মহান মে দিবস আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৬ পিএম, ১ মে,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৪৩ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান, তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান! বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কুলিমজুর’ কবিতার এই অসামান্য লাইন দুটো জানান দেয় শ্রমিকের সম্মান, প্রকৃত মর্যাদা। আজ মহান মে দিবস। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে এ দিনটি পালিত হয়, যার পরিচয় ‘মে দিবস’ হিসেবে। ১৮৮৬ সালের মে মাসে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের এক ঐতিহাসিক আন্দোলন ও সংগ্রামের পুণ্যস্মৃতির সম্মানে এই দিনটি পালিত হয়।
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় দিন পয়লা মে। ১৮৮৬ সালের এই দিনে শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের অধিকারের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে বিশাল শ্রমিক জমায়েত ও বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ১১ জন। এর পরপরই হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২য় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সব দেশেই আজ পালিত হচ্ছে দিবসটি। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে মে দিবস পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, মহান মে দিবস উপলক্ষে আমি দেশে বিদেশে কর্মরত সকল বাংলাদেশি শ্রমিক-কর্মচারী এবং বিশ্বের সকল শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষকে আন্তরিক শুভেচছা ও অভিনন্দন জানাই। তাদের উত্তরোত্তর সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করি। ১৮৮৬ সালের মে মাসে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমেরিকার শিকাগো শহরের ‘হে মার্কেটে’ জীবনদানকারী এবং এই আন্দোলনের জন্য ফাঁসিকাষ্ঠে আত্মদানকারী প্রতিবাদী শ্রমিকদের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
পহেলা মে, বিশে^ কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের মহান মে দিবস। শ্রমিকের ঐতিহাসিক অবদানের ফলেই বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। অথচ আজও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নিপীড়িত শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান ও শ্রমের মর্যাদা স¤পর্কে সব সময় আপোসহীন সংগ্রাম করে গেছে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় এবং তা রক্ষায় এই দলটি প্রতিশ্রুতি পালনে কখেনোই পিছপা হয়নি। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সরকারে থাকতে এদেশের শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছে। শ্রম আইন সংস্কার ও আধুনিকীকরণ, বেতন ও মুজুরি কমিশন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও তাদের বোনাস প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের সন্তানদের চিকিৎসা ও তাদের লেখা পড়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশের শ্রমিক সমাজের ভাগ্যোন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও প্রয়োগ করেছে। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে এই প্রচেষ্টা আগামীতেও অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
মহান মে দিবস উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে বলেন, মহান মে দিবস উপলক্ষে আমি বাংলাদেশ ও বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। তাদের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করি।
বিশ্ব ইতিহাসে মে দিবস দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস, অনেক রক্তঝরার কাহিনী। শ্রমিকের ন্যায্য দাবি ও শ্রমের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমেরিকায় শিকাগো শহরে ১৮৮৬ সালের মে মাসে রচিত হয়েছিলো এক রক্তমাখা ইতিহাস। শোষকদের বিরুদ্ধে শোষণ ও বঞ্চনার শিকার প্রতিবাদী শ্রমিকদের আত্মাহুতির রক্তাক্ত পথে সারাবিশ্বে শ্রমিকদের দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের ন্যায্য অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছিলো। তাই মে দিবস দুনিয়ার শ্রমিকদের এক হওয়ার ব্রত। মে দিবস আন্তর্জাতিক সংগ্রাম আর সৌভ্রাতৃত্বের দিন। মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের উৎসব, জাগরণ, ঐক্য ও প্রেরণার দিন। সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম নিজেকে সবসময় একজন শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। শ্রমিকদের দুটো হাতকে তিনি উন্নয়নের চাবিকাঠি ভাবতেন।
ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনে অনেক শ্রমিক-কর্মচারী, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে, তারা অনাহার, অর্ধাহারে নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছে। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করে বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-নেতারা কেবল লিপ সার্ভিসেই ব্যস্ত রয়েছেন। যার ফলে ভুক্তভোগীদের কষ্টের সীমা তীব্র মাত্রায় উপনীত হয়েছে।
সকল শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। তাদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় আমরা সর্বদা সচেতন ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সমাজ প্রগতির পতাকাবাহী শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা সংকল্পবদ্ধ। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আগামীতেও আমরা একইভাবে শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাবো।
আজকের এই মহান দিনে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষায় সবাইকে দায়িত্বশীল ও উদ্যোগী হওয়ার জন্য আমি আহবান জানাই।