এমএসএফের বিবৃতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫২ পিএম, ২৯ আগস্ট,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০১:১৫ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
৩০ আগস্ট জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। গুমের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা জন্য জাতিসংঘ ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ‘International onvention for the Protection of All Persons from Enforced Disappearance’ নামে একটি সনদ গ্রহণ করে।
সে সনদে বলা হয়েছে; আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক কোনো ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অস্বীকার করা, বিচার ব্যবস্থার কাছে সোপর্দ না করা বা যদি তার খোঁজ না পাওয়া যায় তবে সেটিকেই গুম বলে। গুমের ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য; বিশেষ করে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেয়া হয় এবং এরপর সংশ্লিষ্ট বাহিনী কর্তৃক তাদের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গুম ও নিখোঁজের শিকার হন ১১ জন। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়, ৪ জন উদ্ধার হয় এবং এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ৪ জন। অপরদিকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন ১১ জন। যার মধ্যে ৬ জনকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, ৪ জন উদ্ধার হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ১ জন।
গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত প্রাপ্ত এবং বিভিন্ন সংগঠনের সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গুম ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ৬১৪ জন নাগরিক। পরবর্তী সময়ে এদের মধ্যে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ৬৭ জনকে, ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, ফিরে এসেছেন ৫৭ জন, পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২২ জন। ৩৯০ জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আছে সাধারণ মানুষও রয়েছেন।
যারা গুমের শিকার হয়েছেন, তাদের বড় একটি অংশই আর ফিরে আসেননি। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) মনে করে, দেশের নাগরিকের জীবন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রধানতম দায়িত্ব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গুম ও নিখোঁজের ঘটনা অবশ্যই সংবিধানের পরিপন্থি। বাংলাদেশ যেসব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে সেগুলোরও পরিপন্থি। গুম ও নিখোঁজের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা ও ভাবমূর্তিকে বিপদগ্রস্ত করছে। গুম হওয়া পরিবারগুলো, সন্তানেরা প্রতিমুহূর্তে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। গুম ও নিখোঁজ হওয়া মানুষ ফিরে আসবে, গুমের একটি ঘটনাও আর ঘটবে না সেটাই সকলের কাম্য। যদি কারও বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে তা যতই গুরুতর হোক, আমরা লক্ষ্য করেছি অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গেছে। তাকে অবশ্যই আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তির আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার তার সাংবিধানিক অধিকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গুম ও নিখোঁজের ঘটনা রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। অবিলম্বে গুম হওয়া সকল মানুষকে খুঁজে বের করা, দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে গুমের ঘটনাগুলোর তদন্ত করা, জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া এবং নিখোঁজ ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)-এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়েছে।