বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেছে বিদেশিদের হস্তক্ষেপে!
আলী মামুদ, দিনকাল
প্রকাশ: ০৯:৪৯ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:০৩ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
হঠাৎ করে কি ঘটলো দেশে, চলমান গুম ও বিচারবহির্ভূত খুনের ঘটনা দৃশত কমে গেল! কমে গেলো ক্রসফায়ারের ঘটনাও। বর্তমান সরকারের আমলে ফলাও করে এসব অভিযানের বহুল প্রচার লক্ষ্য করা যেতো। টাকার জন্য মানুষের প্রাণ যেতো বেঘোরে। একজন ‘স্মাটর্’ ওসিই টাকা সংগ্রহের কারণে শত শত মানুষকে হত্যা করেছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। সাজানো ক্রসফায়ারের খবর বিভিন্ন বাহিনীর পিআর সেকশনের মাধ্যমে পরিবেশন করা হতো। পিতার গুমের অভিযোগ করে শিশু কন্যাদের আর্তনাদ জাতীয় প্রেসক্লাবের অঙ্গনে ঘন ঘন দেখা গেছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি ঘটনাগুলো আর তেমন ঘটছে না। কারণ কি? এতোদিন দেশের মধ্যে এসবের বিরোধিতা করা হতো। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হতো না। ড্যাম কেয়ার ভাব ছিল সংশ্লিষ্ট বাহিনীদের। গত ২০২১ সালের শেষের দিলে বিদেশ থেকে খবর আসাে বিদেশিরা এসব গুম, ক্রসফায়ার, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ব্যাপারে তলে তলে খোঁজ-খবর নিয়েছে। শেষে সংশ্লিষ্ট বাহিনী ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরুও করেছেন। স্যাংশনও জারি করেছে।
ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকন এ বিষয়ে বলেন, বিচার বহির্ভূত খুন-গুম ও ক্রসফায়ারের ঘটনাগুলো বর্তমান সরকারের শুরু থেকেই চলে আসছিল। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদও হয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি। এখন কমেছে, কারণ বিদেশিরা বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, ‘অবরোধ’ দিচ্ছে। তদন্ত শুরু করবে বলে জানাচ্ছে।
সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকন বলেন, এতোদিন ধরে যে ফ্রি স্টাইল ক্রসফায়ার চলছিল, তা এখন নেই। বিদেশিদের অবরোধ-এ্যাকশনের সুফল এটি। বাংলাদেশ সামন্তবাদী দলের আহবায়ক কাজী মোস্তফা কামাল বলেন, গুম, ক্রসফায়ার ইত্যাদি যে হারে শুরু হয়েছিল, তা এখন কমে গেল- কারণ কি? মানুষ তাও ভাবছে।
‘মায়ের ডাক’ একটি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন। সংগঠনটি বলছে গুম একটি মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের এক দিন না একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। যারা নির্দেশিত হয়ে সরাসরি গুমের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং এসব ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য যারা অনবরত মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন, তারা উভয়ই সমান দায়ী। তারা বলেছেন, এর আগে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিস এ্যাপিয়ারেন্স কর্তৃক বাংলাদেশে গুম ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হয় এবং গুম ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে বলা হয়। গুমের শিকার ব্যক্তিদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হয়রানির শিকারের অভিযোগ উঠেছে। ২০০৯ থেকে গুম হওয়ার ঘটনা ২০১৪ ও ২০১৮-এর নির্বাচন আগে-পরে বেড়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা এর শিকার হয়েছে। (সূত্র ঃ দৈনিক দিনকাল, গুমের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্য ন্যক্কারজনক (পৃষ্ঠা-১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১)
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া সুফল আসবে না-খায়রুল কবির খোকন : এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবেক এমপি ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন দৈনিক দিনকালকে বলেন, বিচার বহির্ভূত খুন, গুম, ক্রসফায়ার ইত্যাদি ঘটনা এখন কমেছে। দেশের ভেতর থেকে এসবের প্রতিবাদ আগাগোড়াই ছিল এবং আছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক মহল থেকে কিছু কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। মার্কিন ট্রেজারির পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার সুফল আসছে। কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় বোধহয় সুফল এসেছে দ্রুত। এ দেশের মঙ্গলে বিদেশিদের এই সহমর্মিতাকে আমরা শুভেচ্ছা জানাই। তবে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হলে সার্বিক সুফল আসবে না।
আদনান খাসোগীর হত্যাকারীদের ফাঁসি হয়েছে- লিংকন : জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)-এর মহাসচিব সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত মৃত্যুর বিষয়টি বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে। গুমের ঘটনাগুলো তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এক ওসি প্রদীপই শতাধিক মানুষ হত্যা করেছে ক্রসফায়ারের নামে। এর সুবিচার হয়েছে। তার ফাঁসির অর্ডার হয়েছে। এর সুপ্রভাব পুলিশ প্রশাসনের ওপর পড়ছে। তিনি বলেন, সাংবাদিক আদনান খাসোগীকে হত্যাকারীদের ফাঁসি হয়েছে মার্কিনী চাপে সৌদিতে।
বিদেশিদের চাপেই গুম কমেছে- কাজী কামাল : ২০ দলীয় জোটের সদস্য বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের আহ্বায়ক, প্রায় একযুগ বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতার আলোকে কাজী কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, দেশে যে হারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড শুরু হয়েছিল, তা এখন কমেছে। সেটি কিন্তু বিদেশিদের হস্তক্ষেপেই। এতদিন দেশে যে জনমত গড়ে উঠেছিল তাতে কাজ হয়নি।