শতভাগ বিদ্যুতের ঘোষণায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ পলাশবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৮ পিএম, ২৭ এপ্রিল,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৫০ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
শতভাগ বিদ্যুতায়িত হওয়ার পরও ক্রমশ বেড়েই চলেছে লোডশেডিং। আর এতেই তীব্র লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা পলাশ উপজেলা। দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় থমকে যাচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম। ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে তীব্র লোডশেডিংয়ে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জনজীবন। ইফতার, সেহরি এবং তারাবির নামাজের সময়েও অনেক এলাকায় থাকছে না বিদ্যুৎ। যদিও ঘোড়াশাল পল্লী বিদ্যুৎ আঞ্চলিক অফিস বলছে, পলাশ তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের গ্রিড থেকে আমাদের চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাচ্ছি। পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগ, দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যায় নায়। টানা কয়েকদিনের লোডশেডিংয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর, দোকান, মার্কেট, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্নস্থানে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকাসহ অপর ৪টি ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। আর মাত্র কিছুদিন পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর মুসলিমদের এই গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়লেও বিদ্যুতের সংকটে তা এক রকম অচল হয়ে পড়েছে। ফলে প্রচন্ড গরমের মধ্যে ক্রেতাদের মার্কেটগুলোতে আসতে হচ্ছে। একই কারণে উপজেলার বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ফটোস্ট্যাট-কম্পিউটারের দোকানে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে ২-৩ ঘন্টার আগে ফিরে আসার কোনো লক্ষণ নেই। ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কবলে উপজেলার প্রায় ৪৫ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ঘোড়াশাল বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী মুন্না, সিরাজুল, বাবুলসহ একাধিক দোকানি ও মানবাধিকার সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু ঘন ঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের ব্যবসা- বাণিজ্য একবারে লাটে উঠছে। পলাশ নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না। অভিযোগ জানানোর জন্য বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের যেসব নাম্বার দেয়া আছে, সেগুলো এখন বন্ধ থাকে, খোলা থাকলেও কল দিলে কেউ রিসিভ করে না। উপজেলার বালুচরপাড়ার বাসিন্দা মুনসুর মিয়া এবং গজারিয়ার সাধুরবাজারের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের এলাকায় আগে কখনো বিদ্যুতের এমন লোডশেডিং হয়নি। ইদানীং দিনে রাতে প্রায় ৪-৫ ঘন্টার অধিক সময় বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুতের এমন লোডশেডিং দেখে মনে হয়, যে কোনো অজপাড়া গাঁয়ে বসবাস করছি।’ উপজেলার গড়পাড়া গ্রামের বিসমিল্লাহ এমব্রয়টরির মালিক জাহিদ মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে আমার কারখানার মেশিনগুলো অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে। এতে করে কারখানার কাপড় উৎপাদন কমে যাচ্ছে।’ নতুনবাজার এলাকার ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী ইব্রাহীম মিয়া জানান, ‘ওয়ার্কশপের কাজগুলো পুরোপুরি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুতের অপেক্ষায় থাকতে হয়। গত এক মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক হারে লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের পোলট্রি শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানার মালিকরা।’
এসব বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নরসিংদী-১ ঘোড়াশাল আঞ্চলিক অফিসের ডিজিএম আকবর হোসেন জানান, শতভাগ বিদ্যুতায়নের অংশ হিসেবে পলাশ উপজেলায় ১১৮টি গ্রামের মোট ৪৫ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। অধিক লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করে ডিজিএম বলেন, ‘গ্রাহকদের চাহিদার তুলনায় ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের গ্রিড থেকে আমরা অর্ধেক বিদ্যুৎ পাচ্ছি। আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার থেকে ৬৩ মেগাওয়াট করে ১২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতাম। কিন্তু গত কিছুদিন পূর্বে ৬৩ মেগাওয়াটের একটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যায়। আর তাই আমরা অর্ধেক বিদ্যুৎ দিয়ে কোনোমতে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে কাজ চালাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন আরেকটি ৭৫ মেগাওয়াটের পাওয়ার ট্রান্সফরমার বসানোর ওয়ার্কঅর্ডার হয়ে গেছে; এখন সেই সুবিধা পেতে সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। ঈদের ছুটির সময় সরকারি-বেসরকারী অফিস, কল-কারখানা ও বিভিন্ন স্থাপনা বন্ধ থাকায় নতুন ট্রান্সফরমার না পেলেও লোডশেডিং থাকবে না। আর আমরা যদি দ্রুত সময়ে নতুন ট্রান্সফরমার পাই তাহলে বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার ঠিক হয়ে যাবে।’ এ ব্যাপারে ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র আল-মুজাহিদ হোসেন তুষার, পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা আফসানা চৌধুরী, পলাশ থানার ওসি ইলিয়াশ এবং সমস্থ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পৌরসভার কাউন্সিলরসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, পল্লী বিদ্যুতের জিএম, এজিমসহ গতকাল সকালে বিদ্যুৎ কিভাবে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায়- এ নিয়ে আলোচনা সভা বসে। কারণ বিদ্যুৎ ঠিকমতো পাওয়ার জন্য গতকাল পলাশের জনগণের বাদ জোহর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করার কথা ছিল। বিধায় কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে এবং আলোচনা সভা বসে। আলোচনায় দ্রুত বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান করার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন।