যত দ্রুত সম্ভব পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। কর্মসূচি ঘোষণাকালে উপস্থিত নেতাকর্মীরা হরতাল-অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচির দাবিতে সেøাগান দেন। এ সময় খন্দকার মোশাররফ বলেন, আপনারা যে কর্মসূচি চাচ্ছেন সেগুলোও সময়মতো ঘোষণা করা হবে।
দশ দফা হলো : ১. বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ভোটবিহীন, গণতন্ত্র হরণকারী, লুটেরা ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ। ২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ’-এর আলোকে একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্র্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। ৩. বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, ওই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা ৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা ৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮, সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা ৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল ৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করা, মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, শিশুশ্রম বন্ধ করা ও কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা ৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সবক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন ৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা ১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করার লক্ষ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া।