আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪৫ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:১৪ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
আজ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণী দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, গণতন্ত্র সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি এবং রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক চর্চাকে উৎসাহিত করার জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক ২০০৭ সাল থেকে এ দিবসটি পালন করা হয়। প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর এই দিবসটি পালন করে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশসমূহ। গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আমি বিশে^র গণতন্ত্রকামী মানুষদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও পুনরুদ্ধারের জন্য দেশ-বিদেশের যারা আত্মদান করেছেন ও আহত হয়েছেন তাদের জন্য জানাচ্ছি শোক ও সমবেদনা।
রক্তস্নাত বাংলাদেশের স্বাধীনতা এ যাবৎকালের শ্রেষ্ঠ অর্জন। গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখেই আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ বিজয় অর্জন করেছিল। সে লক্ষ্য পূরণে আমরা আজও কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশে বর্তমানে জনগণের অধিকার হরণ করে জুলুমের রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১৪ বছরের শাসনামলে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা, ভাষা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভূলুন্ঠিত করে দেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত করেছে। মূলত এটি পুরনো বাকশালের পুনর্মুদ্রণ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আপোসহীন নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সারাদেশে বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি ভয়াবহ জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেককে গুম করে দেয়া হয়েছে, জীবন কেড়ে নেয়া হয়েছে অনেকের। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
বিএনপি ছাড়াও ভিন্নমতাবলম্বীরা সরকারি স্টীম রোলারের নিচে পিষ্ট হয়ে আসছেন। গণতন্ত্র হচ্ছে এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে সরকারের গৃহীত নীতি ও কার্যক্রমে প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণ থাকে। অর্থাৎ জনগণের ইচ্ছায় দেশ পরিচালিত হয়। গণতন্ত্র মানবজাতির এক সর্বজনীন অনন্য অর্জন। গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র মানবসভ্যতার অগ্রগতির মানদন্ড। গণতন্ত্রের আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরির ক্ষেত্রে সব নাগরিকের সমান অংশগ্রহণ রয়েছে। নাগরিকদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা দেশ পরিচালনাই হচ্ছে একটি সরকারের বৈধতার গ্যারান্টি। কিন্তু দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনের যাঁতাকলে গণতন্ত্রের বিকশিত হওয়ার পথকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে আঁকড়ে ধরার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ঠুর বেড়াজাল দিয়ে দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র ও একদলীয় শাসনের মাধ্যমে জনগণকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশেও এমন একটি বিভীষিকাময় শাসন বিদ্যমান রয়েছে। যার নমুনা দিনের ভোট রাতে হয়, অথবা বিনাভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। তবে আমি মনে করি- ইনক্লুসিভ, সমানাধিকার ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ নিশ্চিত হয়। আমাদের অঙ্গিকার হোক-গণতন্ত্রমনা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে আবারও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছা। টেক ব্যাক বাংলাদেশ।
‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে বাংলাদেশসহ সারাবিশে^র গণতন্ত্রমনা মানুষকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জাতিসংঘ কর্তৃক ২০০৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে গণতন্ত্রের সারবত্তা ও অনুশীলনে সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা, আহতদের জানাচ্ছি সমবেদনা।
তিনি বলেন, একটি গতিশীল গণতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তি মানুষের মর্যাদা সমুন্নত থাকে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় মানুষকে দাসে পরিণত করা যায় না। একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সমাজেই কেবলমাত্র মানুষের অধিকার নিশ্চিত হয়। সভ্যতা বর্তমান স্তর থেকে আরও অগ্রগতির দিকে ধাবিত হয়। সারাবিশ্বে বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি মানুষের আগ্রহকে ভূলুন্ঠিত করে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এখনও একদলীয় দুঃশাসনের ঘন অন্ধকার বিরাজমান। বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের পথকে সংকুচিত করে দেয়া হয়েছে। নাগরিক অধিকার, ভোটাধিকার, মানবিক মর্যাদা ও মানবিক সাম্য হরণ করা হয়েছে। নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হরণ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কন্ঠরোধ করা হয়েছে। ভিন্নমতের কারণে অনেকেই গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশের গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গৃহবন্দি রাখা হয়েছে, এখনও তিনি পুরোপুরি মুক্ত নন। দেশনায়ক তারেক রহমানের ওপর চালানো হয়েছে বহুবিধ নির্যাতনের নির্মম মাত্রা। এদেশে জনগণের মালিকানা কেড়ে নিয়ে ঘোর দুর্দিন নামিয়ে আনা হয়েছে। অবাধ, নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করা হয়েছে। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। অবৈধ শাসন ফ্যাসিবাদী কায়দায় দীর্ঘায়িত করতে গিয়ে সরকার দেশ, রাজনীতি ও গণতন্ত্রকে চরম দুর্দশায় ফেলেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে জনগণ সরাসরি শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারে। জনগণের মতামতই হয় সরকার পরিচালনার ভিত্তি। কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শান্তি, স্থিতিশীলতা, টেকসই উন্নয়ন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আসুন, আমরা গুম-খুন-ক্রসফায়ার আর মিথ্যা মামলার হিড়িকের এই দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফ্যাসিবাদের কবল থেকে গণতন্ত্রের মুক্তির মাধ্যমে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলি।