বাংলাদেশকে আইএমএফের ‘গ্রিন সিগন্যাল’, পাঁচ শর্তে দেয়া হবে ঋণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১০ পিএম, ৯ নভেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৩৯ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণের ব্যাপারে ইন্টারন্যাশনাল মানিটরি ফান্ড বা আইএমএফের প্রাথমিক সম্মতি পেয়েছে বাংলাদেশে।
আইএমএফের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ঋণের ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে স্টাফ লেভেলে সমঝোতা হয়েছে আইএমএফের। একে ওই ঋণের ব্যাপারে আইএমএফের গ্রিন সিগন্যাল বলা যেতে পারে।
যখন কোনো দেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়ে থাকে, তখন প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞদের একটি দল সেদেশ পরিদর্শন ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে। সাধারণত এই সফরের সময় ঋণ প্রাপ্তির জন্য অর্থনৈতিক সংস্কারের বেশ কিছু শর্তও দেয়া হয়। এসব শর্তের ব্যাপারে একমত হলে ঋণের ব্যাপারে স্টাফ লেভেলে সমঝোতায় পৌঁছানোর কথা বলা হয়। একে এখনো আইএমএফের পুরোপুরি সম্মতি বলা যায় না।
এই স্টাফরা ঋণের ব্যাপারে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর তার ভিত্তিতে আইএমএফের এক্সিকিউটিভ বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু কোনো দেশের ঋণের ব্যাপারে স্টাফ লেভেলে সমঝোতা হলে সেটি প্রত্যাখ্যানের নজির নেই। গত ২৬ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ সফর করছে আইএমএফের প্রতিনিধি দলটি। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
কীভাবে ঋণ দেয়া হবে : আইএমএফের পক্ষ থেকে পাঠানো একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে। বিয়াল্লিশ মাস বা সাড়ে তিন বছর ধরে পর্যায়ক্রমে এই ঋণ ছাড় করা হবে। অর্থাৎ পুরো ঋণটি পেতে ২০২৬ হয়ে যাবে। এর মধ্যে এক্সটেনডেন্ড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি ও এক্সটেনডেন্ড ফান্ড ফ্যাসিলিটির আওতায় ৩.২ বিলিয়ন আর রেজিলিয়ানন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির ফ্যাসিলিটির আওতায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়া হবে। এই ঋণের মূল উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশের সমষ্টিক অর্থনৈতিক সুরক্ষা, প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, ব্যালেন্স অব পেমেন্টের চাপ সামলানো আর জলবায়ু সুরক্ষা তহবিলে সহায়তা করা।
যেসব শর্ত দিয়েছে আইএমএফ : রাজস্ব বাড়ানো এবং যৌক্তিক ব্যয় ব্যবস্থা চালু করা। বিশেষ করে প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। যারা নাজুক অবস্থায় থাকবে, সেসব খাত লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নেয়া।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিক মুদ্রানীতি তৈরি করা। সেই সঙ্গে মুদ্রা বিনিময় হার আরও নমনীয় করে তোলা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে আধুনিক মুদ্রানীতি।
আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করা, নজরদারি বাড়ানো, সরকার ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের আওতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করা।
বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পরিবেশে তৈরি, মানব দক্ষতা বৃদ্ধি, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে তোলা, পরিবেশের উন্নতির পদক্ষেপ নেয়া এবং জলবায়ু সংক্রান্ত খাতে আরও বিনিয়োগ ও আর্থিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
আইএমএফের এই সফর নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছেন, আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, যেমন রেভিনিউ বাড়ানো, সরকারও অনেকদিন ধরেই এসব নিয়ে কাজ করছে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি করার মতো শর্ত-এ নিয়ে আমরা অনেকগুলো মিটিং করেছি। তাদের শর্ত আমাদের শর্ত একই হলো।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও গ্যাস, যন্ত্র ও পণ্যের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। সেই চাপ সামলাতেই আইএমএফ দাতা সংস্থাগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ। গত কয়েকমাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত বছরের তুলনায় অনেক নিচে নেমে এসেছে। ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস, খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি অনেক বেড়েছে। ফলে দেশীয় বাজারে ডলারের চরম সংকট তৈরি হয়েছে।