আট বছর পর ফের রেকর্ড তাপমাত্রা রাজশাহীতে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৫ পিএম, ১৫ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৪৮ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
রাজশাহীতে চলমান তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করেছে। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে।
আজ শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর বিকেল ৩টার দিকেও একই তাপমাত্রা ছিল।
পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ আট বছর পর তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি ছাড়াল। এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাই দেশের সর্বোচ্চ এ তাপমাত্রায় পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে গতকাল অসহনীয় হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জীবন। অব্যাহত তাপপ্রবাহে মানুষের জীবন যেন যায় যায় করছে। অগ্নিদহনে পুড়ছে সবুজ রাজশাহী। বাতাসে যেন অনুভূত হচ্ছে আগুনের হলকা। সকাল থেকে দুপুর গড়াতেই তেতে উঠেছে পথঘাট। বাইরে বের হলে চোখ-মুখ যেন পুড়ে যাচ্ছে। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। দুর্বিষহ গরম-খরা-অনাবৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের বোরো ধান। ওষ্ঠাগত গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ।
মৌসুমের টানা তাপদাহে হাঁপিয়ে উঠেছে পশু-পাখিরাও। মরু অঞ্চলের মতো যেন লু হাওয়া বইছে এখানে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে তীব্র হচ্ছে পানির সঙ্কট। অস্বস্তিকর এ খরায় শহর ও গ্রামের দিনমজুর, শ্রমিক, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের প্রাণবায়ু যেন যায় যায় অবস্থা।
আর এ দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন রোগও ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। ডায়রিয়া, জন্ডিস, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ যেমন বাড়ছে, তেমনি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে কেউ কেউ। আকাশে মেঘের দেখা নেই। ঘরের বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। কংক্রিটের ছাদ হোক বা টিনের চালা, উপর থেকে যেন আগুনই নামছে। তীব্র গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নাকাল হয়ে পড়েছে।
দিনভর একদিকে তাপদাহ আরেকদিকে গরম বাতাস। আর রাতে ভ্যাপসা গরম। দুপুরের পর প্রধান প্রধান সড়ক এমনিতেই জনশূন্য হয়ে পড়ছে। যত দিন গড়াচ্ছে তাপমাত্রা ততই বাড়ছে। এক পশলা বৃষ্টির জন্য সবাই যেন চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছে।
রাজশাহীতে এমন পরিস্থিতি সাধারণত বৈশাখের মাঝামাঝি দেখা যায়। কিন্তু এবার শীত কম পড়ায় বৈশাখের শুরুতেই চোখ রাঙাচ্ছে আগুন-মুখো সূর্য। এ সময় সাধারণত ঝড়-ঝঞ্ঝা লেগেই থাকে। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলে এবার বৃষ্টির দেখা নেই। প্রকৃতি যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। খরতাপে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহী। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকের বোরো ধান চাষের সেচ খরচ বাড়ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে আম-লিচুর গুটি। বৃষ্টির পানি না পেয়ে প্রায় সব এলাকাতেই আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, মার্চের মধ্যভাগ থেকে এপ্রিলের মধ্যভাগ পর্যন্ত একই মাত্রায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর ওপর দিয়ে। এর মধ্যে গত ৪ এপ্রিল মাত্র ০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগে ও পরে দেশের বিভিন্নস্থানে হালকা বৃষ্টি হলেও খরাপ্রবণ এলাকা রাজশাহীতে তার দেখা নেই। রাজশাহীর ওপর দিয়ে চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ মাঝারি থেকে তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাধারণত দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলে মৃদু তাপদাহ। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মাঝারি তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। ফলে মাঝারি তাপপ্রবাহ রাজশাহীতে গতকাল তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নেয়।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেল ৩টার দিকেও একই তাপমাত্রা ছিল। এছাড়া গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীর ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ গতকাল তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে বলেও জানান এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এর আগে ২০০০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর ৪২ ডিগ্রি অতিক্রম করেনি।
১৯৪৯ সাল থেকে দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড শুরু হয়। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও ওই পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে দেয়া ২৪ ঘন্টার এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে প্রবল বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলেও দিনের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।