ইংল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙে এক যুগ পর ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন স্পেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৯ এএম, ১৫ জুলাই,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:৫৬ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
‘ইট’স কামিং টু হোম’- আরেকবার এই স্লোগান উজ্জীবিত করেছিল ইংল্যান্ডকে। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রথমবার মেজর কোনও টুর্নামেন্টের ট্রফি জয়ের সুযোগ তারা পেয়েছিল টানা দ্বিতীয়বারের মতো। কিন্তু রেফারি বাঁশি বাজতেই আবারও না পাওয়ার যন্ত্রণায় কাতর হলো থ্রি লায়নরা। অদম্য স্পেন তাদের তীব্র লড়াই ছাপিয়ে অবিস্মরণীয় জয় পেলো। ইউরোতে সাত ম্যাচের সবগুলো জিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন লা রোহারা। এক যুগ পর ইউরোর চ্যাম্পিয়ন হয়ে দীর্ঘদিনের ট্রফি খরা ঘুচালো স্পেন।
বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যাড়ম্যাড়ে প্রথমার্ধে কোনও দলই গোলের দেখা পায়নি। তবে বিরতির পর ফিরেই জাল কাঁপায় স্পেন। তারপর কয়েকটি মুহুর্মুহু আক্রমণ। সেগুলো জালের দেখা পায়নি। সুপার সাবের সৌজন্যে গোল শোধ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। কিন্তু এবার সুপার সাবে সাফল্যের মুখ দেখলো স্পেন। তাতে টানা দ্বিতীয়বার ইউরো ফাইনালে উঠেও শিরোপা খরা ঘুচাতে পারলো না ইংল্যান্ড। ২-১ গোলে তাদেরকে হারিয়ে রেকর্ড চতুর্থ ইউরো শিরোপা জিতলো স্পেন।
পঞ্চম মিনিটে স্পেনের ফরোয়ার্ড নিকো উইলিয়ামসের ক্রস আলভারো মোরাতার কাছে পৌঁছানোর আগে ব্লক করে কর্নার বানান জন স্টোন্স। ১৩ মিনিটে সতীর্থের হেড ক্রসে মোরাতার বাইসাইকেল কিক লক্ষ্যে ছিল না।
ইংল্যান্ড প্রথম আক্রমণে যায় ১৬ মিনিটে। বুকায়ো সাকা ডান দিকে বল বাড়ান। তার পাস ধরে কাইল ওয়াকার সামনে আগান। বক্সের মধ্যে তার পাস ব্লক করেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার।
২৫ মিনিটে রুইজকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন কেইন। ২৮ মিনিটে ফ্যাবিয়ান রুইজের শট গুয়েহির গায়ে লেগে সহজেই পিকফোর্ডের হাতে ধরা পড়ে।
চার মিনিট পর ডেকলান রাইসকে চ্যালেঞ্জ করে হলুদ কার্ড দেখেন ড্যানি ওলমো।
৪৪ মিনিটে লাপোর্তের থ্রু বল বক্সের মধ্যে পান মোরাতা। স্পেন অধিনায়ক গুয়েহিকে কাট পাস করে কাটানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ইংলিশ ডিফেন্ডার তাকে প্রতিহত করেন। স্টোন্স বল ক্লিয়ার করে কর্নার বানান।
পেলের ৬৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় লামিনে ইয়ামাল এই অর্ধে ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে ৬৯ সেকেন্ডে ইংল্যান্ডের জাল কাঁপায় স্পেন। দানি কারভাহালের বানিয়ে দেওয়া বলে ইয়ামাল ডান দিক দিয়ে বক্সের বাঁ প্রান্তে পাস দেন। উইলিয়ামস বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে জালে বল জড়ান।
দুই মিনিট পর আরেকটি সুযোগ তৈরি করে স্পেন। উইলিয়ামসের পাসে ওলমো বক্সের মাঝখান থেকে শট নেন, কিন্তু বল ডানপোস্টের অনেক সামনে দিয়ে মাঠের বাইরে যায়।
৫৫ মিনিটে কারভাহাল বল দেন মোরাতাকে। কিন্তু স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড উইলিয়ামসকে পাস না দিয়ে নিজেই শট নেন। গুয়েহি ভালো অবস্থানে থেকে শট ব্লক করেন। পরের মিনিটে মোরাতার আরেকটি শট ক্লিয়ার করেন স্টোন্স। কয়েক সেকেন্ড পর উইলিয়ামসের শট বাঁ পাশের পোস্ট দিয়ে বাইরে চলে যায়।
৬০ মিনিটে কাইল ওয়াকারকে আর্মব্যান্ড দিয়ে মাঠ ছাড়েন কেইন। অধিনায়কের বদলি হন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ের নায়ক ওলি ওয়াটকিন্স।
চার মিনিট পর সাকার বাড়ানো বলে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন বেলিংহ্যাম। তার বাঁ পায়ের শট বাঁদিকের পোস্টের বেশ দূর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৬৭ মিনিটে সাকাকে দেওয়া পিকফোর্ডের পাসে বাগড়া দেন কুকুরেল্লা। বল পেয়ে যান মোরাতা, তার পাস ধরে ডানদিক থেকে ইয়ামাল বাঁ দিকে সরে শট নেন। চমৎকার সেভে স্পেনকে আরও এগিয়ে যেতে দেননি পিকফোর্ড। এরপরই মিকেল ওয়ারজাবালের বদলি হয়ে মাঠ ছাড়েন মোরাতা। তার অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড ওঠে কারভাহালের হাতে।
৬৯ মিনিটেস স্পেনের কর্নার পাঞ্চ করে ফেরান পিকফোর্ড। রুইজ বক্সের বাইরে বল পেয়ে ক্রসবারের উপর দিয়ে মারেন।
পরের মিনিটে মাইনুর বদলি নামা কোল পালমার ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন। মাঠে নামার চতুর্থ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে রকেট গতির শটে জাল কাঁপান তিনি। ৭৩ মিনিটে সাকা ডানপাশ দিয়ে বক্সের মধ্যে বল বাড়ান। বেলিংহ্যাম বক্সের বাইরে ফাঁকা জায়গায় থাকা পালমারকে বল পাঠান। বক্সের প্রান্ত থেকে বাঁ পায়ের জোরালো নিচু শট নেন, ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও বল আটকাতে পারেননি সিমন। আরেকবার সুপার সাব এসে বাঁচিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় দলটি।
গোল হজম করে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে স্পেন। ৮২ মিনিটে উইলিয়ামস বল নিয়ে সামনে আগান। ওলমোকে দিয়ে বল বানিয়ে দেন ইয়ামালকে। ১৭ বছর বয়সী উইঙ্গারের শট দুই হাত দিয়ে রুখে দেন পিকফোর্ড।
খেলা শেষ হওয়ার চার মিনিট আগে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে স্পেন। কুকুরেল্লার সঙ্গে ওয়ান টু পাসে বল পেয়ে গোলমুখের সামনে থেকে জাল কাঁপান ওয়ারজাবাল। সুপার সাবে এবার স্পেন ঘুরে দাঁড়ায়।
৯০ মিনিটেই গোল শোধ দিতে বসেছিল ইংল্যান্ড। পালমারের কর্নার বক্সের মধ্যে খুঁজে পায় রাইসকে, গোলমুখে নেওয়া তার শক্তিশালী হেড ফিরিয়ে দেন সিমন। খুব কাছ থেকে ফিরতি হেড করেন গুয়েহি। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় ছিলেন ওলমো। গোললাইন থেকে হেড করে বল ক্লিয়ার করে স্পেনকে বাঁচান তিনি।
যোগ করা চার মিনিটে আর ভাগ্য পাল্টাতে পারেনি ইংল্যান্ড। গতবার ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হারের পর আরেকবার ফাইনালে আক্ষেপে পুড়তে হলো তাদেরকে।
১৯৬৪, ২০০৮ ও ২০১২ সালের পর আবার চ্যাম্পিয়ন হলো স্পেন। জার্মানিকে ছাপিয়ে এখন তারাই ইউরোপের সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ী। এছাড়া প্রথম ইউরোপিয়ান দল হিসেবে বিশ্বকাপ কিংবা ইউরোতে সাত ম্যাচের সবগুলো জিতলো লা রোহারা, তবে সব মিলিয়ে দ্বিতীয়বার এমন কীর্তি গড়লো কেউ। ২০০২ সালে ব্রাজিল এমন রেকর্ড গড়েছিল।
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন স্পেনের ম্যানসিটি তারকা রদ্রি। আর চার অ্যাসিস্ট ও এক গোলে ইয়াং প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন ইয়ামাল।