বাংলাদেশে কি গণতন্ত্র আছে তা কি গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় পড়ে?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৮ পিএম, ৫ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:২৩ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে কি? থাকলে সেটা কেমন গণতন্ত্র, এর মান কেমন? উত্তর আসতে পারে সেটা অত্যন্ত নিম্নমানের। সর্বশেষ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পর পর যে দুটি সংসদ নির্বাচন হয়েছিল, তার হাল কি ছিল? ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনেই একাধিক প্রার্থী ছিলেন না। অর্থাৎ সেসব আসনে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি। এর অর্থ হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে ভোটগ্রহণই করা হয়নি। অথচ এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার নামে সেবার সরকার গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নজির নেই। ২০১৮-এর সংসদ নির্বাচনটি হয়েছিল আরো অভিনব। নির্বাচনের দিনের আগের রাতেই ভোটের বাক্স ব্যালটে ভরে যায়। তাই সকালে আর ভোটারদের ভোট দিতে হয়নি। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, ২০১৮ সালের মতো আগের রাতে ভোট হবে না। আগের নির্বাচনের মতো অন্তত রাতে ভোটগ্রহণ করবে না। আগামী ভোট নাকি অন্তত দিনের বেলাতেই হবে। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। তাহলে প্রশ্ন হলো, গত ২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচনে সরকার কি হস্তক্ষেপ করেছে?
তবে বিষয়টি সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশনকালীন সচিব (নির্বাচন কমিশন সচিব), যিনি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের একজন কমিশনার। সরকারি চাকরিতে অবসর নেয়ার পর নির্বাচন কমিশনের সদস্য বা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
বলা যায়, ‘সচিব’ হিসেবে কৃতিত্ব প্রদর্শনের পর পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) অবশ্য অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের চেয়ে এই নির্বাচন কমিশনারের প্রতি বেশি আস্থা রাখেন বলে শোনা যায়। তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনকালে এই নির্বাচন কমিশন কি ফল দেবে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সূচক কোথায় নিয়ে দাঁড়াবে? এই নির্বাচনে ভোটারদের বা জনগণের কোনো ভূমিকা বা অংশগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে কি? ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের মতো সেটিও হবে জনগণের অংশগ্রহণবিহীন নতুন এক নির্বাচনের দৃষ্টান্ত।
‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এই হাল নিয়ে দেশে বসবাসকারী ও সদূর প্রবাসে প্রবাসীরাও উৎকন্ঠিত। কি হবে এবারের নির্বাচন। বাংলাদেশে মৃতপ্রায় গণতন্ত্র কি টিকবে, না এবার নির্বাচনের কফিনে পেরাকবন্দি হবে গণতন্ত্র। যে বাক্সে পচেগলে শেষ হয়ে যাবে বাংলাদেশ নামক শব্দটি আর মানুষের আশা-ভরসা।
সম্প্রতি এক আলোচনাকালে উঠে আসে আব্রাহাম লিংকনের সেই বিশ্বখ্যাত উক্তিটি। সেটি হলো : ‘Government of the people, by the People and for the People’. ১৮৬৩ সালে গেটিসবার্গের জনসভায় আব্রাহাম লিংকন গণতন্ত্রের যে সংজ্ঞা দিয়েছিলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই সংজ্ঞা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে আজ এ সংজ্ঞার সাথে কোনো মিল আছে কি? বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, এটি গায়ের জোরের সরকার। আগামী নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটবে?
অন্যদিকে ইভিএম নামক একটি সার্কাস চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ভোটারদের ঘাড়ে। যে ইভিএম প্রক্রিয়া পার্শ্ববর্তী দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বেশ আগেই। এই ইভিএম মানবে কি গণতান্ত্রিক দলগুলো, মানবেন কি নেতারা? দেশের জনগণ ! জনগণের আশঙ্কা ইভিএম-এ ভোট মানেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে হত্যাকারীদের রাজসিংহাসনে বসানো। ইতিমধ্যেই বর্তমান সরকার একটি স্বৈরচারি সরকার হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে। তবে দেশের মানুষ যে গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ পর্যন্ত ব্যালটে সিল মেরে দেশে সরকার নির্বাচিত করেছে, আজও তাই চায়, চেয়েও যাবে তাই।