চীনের বিআরআই ঋণ নিয়ে সতর্ক করলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী, উদাহরণ টানলেন শ্রীলঙ্কার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৩৭ পিএম, ১০ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৩৯ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এএইচএম মুস্তফা কামাল সতর্ক করেছেন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। বলেছেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে আরও ঋণ নেয়ার বিষয়ে দুবার ভাবতে হবে। কারণ বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি এবং প্রবৃদ্ধি ঋণগ্রস্ত উদীয়মান বাজারগুলোতে চাপ বাড়ায়। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কামাল আরও বলেন, চীনকে তার ঋণের মূল্যায়নে আরও কঠোর হতে হবে। কারণ দুর্বল ঋণের সিদ্ধান্ত দেশগুলোকে সঙ্কটে ঠেলে দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সেখানে চীনা-সমর্থিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলো রিটার্ন জেনারেট করতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং দ্বীপরাষ্ট্রকে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছিলো। কামালের সতর্কবাণী বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, সবাইকে বিআরআই প্রকল্পে সম্মত হওয়ার আগে দুবার ভাবতে হবে। সেইসঙ্গে তিনি যোগ করেন, “সবাই চীনকে দোষারোপ করছে। কিন্তু চীনের থেকে ঋণ নেবার পর তার দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে”। কামালের মতে, শ্রীলঙ্কার সংকট থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, কোন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে ঋণ দেয়া হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে চীন যথেষ্ট কঠোর ছিল না। একটি প্রকল্পে ঋণ দেয়ার আগে সেটিকে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়ন’ করতে হবে। শ্রীলঙ্কার পর আমরা অনুভব করেছি যে, চীনা কর্তৃপক্ষ এই বিশেষ দিকটির দিকে নজর দিচ্ছে না, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত মাসে, রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের ফলে তার বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর চাপের পর পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে সাহায্য চেয়েছে। চীনের বিআরআইতে অংশগ্রহণকারী দেশটির বেইজিংয়ের কাছে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে যা তার মোট বৈদেশিক ঋণের ৬ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিসহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ আরও ৪ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে। তিনি আশাবাদী যে, দেশ তাদের কাছ থেকে ঋণ পাবে। শ্রীলঙ্কা মে মাসে ঋণ খেলাপির মুখে পড়ে একটি জরুরি বেলআউটের জন্য আইএমএফের সাথে আলোচনা করছে। পাকিস্তানের বৈদেশিক রিজার্ভও যথেষ্ট কমে গেছে। গত মাসে ৭ বিলিয়ন সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসাবে ১.৩ বিলিয়ন ডলার মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক তহবিলের সাথে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে পাকিস্তান। জ্বালানি ঘাটতির কারণে দৈনিক বহু-ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের বৈদেশিক রিজার্ভও এক বছর আগের ৪৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, দেশের শক্তিশালী রফতানি খাত, বিশেষ করে এর পোশাক বাণিজ্য, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছে এবং এর রিজার্ভ এখনও প্রায় পাঁচ মাসের মূল্যের আমদানির জন্য যথেষ্ট। তবে কামাল একটি বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন, বাংলাদেশ চাপের মধ্যে থাকলেও শ্রীলঙ্কার মতো খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল না।