বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪১ পিএম, ২৯ জানুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৫৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
মৃত্যু অমোঘ, মৃত্যু শ্বাশত। পবিত্র কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সূরা আল ইমরানের ১০৭নং আয়াতে এরশাদ করেছেন "কুল্লু নাফসিন জ্বায়িকাতুল মাওত" অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। জীব জগতে যার জন্ম আছে মৃত্যু তার অবধারিত। তারপরও এই শ্বাশত সত্যকে মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হয়। প্রিয়জনকে চিরতরে হারানোর বেদনা হয়তো মেনে নেওয়া তীব্র কষ্টের বলেই এই অমোঘ সত্যকে আমরা গ্রহণ করতে চাইনা।
মৃত্যুর সেই চিরসত্য সৌন্দর্যকে আলিঙ্গন করে বিগত ২৯জানুয়ারি ২০২১ইং তারিখে আনুমানিক দুপুর সাড়ে তিনটায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নিজ বাড়িতে ইহলোকের সকল মায়া ত্যাগ করে আমাদের সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন সকলের অতি শ্রদ্ধাভাজন প্রিয় বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব সিরাজুল ইসলাম। যিনি সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জনাব রকিবুল ইসলাম বকুলের পিতা।
সময়ের পরিক্রমায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম এর মৃত্যুর পর দেখতে দেখতে একটি বছর পার হয়ে গেল। পাঁচজন কৃতি এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত সন্তানের জনকের গর্বিত পিতা হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ছিলেন বড্ড বিনয়ী। আমার সাথে চাচার পরিচয়ের বেশ কয়েক বছরে প্রায় ৩-৪মাস পরপর ওনার সাথে আমার দেখা হতো। কখনো আগ বাড়িয়ে চাচাকে প্রথমে সালাম দিতে পারিনি বরং চাচাই আমাকে আগে জিজ্ঞেস করতেন বাবা কেমন আছো? আর আমি প্রতিবারই আফসোস করতাম কেন চাচাকে আগে সালাম দিতে পারলাম না? আজন্ম একদম সাধামাটা জীবন যাপন করা মরহুম সিরাজুল ইসলাম চাচা ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন প্রচন্ড সৎ, ধার্মিক এবং নিয়মানুগ মানুষ।
বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুলের খুলনার খালিশপুরের বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে দেখেছি বাসার পাশের মসজিদে আজানের সাথে সাথেই চাচা মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য ছুটে যেতেন। কর্মজীবনে অত্যন্ত সৎ মানুষ ছিলেন মরহুম সিরাজুল ইসলাম। জুট মিলের উচ্চপদস্থ চাকুরীকে অনেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে সেই জুটমিলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়েও তিনি শুধুমাত্র ৫ সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা আর মাথা গোজার ঠাই হিসেবে একটি বাড়ি করা ছাড়া কোন সম্পদ অর্জনের সহায়ক হিসেবে কখনো ব্যবহার করেন নাই। আসর বা মাগরিবের নামাজ শেষে বাড়ির সামনে রাস্তায় হাটাহাটি করতে করতে মরহুম সিরাজুল ইসলাম চাচা এলাকার সকল বয়সী মানুষের সাথে কুশল বিনিময় করে তাদের খবরাখবর নিতেন।
অত্যন্ত পরোপকারী মানুষ মরহুম সিরাজুল ইসলাম চাচার অসাধারণ এই গুণটি পেয়েছেন তার প্রতিটি সন্তান। বড় সন্তান আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুল থেকে ছোট আপা পর্যন্ত সবাই তাই খুলনার যেকোন মানুষের বিপদ আপদের কথা শুনলেই তাদের পাশে দাড়ানোর সর্বাত্নক চেষ্টা করেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের রণাঙ্গণের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সিরাজুল ইসলাম চাচার মৃত্যুতে তাই আমরা সকলেই হারিয়েছি একজন কর্তব্যপরায়ণ, স্বজ্জন, সরলমনা, ধার্মিক এবং পরোপকারী ব্যক্তিকে। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাই পরিবারবর্গ ও আত্নীয় স্বজনের ন্যায় খুলনার প্রতিটি মানুষ শোক ভারাক্রান্ত।
মৃত মানুষের জন্য মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা করা আর সাদকায়ে জারিয়ার বিধান আমাদের ইসলাম ধর্মে রয়েছে। তাই এই লেখার মাধ্যমে আমি সকলের নিকট উদাত্ত আহবান জানাই আসুন আমরা সকলেই মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনের নিকট নিবিষ্ঠমনে প্রার্থনা করি তিনি যেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সিরাজুল ইসলাম চাচাকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করে নেন।
লেখকঃ সামসুদ্দীন চৌধুরী সানিন, সদস্য সচিব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।