জোরালো হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি
রফিক মৃধা, দিনকাল
প্রকাশ: ০৫:১০ পিএম, ১৬ নভেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৩৭ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ ও যুগপৎ আন্দোলন করতে যাচ্ছে। কয়েক বছর থেকেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। আন্দোলনরত দলগুলো ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে দেশবাসীকে জানাচ্ছে, তাদের বক্তব্য হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। সুতরাং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে বলে মনে করে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ জনগণ। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, অসহনীয় দ্রব্যমূল্য, লাগাতার লোডশেডিং, দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট, হামলা-মামলা, গুম, হত্যা, জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করছে বিএনপি। এসব সমাবেশে শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরাই নয়, সাধারণ জনগণেরও দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আওয়ামী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের লক্ষ্যে চলমান গণআন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্যই বিএনপির নেতাকর্মী ও জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করতেই গুম ও গ্রেফতারের হিড়িক চলছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ বাতিল করেছে, তাদেরকেই পুনর্বহাল করতে হবে। যদি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল না করা হয়, জনগণের দাবি উপেক্ষা করা হয়, তাহলে দেশে যে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে।
এদিকে সরকারকে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার সুরক্ষার তাগাদা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা বাংলাদেশে আইনের শাসনের বাস্তবায়ন এবং সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারের বাস্তবায়ন দেখতে চায়। ৭ নভেম্বর স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলরত বিরোধীদল বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুমকি প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন মুখপাত্র নেড প্রাইস। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই মুখপাত্র বলেন, জনগণকে নিজেদের পছন্দের সররকারকে বেছে নেয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ। নিশ্চিত করতে হবে সুশীল সমাজের ব্যাপকভিত্তিক অংশগ্রহণ।
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে বৈশ্বিক মতামতের একটা গুরুত্ব আছে। জাপান ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরপর উদ্বেগ জানিয়েছিল। আমরা নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার কথা শুনেছি, যা পৃথিবীর আর কোথাও শুনিনি। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না। ১৪ নভেম্বর সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্ট্যাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন জাপানি রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন জাপানি দূত। একই সঙ্গে বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেবে বলেও নিজের প্রত্যাশার কথা জানান ইতো নাওকি। রাষ্ট্রদূত বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা আরও সতর্ক হবেন বলে আমরা আশা করছি। জাপান বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে আমাদের চাওয়া থাকবে, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা আরও সামনে এগিয়ে যাবে। আর উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা চলমান রাখতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। সেজন্য আমাদের চাওয়া থাকবে, নির্বাচনে গণতান্ত্রিক উপায়ে সকল দল অংশগ্রহণ করবে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়, সেজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের জানানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে নিয়ন্ত্রিত এবং একচেটিয়া নির্বাচন করার অভিযোগ ওঠে।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায় তুরস্ক। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা শুধু বাংলাদেশেরই সিদ্ধান্ত, বিদেশিদের নয়। আজ বুধবার দুপুরে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্ট্যাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান।
তুর্কি রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা বিদেশিদের কোনো বিষয় নয়, এটি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করে। এটা শুধু বাংলাদেশেরই সিদ্ধান্ত, বিদেশিদের নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্যের সমাধান করতে হলে আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে। সরকার একা সব কিছু করতে পারে না। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্ট্যাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। গেল সোমবার সিজিএস আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছিলেন, নির্বাচন নিয়ে বৈশ্বিক মতামতের একটা গুরুত্ব আছে।