২০২১ সালে ৭৪০ সাংবাদিক সহিংসতার শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৩৬ পিএম, ১৬ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৩৫ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) তৃতীয় পর্বের সুপারিশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য একটি সমন্বিত ও কার্যকর জাতীয় ব্যবস্থা তৈরির আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষার অধিকার নিয়ে বিশ্বজুড়ে কাজ করা সংস্থাটি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেতের চলমান বাংলাদেশ সফরের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে চার বছর আগে বাংলাদেশ সরকারের করা অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি তুলে ধরারও আহ্বান জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংগঠনের এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাংলাদেশ সফরের সুযোগ পাওয়া জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে বর্তমানে কক্সবাজারে রয়েছেন। বুধবার ঢাকায় ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়াও ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে রুদ্ধদার বৈঠক করবেন। একটি সেমিনারে বক্তৃতা করার পাশাপাশি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। আর্টিকেল ১৯-এর বিবৃতি মতে, ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৯তম অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকার ইউপিআরের আওতায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের ১৭৮ সুপারিশ গ্রহণ করে, যার মধ্যে অন্তত ২৫টি সুপারিশ ছিল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা ও শক্তিশালী করা সম্পর্কিত। নিয়ম অনুযায়ী গৃহীত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে পরবর্তী ৫ বছর সময় পাওয়া যায়। সেই হিসাবে বাংলাদেশ সরকার তৃতীয় পর্যায়ের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের শেষ বছরে রয়েছে। আগামী বছর ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সরকারকে জাতীয় প্রতিবেদন জমা দিতে হবে এবং নভেম্বরে পর্যালোচনায় অংশ নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর সম্ভাব্য অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ বিষয়ে ইউপিআরে উচ্চমাত্রার উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও সরকার তখন সেটি আমলে নেয়নি। দেরিতে হলেও এই আইনের অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহারের কথা স্বীকার করে সরকার বর্তমানে একটি কমিটি করেছে বলে জানানো হয়েছে। সেই কমিটি এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে সরকার সফররত মানবাধিকার হাইকমিশনারকে জানিয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য এবং আইনটির চিহ্নিত নিবর্তনমূলক ধারাগুলো অবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানায় আর্টিকেল নাইনটিন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে খর্ব করা হচ্ছে। আর্টিকেল নাইনটিনের হিসাব অনুযায়ী ২০২০ সালের জানুয়ারি হতে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আড়াই বছরে ১৭৭ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৮৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই সাংবাদিকদের মধ্যে ৫৩ জনকে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকতে হয়েছে। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ধারাবাহিক অবদমন ও নাগরিক অধিকারের ক্রমাগত সংকোচনের বিষয়ে আর্টিকেল নাইনটিন উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক আর্টিকেল নাইনটিনের বৈশ্বিক প্রতিবেদন ‘গ্লোবাল এক্সপ্রেশন রিপোর্ট-২০২২’ অনুসারে ১৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ১৩১তম। সংস্থার হিসাবমতে, বাংলাদেশে কেবল ২০২১ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৭৪০ জন সাংবাদিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই সাংবাদিকরা মতপ্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের ৪৩৯টি রেকর্ডকৃত ঘটনায় শারীরিক হামলা, মামলা, অপহরণ, হুমকি, হয়রানি, সম্পদ বিনষ্ট ও বৈষম্যমূলক আচরণের মতো সহিংসতার শিকার হয়েছেন। অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ও সহিসংতার শিকার সাংবাদিকের সংখ্যা- উভয় বিবেচনাতেই এটি গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এ প্রসঙ্গে ফারুখ ফয়সল বলেন, ইউপিআর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এবং সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য একটি অগ্রাধিকার ইস্যু বলে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বলে থাকেন। আবার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের মানবাধিকারবিষয়ক অঙ্গীকারের মধ্যে অন্যতম। অথচ এ সংক্রান্ত ইউপিআর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকার আদৌ কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে কি না- তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি সমন্বিত ও কার্যকর জাতীয় ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সুপারিশ বাস্তবায়নে, বিশেষ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা এবং শক্তিশালীকরণে যথার্থ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সূত্র : মানবজমিন