ভাগ্য বদলের আশায় মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েও বেতন-ভাতা পাননি ৩৭ শতাংশ নারী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:১৫ পিএম, ১৩ মে,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৪৭ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ভাগ্য বদলের আশায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বঞ্চিত হয়েছেন ন্যূনতম মানবাধিকার সুবিধা থেকে। নির্যাতিত হওয়াদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ নারী শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েও কোনোরকমে বেতন-ভাতা পাননি।
পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ না থাকায় বাংলাদেশ থেকে আরব দেশগুলোতে যাওয়া নারী শ্রমিকরা নানা নির্যাতনের শিকার হলেও প্রতিকার চাইতে পারেন না। বিভিন্ন আরব দেশ থেকে ফিরে আসা নারী শ্রমিকদের মধ্যে করা এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই)-এর উদ্যোগে এই জরিপ করে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গবেষক দল। এতে অর্থায়ন করে যুক্তরাজ্য সরকারের সাহায্যকারী সংস্থা সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর ডেভেলপমেন্ট ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড লার্নিং (সেডিল)।
ওই জরিপের আওতায় বিদেশ ফেরত ৬৫৫ জন নারীর তথ্য নেয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে প্যানেল আলোচনায় বক্তারা বাংলাদেশি নারী অভিবাসন শ্রমিকদের দুরবস্থার চিত্র ও এর সমাধানে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।
নারী অভিবাসীদের ওপর কোভিড ১৯-এর প্রভাব বিষয়ে করা এই মোবাইল জরিপে দেখা গেছে, আরব দেশগুলোতে যাওয়া নারী অভিবাসীদের ২৮ শতাংশ কখনও স্কুলে যাননি। ৪৭ শতাংশ প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে, মাধ্যমিক বা দাখিল পাসের সংখ্যা ১৯ শতাংশ আর উচ্চ মাধ্যমিক বা আলিম পাসের হার ১৯ শতাংশ।
এদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসেন ৬০ শতাংশ। তবে মাত্র ১০ শতাংশ জানিয়েছেন কোভিড-১৯ জনিত প্রভাবে তারা দেশে ফিরে এসেছেন। এদের অধিকাংশই ২০২০ ও ২০২১ সালে দেশে ফিরে আসেন।
৬৫৫ জনের মধ্যে ৫৫ শতাংশই বিবাহিত। ডিভোর্সী ১৬ শতাংশ। অবিবাহিত ৭ শতাংশ। বিধবা ১১ শতাংশ। ছাড়াছাড়ি হয়েছে এমন আরও ১১ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে আয়োজকরা বলেন, ‘অধিকাংশই বিবাহিত এবং তারা পরিবারের খরচ চালানোর জন্যই বিদেশে শ্রমিক হিসেবে অনিশ্চিত জীবনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছেন।’
দুরবস্থার চিত্র : ৬৫৫ জনের মধ্যে ৩৭ শতাংশ প্রত্যাবাসী তাদের বেতন-ভাতা পাননি। এ ছাড়াও আরও ৩০ শতাংশ দেশে ফিরে আসার অপেক্ষা করতে করতে জমানো টাকা খুইয়েছেন। সবাইকেই ধার করে দেশে আসতে হয়েছে। মাত্র ৬৫ শতাংশকে তাদের পারিবারিক ব্যয় খোয়াতে হয়েছে।
বিদেশে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাননি ১৪ শতাংশ। একা একা বিদেশে যাওয়ার কারণে ১১ শতাংশ নারী সামাজিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।
দেশে ফিরে আসার পর এসব নারী হয়ত জানে বেঁচে গেছেন কিন্তু এখানেও নানা রকম বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার তারা। কারও কারও পরিবার তাকে আর গ্রহণ করতে চায়নি। কারও স্বামী আবার নতুন বিয়ে করেছে। খালি হাতে দেশে ফিরে আসায় পরিবারের সদস্যদের জবাবদিহিতার মুখোমুখিও হয়েছেন অনেকেই। প্রত্যাবাসী নারী শ্রমিকদের ৫৩ শতাংশ দেশে কোনো কাজ খোঁজেননি। ২৬ শতাংশ কোনো না কোনো কাজে যুক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ আবার বিদেশের চেয়ে কম আয় করছেন।
বিদেশে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া, মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হওয়া, নামমাত্র খাবার ও বেতনের শিকার হওয়ার পাশাপাশি বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠানোর আরও কিছু দিক রয়েছে। ১৪ শতাংশ নারী প্রত্যাবাসী শ্রমিক জানিয়েছেন, তাদের কোনো অভিবাসন ব্যয় হয়নি। খরচ করে যারা অভিবাসন করেছেন তাদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ পরিবার অথবা বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করেছেন, ২৮ শতাংশ স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার করেছেন। প্রতিটি নারীর গড়ে ৫১ হাজার ৩০০ টাকা (৬০০ মার্কিন ডলার) অভিবাসন খরচ হয়েছে। তুলনায় তাদের গড় মাসিক হাউজহোল্ড ব্যয় ১১ হাজার টাকা (১২৮ মার্কিন ডলার)।
৪৩ শতাংশ নারী প্রত্যাবাসীই জানিয়েছেন যে, তাদের যে বেতন দেয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার চেয়ে কম বেতন পেয়েছেন। ২৭ শতাংশ কোনো না কোনো নির্যাতন বা হুমকি-ধমকির সম্মুখীন হয়েছেন। ৪১ শতাংশ অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সে দেশে কোনো নারী বন্ধু বা পরিচিত কেউ ছিল না। প্রত্যেককেই দিনে গড়ে ১৪ ঘন্টা করে কাজ করতে হয়েছে এবং ৭৬ শতাংশ একদিনের জন্যও সাপ্তাহিক ছুটি পাননি।
ফিরে আসার কারণ : কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে আসার কারণ হিসেবে বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে এই জরিপে। কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার আগে স্বাস্থ্যগত কারণে দেশে ফিরে আসেন ৮৩ জন আর পরে ফিরে আসা ১০২ মিলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮৫।
চিকিৎসার অভাবে দেশে ফিরে আসার সংখ্যা কোভিডের আগে ৭২ ও কোভিডের পরে ৯৮ মিলিয়ে মোট ১৭০। পারিবারিক কারণে কোভিডের আগে ৮১ জন আর কোভিডের পরে ৯৬ জন মিলিয়ে মোট ফিরে আসার সংখ্যা ১৭৭ জন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া বা চুক্তি বাতিল সংক্রান্ত কারণে কোভিডের আগে ৯৩ জন ও কোভিডের পরে ১৮৭ জন মিলিয়ে মোট ফিরে আসার সংখ্যা ২৮০ জন।
কেস স্টাডি : কেউ ভাবেননি তিনি জীবিত অবস্থায় দেশে ফিরে আসতে পারবেন। নারী গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব যাওয়ার মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত শরীরে কোনো রকমে জীবন নিয়ে দেশে ফিরে আসেন ঢাকার হাজেরা বেগম।
২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর সৌদি যাওয়ার পর মাত্র পাঁচ দিন ভালো ছিলেন, তারপরই শুরু হয় সীমাহীন নির্যাতন। মাত্র দুজনকে দেখাশোনার কথা বলে সেখানে যাওয়ার পর সাতজনের দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। একমাত্র কাজের লোক হিসেবে ওই পরিবারের বাকি কাজও তাকেই করতে হতো। ছুরি দিয়ে হাত পুড়িয়ে দেয়া, একই হাত থেকে কামড়ে মাংস তুলে ফেলা, ছুরি দিয়ে গোলায় পোঁচ দেয়াসহ নানারকম শারীরিক নির্যাতন করা হয় তাকে। কিন্তু সাহায্য করার কেউ ছিল না কিংবা ওরা কোনো চিকিৎসাও করায়নি।
কাঁদতে কাঁদতে ওই নারী বলেন, ‘এমন একটা অবস্থা গিয়েছে যে, পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত যাওয়ার শারীরিক সামর্থ্য ছিল না। যে পরিবারে থাকতেন সেখানকার শিশুসন্তান কারেন্টে হাত দিতে গেলে তিনি তাকে ধাক্কা দিয়ে বাঁচান। এরপর সন্তানের জীবন বাঁচানোর সুবাদে একটা ধন্যবাদ না দিয়ে উলটো শাস্তি হিসেবে তার হাতে ছুরি পুড়িয়ে ছ্যাঁকা দেয়া হয়। সেই পোড়া নিয়ে বিনা চিকিৎসায় এক মাস ভোগার পর পরিবারের বয়স্ক সদস্য অসুস্থ হলে তার সঙ্গে হাসপাতালে গেলে তবে চিকিৎসার সুযোগ পান। তাও সেখান থাকা এক বাঙালি নারী তাকে পোড়ার মলম ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন।’
ঘরে পঙ্গু স্বামী। বাবা-মা কেউ বেঁচে নাই। একমাত্র আয়কারী ব্যক্তি হাজেরা যখন আধপেটা অবস্থায় অকথ্য নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন তখন তিনি সাহায্য চাওয়ার উপায় জানতেন না। ময়লা ফেলার উছিলায় বাইরে এসে কোনো বাঙালি পেলে সাহায্য চাইতেন। এভাবে বাংলাদেশি কয়েকটা সংস্থার সহায়তায় কোনোরকমে জান নিয়ে দেশে ফিরে আসেন হাজেরা।
একই ধরনের গল্প দিনাজপুরের শিউলির। গার্মেন্টে কাজ করার ভিসা নিয়ে জর্ডান যান। সেখানে দুই বছর কাজ করে যখন আর কুলাতে পারছিলেন না, তখন গৃহকর্মী হিসেবে এক পরিবারে যান। কিন্তু না সেখানেও ভালো থাকতে পারেন না শিউলি। না খেতে পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এভাবে এক মাস যায় বিনা কাজে অসুস্থ অবস্থায়। সেখানে ডাক্তার দেখালে বলা হয়, তিনি গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু গ্যাসের ওষুধে কোনো কাজ না হওয়ায় তিনি দেশে আসেন ভালো চিকিৎসার জন্য। দেশে এসে দেখেন না খাওয়ার কারণে তিনি অপুষ্টির শিকার, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অত্যন্ত কম। সুস্থ হওয়ার পর আবার জর্ডান ফেরার চেষ্টা করলে তিনি জানতে পারেন জর্ডান থেকে তাকে ব্যান্ড করা হয়েছে। তিনি আর ও দেশে ঢুকতে পারবেন না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আসার আগে অসুস্থ অবস্থায় এক মাস কাজ না করায় তার জর্ডান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এখন তিনি সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
হাজেরা বা শিউলির মতো এমন হাজারো নারী আরবের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নানারকম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
সমাধানে করণীয় : সমীক্ষায় কোভিড-পূর্ববর্তী ও পরবর্তীতে নারী প্রত্যাবাসী শ্রমিকদের অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের জন্য করণীয় সম্পর্কে আলোচনা উঠে আসে। ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা তাহেরা জাবীন বলেন, যুক্তরাজ্য বিশ্বব্যাপী মডার্ন সেøভারি মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং নিরাপদ অভিবাসনকে নিশ্চিত করা এর অংশ। তারা এটি মোকাবিলায় নানা কাজ করছেন। আন্তর্জাতিক শ্রমবিষয়ক সংস্থা আইএলও’র সঙ্গে মিলিতভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের কাজ হচ্ছে। এই রিসার্চের ফলাফল তাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ফরেন, কমনওয়েলথ এবং ডেভেলপমেন্ট অফিস (ঋঈউঙ) বৈশ্বিক অভিবাসনের বিস্তৃত বিষয় নিয়ে কাজ করতে নানা ধরনের স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাজ্যের লক্ষ্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী অভিবাসন যেন ‘সুশৃঙ্খল, নিরাপদ, নিয়মিত এবং দায়িত্বশীল’ হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নীতি ও কর্মসূচিগুলো নিয়মিত অভিবাসন থেকে সর্বাধিক সুফল পেতে চায়, অভিবাসনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের সুরক্ষা দিতে চায় এবং যেসব কারণে মানুষ অসদাচরণ ও শোষণের মুখোমুখি হতে পারে এমন অনিরাপদ অভিবাসন করতে বাধ্য হয়, সেগুলো কমানো।
তাহেরা জাবীন বলেন, সুপরিকল্পিত অভিবাসন ব্যবস্থা অর্জনের জন্য অভিবাসীদের যাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। জোরপূর্বক শ্রম ও পাচার রোধ করতে, বাংলাদেশে আমাদের ফোকাস হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া বিভিন্ন বয়সী মেয়ের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা। এটি নিশ্চিতে কাজ করছে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত ওয়ার্ক ইন ফ্রিডম ওও (ডওঋ-ওও) প্রোগ্রাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদ-উল-আরেফীন চৌধুরী নারী শ্রমিকদের কীভাবে বিদেশে পাঠানো হয় তার একটি বিস্তারিত চিত্র প্রেজেন্টেশন আকারে তুলে ধরেন। ম্যাপিংয়ের সাহায্যে একজন নারী কতগুলো ধাপে নির্যাতনের শিকার হন তার চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
সমীক্ষার একজন গবেষক অস্ট্রেলিয়ার লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নাজমুন এন রত্না বলেন, ‘বাংলাদেশি নারী অভিবাসীদের ওপর কোভিড ১৯-এর তেমন প্রভাব পড়তে দেখা না গেলেও আমাদের প্রত্যাবাসী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নেয়া অথবা দেশেই কোনো কর্মসংস্থান বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার নারীদের মানসিক সুস্থতার প্রতিও নজর দিতে হবে।’
ওয়ার্কশপের শেষ অংশে ইফপ্রির প্যানেল চেয়ার ড. মুজানা আলভীর মোডারেশনে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, পল্লীকর্ম সহায়তা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার ও বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম।
ড. নমিতা হালদার নারী শ্রমিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপরে গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার আগে ভাষা শিখে গেলে মেয়েরা সহজেই সাহায্য পেতে পারে। কিন্তু তারা জানেই না কোথায় কীভাবে সাহায্য চাইতে হবে।
ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘অভিবাসী বিষয়ে দেশে জনগণমুখী কাজ হচ্ছে না। সরকারমুখী কাজ হওয়ার কারণে এসব উদ্যোগ যথেষ্ট না। রিক্রুটিং এজেন্সি মেয়েদের ভাষা শেখালেও বিদেশে মাটিতে তাদের ওপর কী ধরনের নির্যাতন হতে পারে বা তারা কী রকম পরিস্থিতির শিকার হতে পারে সে কথা কেউ বলে পাঠায় না। এসব বিষয়ে ফরেন অ্যাফেয়ার্স ও শ্রমবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ আছে। দেশেই মেয়েরা যেখানে নির্যাতনের শিকার হলে কথা বলে না বা অভিযোগ করে না সেখানে বিদেশের মাটিতে স্বল্প বা অশিক্ষিত একটি মেয়ের পক্ষে সাহায্য চাওয়া সহজ নয়।’
সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘দেশের মেয়েরা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে। রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমেও তারা নানারকম বৈষম্যের শিকার হন।’
বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরাই কেন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, সরকারের কোনো গলদ আছে কি না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পল্লীকর্ম সহায়তা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার বলেন, ‘দেশের শ্রমিকরা যে কোনো মূল্যে বিদেশ যেতে চায়। অনেকেই জেনে না জেনে শর্তগুলোতে স্বাক্ষর করেন। সেখানে যেয়ে রুটি খাবেন এমন মর্মে স্বাক্ষর করে পর ভাতের জন্য কান্নাকাটি করেন। এমন অসহায় অবস্থার সুযোগ অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়ে থাকে। দেশে যা শুনি, ওখানকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। নিরক্ষর মেয়েরা সাহায্য চাইতেও জানে না। আবার বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেতনও সর্বনিম্ন যা বাড়ানো উচিত। এ সময় তিনি আবিরন হত্যাকান্ডের বিচারের বিষয়টি তুলে ধরেন।’
অন্যদিকে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘বিদেশ-ফেরত নারী শ্রমিকদের গল্পগুলো শোনার পর বোঝা যায়, সৌদি আরবের বাংলাদেশের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। বাংলাদেশে এই নিয়ে কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করতেও দেখা যায় না। মৌলবাদী শক্তি দেশের মধ্যে মেয়েদের ওপর নানারকম বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করে না। এমনকি শ্রমিক নির্যাতন দমন প্রসঙ্গে নেগোশিয়েশন ইস্যুতেই দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।’