র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা
‘বাংলাদেশ সরকারকে বিস্মিত হতে দেখে আমরাও বিস্মিত’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৪২ পিএম, ১৯ জুন,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০০ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ সরকারের বিস্ময়মূলক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বিস্মিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। দূতাবাসের মুখপাত্র কার্লা থমাসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। মার্কিন দূতাবাস ‘অ্যামটক’ নামে সাক্ষাৎকারধর্মী নতুন এক প্রোগ্রাম চালু করেছে, যাকে অনিয়মিত অনুষ্ঠান হিসেবে বর্ণনা করে দূতাবাস বলেছে, এটি তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হবে। গত শুক্রবার প্রচারিত অ্যামটক-এর উদ্বোধনী পর্বের অতিথি ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। মুখোমুখি ওই অনুষ্ঠানে তিনি সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন। দু মাস আগে ঢাকায় দায়িত্ব নেয়া পিটার হাস বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের চেয়ে ভালো কোনো জায়গায় থাকার কথা ভাবতে পারছি না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এই ৫০তম বার্ষিকীতে যখন আপনি পেছনে তাকাবেন, দেখবেন যে, এই সম্পর্ক কতদূর এসেছে।
কী অসাধারণ সব অর্জন করেছে বাংলাদেশ। যে দেশের জন্ম হচ্ছে যুদ্ধের মধ্য থেকে, আর্থ-সামাজিক অবস্থার দিকে তাকালে দেখবেন এই ৫০ বছরে বাংলাদেশ কী অসাধারণ উন্নয়ন করেছে। এই রূপান্তর ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কেও। যেখানে আমি পছন্দ করি এটি ভাবতে যে, মনে হয় আমরাই এই ৫০ বছরে বাংলাদেশের সেরা বন্ধু ছিলাম।
এ দেশের অর্জনে আমরা ৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছি। এটি করেছি বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তার জন্য। এখনো আমরা একই সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’ বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, যেখানে কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমেছে ব্যাপকহারে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অনেক অনেক বেড়েছে। আর আমি শুধু রোমাঞ্চ বোধ করতে পারি এ নিয়ে যে, আগামী ৫০ বছর দেখতে কেমন হবে? আমি আসলে যা বলতে চাই তা হলো- আমরা ততটাই দ্রুত যেতে প্রস্তুত যতটা দ্রুতগতিতে বাংলাদেশ এই অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে চায়। আমরা অনেক অনেক ক্ষেত্রে কাজ করতে চাই। যার অন্যতম হলো বিদ্যমান নিরাপত্তা সহযোগিতা। সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা অনেক দিন ধরে যৌথ মহড়া করে যাচ্ছি, বাংলাদেশ ও তার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে।’
‘বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের নেতৃত্বে রয়েছে গোটা বিশ্বে এবং আমরা শিখতে পারি এবং তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজের মাধ্যমে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি স্পেশাল অপারেশন্স, দুর্যোগে মানবিক ত্রাণ সহায়তা ও অন্যান্য বিষয়ে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চাই আমাদের কিছু সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি নিয়েও। দ্বিতীয় জায়গাটি হলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। আমরা উভয়ই প্রতিষ্ঠিত হয়েছি গণতন্ত্রের ধারণার ওপর দাঁড়িয়ে। আমাদের বেলায় সে ধারণা হলো প্রতিনিধিত্ব ছাড়া কর আরোপ নয়। আর তাই বিষয়টি নিয়ে আমাদের অনেক কিছু করার আছে।’ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের কিছু উদ্বেগও আছে এই বাংলাদেশে, যেগুলো নিয়ে কথা বলতে আমরা কুন্ঠিত নই। কিন্তু এসব আলোচনা হতে হবে খোলামেলা। উপলব্ধি করতে হবে যে আমরা কাজ করছি এসব নিয়েও। আর শেষ জায়গাটি হলো অর্থনীতি, যেটিকে আমি সামনের দিনে অসাধারণ অগ্রগতির একটি ক্ষেত্র হিসেবেই দেখি। আর এসব জায়গায় আমরা খুঁজে বের করতে চাইছি সেসব সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে যেখানে আমাদের এগুতে হবে। আমার লক্ষ্য হলো ঠিক সেই গতিতে এগিয়ে যাওয়া যেভাবে বাংলাদেশের সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণ চায়।’
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমি শুধু বলব, এটি ন্যায্য নয় কেবল এই অর্থে যে, আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বছরে ৮ বিলিয়ন, ১০ বিলিয়ন ডলারের। কিন্তু তার প্রায় সবটাই বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য ও সেবা আমদানির বিপরীতে। আমার যেমন আগ্রহ নেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাওয়াতে এবং সেটি কেবলই বাড়তে দেখতে চাওয়াতেও নয়। আমি নিশ্চিত করতে চাই যে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো এই বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা করতে পারছে এবং দরপত্র প্রক্রিয়া ও ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলো যতটা সম্ভব স্বচ্ছ ও ন্যায্য হয়েছে।’
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মার্কিন ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচন্ড উচ্ছ্বাস আছে :
বাংলাদেশের বাজার নিয়ে মার্কিন ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচন্ড উচ্ছ্বাস আছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এখানকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধির কারণে এই উচ্ছ্বাস। এখানকার ক্রমবর্ধনশীল মধ্যবিত্ত শেণির কারণেও এই আগ্রহ। রাষ্ট্রদূত বলেন, অবশ্যই আমেরিকান কোম্পানিগুলো প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বলে না যে, আমি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করব। তারা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবে তাদের বিদেশে বিনিয়োগ করা দরকার। রাষ্ট্রদূত বলেন, তারপর তাদের মনে প্রশ্ন জাগে আচ্ছা, আমার তাহলে কোথায় ব্যবসা করা দরকার? কোনটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য? আমার মনে হয় যে, বাংলাদেশ কাজ করতে পারে নিজেদের আরও আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করতে। এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির জন্য নয় বরং বাংলাদেশের নিজস্ব বেসরকারি খাতের বিকাশের জন্যও। আমি সত্যিই আশা করি তারা যেন সেই সুযোগ পায় এবং যেন বলতে পারে তাদের সম্ভাবনা হিসেবে তারা এখানে যা দেখছে তা নিয়ে। অপর প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, সবচেয়ে বড় ইস্যুগুলোর মধ্যে যেটি প্রায়ই বাংলাদেশের সরকার সামনে আনে, তা হলো জিএসপি সুবিধা ফের চালু করার অনুরোধ। জিএসপি হলো জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কিছু শুল্ক ছাড় দেয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর। সেই ট্র্যাজেডির পর আমরা শ্রম অধিকার এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের কাছে অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরেছি। আমরা এসবের বাস্তবায়ন চাই ফের জিএসপি শুরু করার আগে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশ এখনো সেসব পূরণ করেনি। কিন্তু তারা ক্রমাগত জিএসপি-বাধা তুলে নিতে বলছে। আবারো এটি তারই অংশবিশেষ যেখানে আমরাও সানন্দে সেই গতিতেই যেতে চাই যে গতিতে বাংলাদেশ সরকার যেতে চায়। আমি মনে করি, বাংলাদেশের জিএসপি প্রতিবন্ধকতা তুলে নেয়াটা একটি রূপান্তরমূলক বিষয় হবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য এবং বাংলাদেশের জন্যও। কারণ এই নয় যে জিএসপির অধীনে পাওয়া সুবিধাগুলো বিশাল কিছু। রাষ্ট্রদূত বলেন, একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প জিএসপি সুবিধা পাওয়ার যোগ্য, যেটি তারা নয়। এখন আসল সমস্যা হলো বাংলাদেশ যতক্ষণ না জিএসপি সুবিধার জন্য যোগ্য হচ্ছে ততক্ষণ এটি অংশগ্রহণ বা তহবিল গ্রহণের অনুমতি পাবে না আমাদের নতুন ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে। এই ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশন গড়ে তোলা হয়েছে বেশকিছু কাজের জন্য। রাজনৈতিক ঝুঁকিবীমা প্রদান তার একটি। এটি ইকুইটিভিত্তিক অর্থায়ন করতে পারে। এটি প্রকল্পের জন্য ঋণভিত্তিক অর্থায়নও করতে পারে এবং সাধারণত এগুলো হয় বড় বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পে। সেটি রাস্তাঘাটই হোক, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি বা স্বাস্থ্যসেবা খাতে হোক।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞায় মানুষের মনোযোগ বেশি, অন্য সহযোগিতার বিষয়গুলো ভুলে যাচ্ছে :
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর নিরাপত্তা সহযোগিতার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এর বেশ ক’টি দিক আছে। আমার মনে হয় মানুষ র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে এবং চলমান অন্যান্য সহযোগিতার বিষয় ভুলে যাচ্ছে। আমরা পারস্পরিক সহযোগিতাও করি। আমরা এরই মধ্যে সেনাবাহিনী নিয়ে কিছুটা কথা বলেছি। কিন্তু আমরা সব ধরনের বিষয়ে সহযোগিতা করি যেমন আইন প্রয়োগ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এবং এসব বিষয়ে আমাদের খুব গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া আমরা বিচার বিভাগ ও আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেই। পুলিশের জন্যও আমাদের অনেক প্রশিক্ষণ রয়েছে। আমরা এই যে এত প্রশিক্ষণ ও অংশীদারিত্ব করছি সামনে তা চালিয়ে যেতে এবং আরও গভীর করতে আমরা খুবই আগ্রহী। হ্যাঁ, অবশ্যই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিষয়টি আছে যেখানে আমরা গত ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। এবং তারপর অনেকবার শুনেছি যে, বাংলাদেশ এতে কতো অবাক হয়েছে! সম্ভবত আমরাও প্রায় বিস্মিত তাদের বিস্ময় দেখে। কারণ ২০১৮ সালেই আমরা প্রশিক্ষণ দেয়া বন্ধ করেছিলাম র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে, কারণ মানবাধিকার নিয়ে আমাদের উদ্বেগ ছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা আমাদের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এসব উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমরা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও এটি তুলে ধরেছি। ফলে নিষেধাজ্ঞাটা বিস্ময় হিসেবে এলেও কিন্তু আমাদের যে উদ্বেগ ছিল সেটি নিয়ে বিস্ময় থাকার কথা নয়। অনেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমি মনে করি কি না এতে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে? আমি শুধু তাদের বলি এমন হতে হবে তা আমি মনে করি না। আবারো বলছি, অনেক বিস্তৃত ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করি। এটি তাদের মধ্যে একটি।’
র্যাব এবং অন্য দ্বান্দ্বিক বিষয়ে বসা-কথা বলাই সঠিক পন্থা :
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বিস্তৃতি ও গভীরতার বর্ণনা দিয়ে মার্কিন দূত বলেন, ‘আমাদের এই সম্পর্কে অন্য দ্বন্দ্বও রয়েছে। এত গভীর এবং বিস্তৃত সম্পর্কের মধ্যে কিছু বিষয়ে দ্বন্দ্ব থাকাটাই স্বাভাবিক। যেমনটি আমাদের আছে। কিন্তু আমি আমাদের উভয়কে যা করতে দেখতে চাই, র্যাবসহ অন্য প্রতিটি বিষয়ে, তা হলো এক সঙ্গে বসা এবং কথা বলা।’ রাষ্ট্রদূত বলেন, সেই বৈঠক এবং আলোচনায় হয়ত আমরা আমাদের চাওয়াটা বললাম। বাংলাদেশ সরকার তার কথাটা বলল। তারা (বাংলাদেশ) বলতে পারে না, আমরা এটি করতে পারব না। সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এটি বলতেই পারে। কিন্তু এই দ্বন্দ্ব বা ভিন্নমতের কারণে আমরা পরস্পর থেকে দূরে সরে যাব না বরং আমরা এগিয়ে যাব। এমনও বিষয় আছে যেখানে আমরা কিছু চাইব, তারা বলবে, না, আমরা এটি করতে পারবো না। তারপরও আমরা এগিয়ে যাবো। আমার মনে হয় আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার এটাই সঠিক পন্থা।’
আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচনই যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র চাওয়া, বাংলাদেশের মানুষও তা-ই চায় :
বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন দূত বলেন, ‘প্রথমত আমি স্বীকার করছি যে, যুক্তরাষ্ট্রে সবকিছু একেবারে নিখুঁত নয়। আমাদের সংবিধান বলে আরও বেশি নিখুঁত হতে।’ সংবিধানের সেই চেতনাকে ধারণ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি সামিট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজন করেছেন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের উন্নততর চর্চা নিশ্চিতে আর কী কী করা যায় তা নিয়েই সেই সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বেশকিছু অঙ্গীকার করেছে। জর্জ ফ্লয়েড-পরবর্তী সময়ে মার্কিন পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা এবং তাদের কার্যপ্রণালী এবং জবাবদিহিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচন্ড পরিমাণে আত্মমূল্যায়ন ও তর্কবিতর্ক হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা সত্যিই সংগ্রাম করছি এবং খোলাখুলি বিতর্ক করছি গোটা যুক্তরাষ্ট্রে। আবার মানুষ দেখেছে কীভাবে আমাদের বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে কারচুপির অভিযোগ এসেছে। এ নিয়ে আদালতগুলোতে মামলাও হয়েছে। আমার কাছে, এর সবই এটি নিশ্চিত করার অংশ যে গণতন্ত্র চলমান আছে। বিষয়টি এমন নয় যে কোনো এক সময় গণতন্ত্র ছিল। এ নিয়ে ক্রমাগত আমাদের কাজ করে যেতে হবে। বাংলাদেশে কিছু বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে দেশের মানুষ ও সরকার কাজ করতে পারে জানিয়ে মার্কিন দূত বলেন, আমি মনে করি নির্বাচন তার একটি ভালো কাঠামো প্রদান করে। কারণ জাতীয় নির্বাচনের জন্য এক বছরেরও বেশি সময় আছে।
আমি এটিও স্পষ্ট করতে চাই যে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পছন্দ নেই। আমাদের কোনো ভোট নেই। আমরা কোনো দল বা প্ল্যাটফর্ম বা কোনো কিছুরই পক্ষ নেই না। সেটি আমাদের কাজ নয়। তবে আমরা যা দেখতে চাই তা মনে হয় বাংলাদেশের সব মানুষই দেখতে চান। তা হলো, আন্তর্জাতিক মানদন্ড মেনে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি নির্বাচন যেখানে বাংলাদেশের মানুষ তাদের পরবর্তী নেতাদের বেছে নিতে পারবে। আমরা এমন একটি অবাধ, প্রতিযোগিতামূলক সহিংসতামুক্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া চাই যা হবে দমন-পীড়নমুক্ত। এটি বলতে বা শুনতে খুব সহজ হলেও আমি বুঝি এটি আসলে ততটা সহজ নয়। আমরা ঠিক এই জিনিসটিই খুব করে দেখতে চাই এবং আমি স্বাগত জানাই তেমন কিছু ইঙ্গিতকে, কিছু সংকেতকে যেগুলো আমরা পাচ্ছি। রাষ্ট্রদূত বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাবে। আমার মনে হয় এটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। নির্বাচন আসলে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ফলে এটি দেখা জরুরি যেন সবাই এখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে নিরাপদ ও সুরক্ষিত বোধ করে যে, কোনো পর্যায়ে তাদের অংশগ্রহণ থাকবে এবং কী কী থাকবে না আগামী নির্বাচনে।