ড. ইউনূসের বই কিনে বিপাকে সংসদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৪ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:১৬ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লেখা বই কিনে ‘বিপাকে’ পড়েছে সংসদ। বইটি নিয়ে চলছে লুকোচুরি। একবার বইটি সংসদ সচিবালয়ের লাইব্রেরি কক্ষের শেলফে রাখা হচ্ছে। কখনো কোনো কর্মকর্তার রুমে থাকা শেলফে স্থান পেয়েছে বইটি। আবার কখনো শেলফে রাখা হলেও বইটি উল্টো করে রাখা হয়েছে, যেন বইয়ের নাম দেখা না যায়। তবে গতকাল থেকে বইটি আর খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বশেষ লাইব্রেরির যে কর্মকর্তার শেলফে বইটি উল্টো করে রাখা ছিল সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এভাবে গত দুই মাসে বইটির অবস্থান পরিবর্তন করা হয়েছে ১৫ থেকে ২০ বার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মে ও জুন মাসে দুই দফায় চার শতাধিক বই কেনে সংসদ সচিবালয়। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটিডের মাধ্যমে বইগুলো কেনা হয়। এর মধ্যে ১৯ জুন পাঞ্জেরীকে ৩৩টি বইয়ের চূড়ান্ত তালিকা দেয়া হয়। যার অর্ডার নং-১১.০০.০০০০.৬০৪.০৭.০৮৭.২২, তারিখ : ১৯-০৬-২০২২। এতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লেখা- এ ওয়ার্ড অফ থ্রি জিরোস : দ্য নিউ ইকোনমিকস অফ জিরো প্রভার্টি, জিরো আনইমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড জিরো নেট কার্বন ইমিশনস বইটি তালিকাভুক্ত ছিল। অর্ডার অনুযায়ী গত ৫ জুলাই বইটির দুই কপি সংসদ সচিবালয়ের লাইব্রেরির জন্য সরবরাহ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে বইগুলোর দাম পরিশোধ করা হয়। এরপরই ড. ইউনূসের লেখা বইটি নিয়ে শুরু হয় টানাহেঁচড়া। সংসদ সচিবালয়ের বই নিয়ে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যরা প্রথমে বইটি নিয়ে আপত্তি তোলেন। তারা জানান, বইটিতে সরকারবিরোধী নানা ধরনের লেখা ও মন্তব্য রয়েছে। তাই এ বইটি কেনা ঠিক হয়নি। সংশ্লিষ্টরা কোনোভাবে এ বইয়ের বিষয়ে জানতে পারলে লাইব্রেরিতে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হতে পারে। যাচাই-বাছাই কমিটির এ ধরনের মন্তব্যের পর লাইব্রেরিতে কর্মরত কর্মকর্তারা বইটি নিয়ে কি করবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। কারণ বইটির নাম চূড়ান্ত তালিকায় ছিল আবার তা কেনার পর দামও পরিশোধ করা হয়েছে। তাইতো প্রতিনিয়ত বইটির অবস্থান পরিবর্তন করা হয়। হাতেগোনা কয়েকজন এমপি সংসদ সচিবালয়ের লাইব্রেরি কক্ষে আনাগোনা করেন। প্রথমে বইটি লাইব্রেরির শেলফে রাখা হলেও পরে তা সরিয়ে ফেলা হয়। লাইব্রেরিতে আসা কোনো এমপির নজরে যেন বইটি না পড়ে সে জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়। পরে রাখা হয় উপ-পরিচালক (গ্রন্থাগার) জেব উন নেছার অফিস কক্ষে। তবে সেখানে বইটি উল্টো করে রাখা হয় যেন কারও নজরে না পড়ে। গতকাল সেখান থেকেও বইটি সরিয়ে ফেলা হয়। এ প্রসঙ্গে যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান ও পরিচালক (রিপোর্টিং) ওবায়দুর রহমান বলেন, সম্প্রতি কিছু বই কেনা হয়েছে। তবে তার মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কোনো বই ছিল কি না তা এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না। আপত্তি জানানোর বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।
তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনার কথা আমার মনে নেই। বিষয়টি নিয়ে জানতে উপ-পরিচালক (গ্রন্থাগার) জেব উন নেছার মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংসদ লাইব্রেরির এক কর্মকর্তা বলেন, বইটি কেনার পর থেকে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক পেয়ে বসেছে। প্রায় প্রতিদিনই বইটি শেলফ থেকে শেলফে সরিয়ে রাখতে হচ্ছে। অতি উৎসাহী কয়েকজন বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করছেন। তারা ভয় দেখিয়ে বলছেন- সংসদে প্রতিনিয়ত সংসদ নেতাসহ সরকারি দলের নেতারা নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। সেখানে সংসদ লাইব্রেরির কর্মকর্তাদের তার লেখা বই কেনা ঠিক হয়নি। কারণ ওই বইয়ে রয়েছে সরকারবিরোধী নানা ধরনের কথাবার্তা ও মন্তব্য। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমে সংসদ লাইব্রেরি থেকে বইয়ের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। পরে তা অনুমোদন দেয় লাইব্রেরি কমিটি। ওই কমিটির প্রধান থাকেন পদাধিকারবলে ডেপুটি স্পিকার। কিন্তু তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া অসুস্থ হয়ে আমেরিকায় চিকিৎসাধীন থাকায় লাইব্রেরি কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি। তাই লাইব্রেরি কর্মকর্তাদের তৈরি তালিকা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত বইগুলো কেনা হয়। অন্যদিকে যাচাই-বাছাই কমিটি বইগুলো কেনার আগে কোনো আপত্তি জানায়নি। বই কেনার পরে তারা হঠাৎ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বইটি নিয়ে আপত্তি তোলে। এরপরই বইটি নিয়ে শুরু হয় লুকোচুরি। ২৮৮ পৃষ্ঠার বইটির প্রথম সংস্করণ বের হয় ২০১৭ সালে। রকমারিতে যার মূল্য দেয়া রয়েছে ১০৭৮ টাকা। বইটি প্রকাশ করে ভারতের বিখ্যাত প্রকাশনী সংস্থা হাচিতী ইন্ডিয়া।