ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬:৪১ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৪৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারের পর যেই দলটির গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে যাওয়ার শঙ্কা জেগেছিল, সবার আগে তারাই উঠে গেল ফাইনালে। ৩৬ বছরের শিরোপা-খরা ঘোচানোর শেষ ধাপে এখন তারা।
গতকাল প্রথম সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো শিরোপার শেষ লড়াইয়ে নাম লেখালো আর্জেন্টিনা।
এদিকে, মেসি যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন। কাতার বিশ্বকাপে নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন। আজ আরো একবার যেন তার প্রদর্শনী দেখালেন, গোল করছেন, করাচ্ছেন; সব মিলিয়ে নিজের সামর্থ্যের ষোলআনাই ব্যবহার করছেন। তবে আজ তার সঙ্গি হয়েছেন জুলিয়ান আলভারেজ, তিনি করেছেন জোড়া গোল।
লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে বিশ্বকাপের অন্যতম হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া। তাতে জয়টা এল মেসি-আলভারেজদেরই। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আলবিসেলেস্তারা। লিওনেল মেসির পেনাল্টি ও জুলিয়ান আলভারেজের গোলে ক্রোয়েটদের বিপক্ষে লিড নেয় দলটি। অতঃপর দ্বিতীয়ার্ধে আরো একটি গোল করেন আলভারেজ।
ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই বল ধরে রাখার চেষ্টা করলেও প্রথম ১৫ মিনিট বলের দখল বেশি ছিল ক্রোয়েশিয়ানদের পায়েই। খেলার ২০ মিনিট অতিক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে খেলায় ফিরতে শুরু করে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ঠিক গুছিয়ে আক্রমণটা হচ্ছিল না কিছুতেই।
৩৫ মিনিটের সময় একটি পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। গোল আটকাতে গিয়ে ডিবক্সের মধ্যে আলভারেসকে ফাউল করেন লিভাকোভিচ। পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পটকিক থেকে লক্ষ্যভেদ করেন লিওনেল মেসি। এই গোলের ফলে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন মেসি। বিশ্বকাপে তার গোলসংখ্যা এখন ১১টি। আর এই গোলটি কাতার বিশ্বকাপে তার পঞ্চম গোল। গোল্ডেন বুটের দৌড়ে কিলিয়ান এমবাপের সাথে গোল সংখ্যায় এখন সমানে সমান মেসি।
৩ মিনিট পরেই দ্বিতীয় গোলটি করেন জুলিয়ান আলভারেজ। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে দৌড়াতে শুরু করেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্সে ফাঁকা জায়গা পেয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন তিনি। ক্রোয়েশিয়ান গোলরক্ষক লিভকোভিচ আটকাবার চেষ্টা করলেও ক্লোজ রেঞ্জ থেকে সহজেই গোল করেন আলভারেজ। একক প্রচেষ্টায় এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন গোল করেন তিনি।
৪২ মিনিট সময়ে স্কোরলাইন ৩-০ হতে পারত। কর্নার থেকে দুরন্ত হেড নেন ম্যাক অ্যালিস্টার। সেই হেড বাঁচিয়ে দেন ক্রোয়েশিয়া গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। অতঃপর ২-০ স্কোরলাইন নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের তেজ বেড়ে যায় ক্রোয়েশিয়ার। কিন্তু আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগে কার্যকর কোনো আঘাত করতে পারেনি দলটি। রক্ষণাত্মক খেললেও হঠাৎই প্রতি আক্রমণ থেকে উঠে আসছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু গোলের দেখা পাচ্ছিল না আর কোনো দলই। সময় বাড়ার সাথে সাথে চাপ বাড়তে থাকে ক্রোয়েশিয়ার ওপর।
ম্যাচের ৭০ মিনিটের মাথায় আবারো গোল করেন আলভারেজ। এই গোলে আলভারেজের থেকেও মেসিকেই কৃতিত্ব দিতে হয় বেশি। মাঝমাঠের ডান প্রান্ত থেকে বল নিয়ে সোলো রান শুরু করেন মেসি। বল নিয়ে ডিবক্সের কাছাকাছি চলে আসলে বিপদ বুঝে তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন ক্রোয়েট ডিফেন্ডাররা। নিজের পায়ের কারুকাজে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে গোলবারের অনেকটাই কাছে চলে আসেন তিনি। সেখান থেকে গোল করা সম্ভব নয় বুঝতে পেরে তিনি বল এগিয়ে দেন ডিবক্সে থাকা আলভারেজের দিকে। এক লাফে বল রিসিভ করে তিনি বল সটান পাঠিয়ে দেন ক্রোয়েটদের জালে। এবারের বিশ্বকাপে এই নিয়ে চারটি অ্যাসিস্ট করলেন তিনি।
৭৫ মিনিটে উঠে যান আলভারেজ, খেলতে নামেন পাওলো ডিবালা। ৮৩ মিনিটের মাথায় তিনি দারুণ একটি বল তৈরি করে দিয়েছিলেন ম্যাক অ্যালিয়েস্টারকে। কিন্ত অ্যালিয়েস্টারের শটটি গোলপোস্ট খুব কাছ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ফলে আরো ব্যবধানে হারের হাত থেকে বেঁচে যায় লুকা মদ্রিচের দল। অবশিষ্ট সময়ে গোলব্যবধান কমাতে না পারায় ৩-০ গোলে হেরে বিদায় নিল ক্রোয়েশিয়া।
আজ ম্যাচে নামার সাথে সাথেই নতুন রেকর্ডের জন্ম দিয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন জার্মানির লোথার ম্যাথিয়াস। আজ তাকে ছুঁয়ে ফেললেন মেসি। আর একটি ম্যাচ খেললেই লোথার ম্যাথিয়াসকে ছাড়িয়ে রেকর্ডটি নিজের করে নিতে পারবেন তিনি।
২০১৪ সালের পরে আবারো ফাইনালে উঠলো আর্জেন্টিনা। আগামীকালের ফ্রান্স বনাম মরক্কো ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে ১৮ ডিসেম্বর ফাইনাল খেলবে দলটি।