গুমের অভিযোগ তদন্তে ‘নিরপেক্ষ কমিশন’ গঠনের দাবি আসকের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৪ পিএম, ২৯ আগস্ট,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪১ পিএম, ১২ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
গুমের শিকার সব নিখোঁজ ব্যক্তিকে দ্রুত খুঁজে বের করা, অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন এবং গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষর করাসহ সরকারের কাছে ছয়টি দাবি জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ৩০ আগস্ট গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছেও তিন দফা দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে আসক বলেছে, জাতিসংঘ ২০১০ সালে গুম থেকে সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধান সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ অনুমোদন করে। এ সনদে বিস্তৃত এবং সুশৃঙ্খল উপায়ে সংগঠিত বলপূর্বক অন্তর্ধানকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সচেতনতা আর সংবেদনশীলতা তৈরির লক্ষ্যে জাতিসংঘ থেকে প্রতিবছর ৩০ আগস্টকে গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধানের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে পালন করার ঘোষণা দেয়া হয়। এ সনদে গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধান বলতে সরকারি বাহিনী, ব্যক্তি সমষ্টি অথবা কোনো দল কর্তৃক সরকারের কর্তৃত্বে, সহায়তা বা প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার, আটক, অপহরণ বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যক্তিকে তার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা, অন্তর্ধানের শিকার ব্যক্তির চলাফেরার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করার ঘটনাকে প্রত্যাখ্যান করা, ব্যক্তির অবস্থা অথবা অবস্থান গোপন করা এবং এর মাধ্যমে ব্যক্তিকে আইনের আশ্রয় লাভ থেকে বঞ্চিত করা বোঝায়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বারবার বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমের ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, সাংবাদিক বা মানবাধিকার সংগঠনের তথ্যানুসন্ধানে গুমের সুস্পষ্ট অভিযোগ উঠে এসেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তুলে নেয়ার কিছুদিন পর গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলেও গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছে।
আসকের কাছে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২২ (২৯ আগস্ট) পর্যন্ত ২৮ জন গুমের শিকার হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনেরা অভিযোগ তুলেছেন। এদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ১২ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৫ জন ফেরত এসেছে। অন্যরা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। ১৫ বছরে গুম-অপহরণের শিকার ৬১৪ জন, এখনো নিখোঁজ ৩৯০১৫ বছরে গুম-অপহরণের শিকার ৬১৪ জন, এখনো নিখোঁজ ৩৯০। ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধান বিরোধী দিবসে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বাংলাদেশ সরকার ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে বেশকিছু দাবি জানিয়েছে, যার মধ্যে আছে গুমের শিকার সব নিখোঁজ ব্যক্তিকে দ্রুত খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া; এ সংক্রান্ত অভিযোগ দেয়ার জন্য একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচার করা; গুমের ঘটনা প্রতিরোধে এবং ভুক্তভোগী ও প্রতিটি গুমের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন; দায়ীদের বিচারের সম্মুখীন করে বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গুমের শিকার ব্যক্তি ও তার পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা; গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষর করা; গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোকে অস্বীকার না করে এ ধরনের ঘটনার বিচার নিশ্চিতে বিদ্যমান আইন কাঠামোতে পরিবর্তন আনা; ‘অপহরণ’ হিসেবে নয়, ‘গুম’কে সুনির্দিষ্ট অপরাধ হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে আসা গুমের অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করা; নিখোঁজদের খুঁজে বের করা এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯-এ এ ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা থাকলে তা দ্রুততার সঙ্গে দূর করে সরকারের সঙ্গে জোর যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়া; ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারকে আইনি ও নৈতিক সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারসমূহের উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে একটি জাতীয় শুনানির আয়োজন করার দাবি জানিয়েছে আসক।