ভারতের দ্বিতীয় নাকি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২০ পিএম, ২৯ জুন,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:৫৮ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আজ ট্রফি বুঝে পাওয়ার দিন। যে ট্রফির জন্য গত এক মাস ধরে ২২ গজে চলেছে ক্রিকেট-যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে শেষের অপেক্ষাতে গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। পুরো টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকা দুটি দলের সামনে ট্রফি জয়ের সুযোগ। বাংলাদেশ সময় আজ রাত সাড়ে ৮টায় ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র বারবাডোসের ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে টি-টোয়েন্টির বিশ্বসেরা হওয়ার ধুন্ধুমার লড়াইয়ে নামবে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ১৭ বছরের ইতিহাসে ভারতের সামনে দ্বিতীয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে প্রথম শিরোপার হাতছানি। ফাইনাল ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে নাগরিক টেলিভিশন।
ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল ১৭ বছর আগে। তাও সেটি ২০০৭ সালের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এরপর আরও সাতটি বিশ্বকাপ গেছে। কিন্তু বার বারই হতাশার গল্পই লিখেছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতেও দ্বিতীয়বারের মতো কুড়ি ওভারের ট্রফি জেতার সুযোগ এসেছিল। সেবারও হতাশ হতে হয়েছিল ভারতীয় দর্শকদের। লঙ্কানদের কাছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল ট্রফি খুঁইয়েছিল। এরপর অধিনায়ক বদলেছে, বিরাট কোহলি ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি পারেননি। পরে রোহিত শর্মার নেতৃত্বেও দলটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে। ব্যর্থ হয়েছেন তিনিও। আরও একবার তার সামনে ট্রফি জিতে দীর্ঘ আক্ষেপ ঘুচানোর সুযোগ।
আইসিসির টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে ভারত এক নম্বর দল। দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান ৫ নম্বরে। শুধু র্যাঙ্কিং নয়, অতীত পরিসংখ্যানও ভারতের পক্ষে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুই দল ২৬ বার মুখোমুখি হয়েছে। যার মধ্যে ১৪টিতে ভারত জিতেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ১১টিতে। বিশ্বকাপের মঞ্চে অতীত সাফল্যেও রোহিতরা এগিয়ে। দুবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ ছাড়াও একবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে সাতবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বাদ পড়ার পর এই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে ভারত সবদিক দিয়ে অনেকখানি এগিয়ে। তার পরেও দেশের সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ রোহিতরা নিতে পারেন কিনা, সেটাই দেখার অপেক্ষা। অধিনায়ক রোহিত বলেছেন, ‘ভারতীয় দল সব সময় চাপের মধ্যে থাকে। এটাই বাস্তবতা। দল যে শুধু এই মুহূর্তে চাপের মধ্যে আছে তা নয়, যখন আমি খেলা শুরু করি, তখন থেকেই চাপের মধ্যে।’
তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলাটাই ভীষণ আবেগের। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে বেশ কয়েকবার সেমিফাইনাল খেললেও ফাইনাল খেলতে পারেনি। আইসিসি বিশ্বকাপে এবারই প্রথম প্রোটিয়ারা শিরোপা মঞ্চে। একটি অপেক্ষার অবসানের পর শিরোপার আজন্ম হাহাকার ঘোচানোর অপেক্ষায় রংধনুর দেশটি। তবে প্রোটিয়াদের জন্য কাজটি মোটেও সহজ হবে না। কেননা ফাইনালে একদিকে যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা মুখিয়ে থাকবে তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জিততে, ঠিক তখন ভারত মুখিয়ে থাকবে তাদের ১১ বছরের ট্রফি খরা ঘোচাতে। ভারত ২০১৩ সালে সর্বশেষ কোন আইসিসি ট্রফি জিতেছিল। সেবার তারা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জিতেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তো প্রোটিয়ারা যে কঠিন লড়াই করবে, সেটি অধিনায়ক এইডেন মারক্রামের কথাতেই স্পষ্ট।
ফাইনালের আগে শেষ সাংবাদিক সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক বলেছেন, ‘ভারত খুব ভালো দল আমরা সেটা জানি। ফাইনাল ম্যাচ অসাধারণ একটা লড়াই হবে। ম্যাচে ক্লোজ মুহূর্ত থাকবে। আমাদেরকে সেই মুহূর্তগুলো জিততে হবে। এর আগেও আমরা ক্লোজ ম্যাচ জিতেছি। অন্ততপক্ষে চারটে এইরকম ম্যাচ জিতেছি। ফাইনাল জিতে আমরাও ট্রফিহীনতার শাপমোচন করতে মুখিয়ে রয়েছি।’
হ্যানসি ক্রনিয়ে, শন পোলক, ল্যান্স ক্লুজনার, এবি ডি ভিলিয়ার্স—যারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেননি, তাদের জন্যই বিশ্বকাপ জিততে চান মারক্রাম। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, ‘তারা এই খেলার কিংবদন্তি। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের কিংবদন্তি। আমার দৃষ্টিতে তারা ফাইনাল খেললেন কি খেললেন না, সেটা বড় বিবেচ্য নয়। কারণ, তারাই দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলতে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন।’
প্রোটিয়ারা এর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাঁচবার ও টি-টোয়েন্টিতে দুবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে। তাতে কপালে জুটেছে চোকার্স তকমা। এবার সেমিফাইনালের গেরো খুলে দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনালে। দুটি সেমিফাইনাল একতরফাভাবে শেষ হওয়ার পর অনেকের মনেই শঙ্কা, ফাইনালও কি এমন একতরফা হবে? ফাইনালে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন দুই দলের বেশ কিছু ক্রিকেটার। এ বারের বিশ্বকাপে রান পাচ্ছেন না বিরাট কোহলি। তার পরেও একের পর এক ম্যাচ জিতছে ভারত। ফর্মে নেই রবীন্দ্র জাদেজাও। তারপরও এই সাফল্যের অন্যতম কারণ দলের ভারসাম্য। বিরাট না পারলে খেলছেন রোহিত শর্মা। তবে ফাইনালে রোহিতকে সতর্ক থাকতে হবে প্রোটিয়া পেস আক্রমণের বিপক্ষে। বিশেষ করে আইনরিখ নর্কিয়াকে বুঝেশুনে খেলতে হবে। নরকিয়া এখন পর্যন্ত ৮ ইনিংসে ১৩ উইকেট নিয়েছেন।
রোহিতের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে কোনও কোনও ম্যাচে সামলে দিচ্ছেন ঋষভ পান্ত, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়ারা। তবে এই মুহূর্তে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের অন্যতম ভরসার নাম সূর্য। চলতি বিশ্বকাপে ৭ ইনিংসে ১৩৭.০৬ স্ট্রাইক রেটে ১৯৬ রান করেছেন তিনি। সূর্যের ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা থামাতে কার্যকর হয়ে উঠতে পারেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার তাবরাইজ শামসি। ৪ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে নিজেকে প্রমাণ করে আজ ফাইনালে খেলতে নামবেন তিনি।
এছাড়া বোলিংয়ে প্রোটিয়া ব্যাটারদের ওপর তোপ দাগাতে পারেন কুলদীপ যাদব। আমেরিকা থেকে ভারতীয় দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে খেলতে আসার পরেই দেখা যাচ্ছে তার জাদু। চার ম্যাচে কুলদীপের শিকার ১০ উইকেট। সাধারণত প্রথম পাওয়ার প্লের শেষে অষ্টম কিংবা নবম ওভার থেকে কুলদীপ বল করা শুরু করেন। দ্রুত উইকেট হারালে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডারকে সামলাতে হবে কুলদীপের ঘূর্ণিজাদু। এ ক্ষেত্রে মিডল অর্ডারে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে ডেভিড মিলারকে। যদিও চলমান বিশ্বকাপে নিজের ছায়া হয়ে আছেন তিনি। গ্রুপ পর্বে একটি হাফ সেঞ্চুরির পর সুপার এইটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছেন ৪৩ রানের ইনিংস।
মিলার ছাড়াও প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন ডি ককের ওপরও চোখ থাকবে ফাইনালে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংগ্রহ তার; ৮ ইনিংসে করেছেন ২০৪ রান। সেমিফাইনালে ব্যর্থ হলেও ফাইনালে ডি কক জ্বলে উঠলে ভারতীয় বোলিং লাইনআপকে লন্ডভন্ড করে দিতে পারেন যে কোন মুহূর্তে। নতুন বলে ডি কককে থামাতে বড় ভূমিকা রাখতে হবে ভারতের তুরুপের তাস জসপ্রীত বুমরাকে। চলতি বিশ্বকাপে ভারতের চলতি টুর্নামেন্টে কোন ব্যাটারই তাকে ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। তার সাথে নতুন বলে ভারতের হয়ে তোপ দাগাতে পারেন আরশদীপ সিংও।
গত এক বছরে আইসিসির তিনটি প্রতিযোগিতার ফাইনালে খেলেছে ভারতীয়রা। কিন্তু ট্রফি অধরাই রয়ে গিয়েছে। এবার কি সেই অধরা ট্রফি ধরা দেবে রোহিত শর্মার হাতে? নাকি প্রোটিয়ারা প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে শাপমোচন করবে। সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আজ বারবাডোসে।