ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অসুস্থ হচ্ছে শিশুরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪১ পিএম, ১৪ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৪৮ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
প্রচন্ড গরম আর ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অসুস্থ হচ্ছে শিশুরা। এর মধ্যে বয়স্ক মানুষেরাও অসুস্থ হচ্ছে। প্রচন্ড গরমের কারণে ঘাম শরীরে শুকিয়ে গিয়ে ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে। ফলে মানুষের সর্দি, জ্বর, ডায়রিয়া এবং কাশির মতো রোগ হচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালে থাকা রোগীদেরও কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
রামপুরা বনশ্রীর ছয় বছরের শিশু রামিতা তাবাসরুম রাফা রবিবার থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার ঠান্ডা এবং জ্বর হয়েছে। এ কারণে স্কুলে যেতে পারছে না। জ্বরের সঙ্গে তার পুরো শরীরে ব্যথা। তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে জ্বরের ওষুধ খাওয়াচ্ছে। রাফার মতো ঘরে ঘরে বহু শিশু ঠান্ডা ও জ্বরে অসুস্থ হচ্ছে।
বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই গরমে শুধু জ্বর না। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ঘামাচি, সর্দির মতো অসুখেও ভোগাচ্ছে মানুষদের। এছাড়াও স্ট্রোকের মতো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই গরমে শিশুর বেশি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোডশেডিংয়ের কারণে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে অপারেশন থিয়েটারে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
হালিমা রহমান নামে এক শিশুর অভিভাবক বলেন, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ঘরে ঘরে শিশু ও বয়স্করা গরমে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তার দুটি সাড়ে তিন বছরের ছেলে রয়েছে। তারা দুই ভাই জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত হচ্ছে। দিনে চার থেকে পাঁচ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। আবার রাতের বেলাও বিদ্যুৎ চলে যায়। ফলে শিশুরা ঘেমে ঠান্ডা লেগে গেছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমে ঘেমে শিশুরা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে। শিশুদের প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে। জ্বর, বমি, ডায়রিয়ার আশঙ্কা থাকে। চামড়ায় ঘামাচি হয়। বেশি সময় ডায়াপার পরে থাকলেও এ সমস্যা হতে পারে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বলে তাপমাত্রার সমস্যার কারণে বেশি আক্রান্ত হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে শিশুরা গরমে ঘামতে থাকে। গরম ও ঠান্ডা লেগে তারা বেশি অসুস্থ হয়। এজন্য ঘরে বিকল্প হিসেবে শিশুদের হাতপাখা দিয়ে বাতাস করা বা ঘরের বাইরে বাতাস আছে এমন স্থানে নিয়ে বসানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে শ্যামলী ২৫০ শষ্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, শিশুরা খুব বেশি স্পর্শকাতর বলে অনেকে গরম আবহাওয়ায় সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে জ্বর, পেট খারাপ, সর্দি, কাশিসহ নানা শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। এ কারণে গরমে ছোটদের বিশেষ যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন। তাই শিশুদের পানি ও স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে তিনি পরামর্শ দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী কাওসার বলেন, গরমে অনেকেরই কষ্ট হয়। তবে শিশুদের কষ্টটা একটু বেশি হয়। এ সময়ে শিশুদের প্রতি একটু বেশি যত্নবান হতে হবে।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, এ গরমে শিশু ও বয়স্করা বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। লোডশেডিংয়ের সময় অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বাতাসও ঘরে না থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তাই শিশুদের পানি ও স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে তিনি পরামর্শ দেন।
অসহনীয় ভোগান্তি
এই পরিস্থতিতে রাজধানীবাসীকে দিনের অনেকটা সময় বিদ্যুৎহীন অবস্থায় পার করতে হচ্ছে ৷ ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরও নাজুক ৷ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, দিনের পাশাপাশি এখন মধ্যরাতেও কয়েক দফায় লোডশেডিং হচ্ছে ৷ মিরপুরে কিছু দিন আগেও দৈনিক গড়ে তিন-চার বার লোডশেডিং হলেও এখন হচ্ছে ৬-৭ বার এবং বিদ্যুৎ আসছে আগের তুলনায় বেশি সময় পরে ৷
মিরপুর ১২ নম্বরের বাসিন্দা একরামুল কবির বলেন, গত শনিবার রাত ১২টার পর থেকে বিকাল পর্যন্ত চারবার লোডশেডিং হয়েছে। রবিবার সকাল পৌনে ৭টা থেকে পৌনে ৮টা, দুপুর পৌনে ১২টা থেকে পৌনে ১টা এবং রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না ৷ সেদিন দুপুর থেকে বিকাল র্পযন্ত আরও দুইবার বিদ্যুৎ গেছে। মাঝরাতেও যদি দুইবার বিদ্যুৎ চলে যায়, ঘুমাব কীভাবে?
লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা। এনামুল কবির বলেন, আমার তিন বছরের মেয়ে আর ছয় মাসের ছেলে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অস্থির হয়ে পড়েছে। রাতে দুই শিশু একদম ঘুমাতে পারেনি। দিনের বেলায়ও বিদ্যুৎ যাচ্ছে।
মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আজিমপুর, মগবাজার, মালিবাগ, রামপুরা, বাসাবো, গোড়ান এলাকায় রবিবার রাত ১২টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয় থেকে সাতবার বিদ্যুৎ গেছে।
দক্ষিণ গোড়ানের বাসিন্দা মোর্শেদা আক্তার বলেন, গত দুইদিন ধরে একবারে অসহ্য হয়ে যাচ্ছি লোডশেডিংয়ের কারণে। একে তো গরম, তার উপরে লোডশেডিং। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত তিনবার বিদ্যুৎ চলে গেছে।
মোর্শেদা আক্তার বলেন, আমরা মধ্যবিত্তরা আইপিএস বা জেনারেটর চালানোর অবস্থায় নেই। চার্জার ফ্যান-লাইট যে কিনবো সেই সক্ষমতাও নেই। সবকিছুর দাম এত বেশি সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। ফলে এসব কেনার জন্য আলাদা বাজেট করার অবস্থা নেই। আমরা কোনো রকম সহ্য করে নিচ্ছি। কিন্তু আমার শাশুড়ি বয়স্ক মানুষ। তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে ভুগছেন। লোডশেডিং হলেও ওনার অনেক কষ্ট হয়।
রামপুরা এলাকার তরিকুল ইসলাম বলেন, দৈনিক সাত থেকে আট বার বিদ্যুৎ চলে যায়! এটা ভাবা যায়! বিদ্যুৎ না থাকলে একে তো গরম তার উপরে আবার পানির সংকট তৈরি হয়েছে।
পুরান ঢাকার আজিমপুরের গৃহিণী শাহনাজ আক্তার লোডশেডিংয়ের কারণে গরমের দুর্ভোগের পাশাপাশি ফ্রিজ নষ্ট হওয়ার ঝামেলায় পড়েছেন। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার এলাকা তো এমনিতেই ঘিঞ্জি। আলো-বাতাস একেবারে ঘরে ঢোকে না। গরমে তো কষ্ট হচ্ছে, তার উপরে বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার কারণে ফ্রিজটাও নষ্ট হয়ে গেল। নতুন ফ্রিজ দুই বছরও চালাতে পারলাম না।