স্পেনকে হারিয়ে মরক্কোর ইতিহাস
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭:৫২ এএম, ৭ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১১:০৫ পিএম, ১২ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
লুইস এনরিকের মাথায় হাত। স্পেন কোচ বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না পাবলো সারাবিয়া এমন সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হবেন। ১২০ মিনিটের খেলা শেষ তখন। যোগকরা তিন মিনিটের খেলাও শেষ পর্যায়ে। মরক্কোর ফুটবলারদের বুক কাঁপিয়ে ডি-বক্সে ভেসে আসা ক্রসে পা ছোঁয়ালেন সারাবিয়া। বলটা সেকেন্ড পোস্ট ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল বাইরে। সঙ্গে সঙ্গে রেফারিও বাঁশি বাজিয়ে দু’দলকে জানিয়ে দিলেন, তোমাদের মাঠের খেলা শেষ। টাইব্রেকার নামক ভাগ্য পরীক্ষায় নামো এবার। সেই ভাগ্য পরীক্ষায় স্পেনকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে ইতিহাস গড়লো মরক্কো। মরক্কোর ফুটবলে এর চেয়ে বড় দিন আর আসেনি।
আল রাইয়ানে এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর সপ্তম ম্যাচটি নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে ছিল গোলশূন্য সমতায়। টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে মরক্কোর ইতিহাসের নায়ক গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনো। এর আগে বেলজিয়ামের বিপক্ষে জয় ও ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ড্র করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে ওঠে মরক্কো। যোগ্য দল হিসেবেই শেষ আটে পা রেখেছে তারা। স্পেনের টিকিটাকা অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে আরেকবার।
মরক্কো এর আগে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতেই খেলেছিল একবার। ১৯৮৬ সালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে গিয়েছিল তারা। আর প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে এর আগে ১২০ মিনিটে যাওয়া তিনটি নকআউট ম্যাচে হার দেখেছিল মরক্কো। কিন্তু এবার আর স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়তে হয়নি। হাকিম জিয়াশ-আশরাফ হাকিমিরা মরুর বুকে ফুল ফোটালেন। মরক্কোর আগে আফ্রিকার দল হিসেবে সবশেষ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল ঘানা। ২০১০ সালে।
বিবিসি রেডিও’র ধারাভাষ্যকার প্যাট নেভিন গতকাল ম্যাচ চলাকালে বলছিলেন, ‘মরক্কো হলো কোবরার মতো। এমনিতে শান্ত। কিন্তু যখন আক্রমণে যাচ্ছে, তখন দ্রুতগতিতেই উপরে উঠছে।’ প্রথমার্ধে ৬৯% বল পজেশন ধরে রাখলেও মাত্র একটি শট নিতে পেরেছিল স্পেন। বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচের প্রথমার্ধে এটি তাদের সর্বনিম্ন শট নেওয়ার রেকর্ড। ৩১ শতাংশ বল দখলে রেখেও মরক্কো তিনটি শট নেয় যার একটি ছিল অন-টার্গেটে। এদিন মাঠে নেমেই একটি রেকর্ড গড়ে ফেলেন স্প্যানিয়ার্ড মিডফিল্ডার গাভি। ১৯৫৮ সালে পেলের পর (১৭ বছর ২৪৯ দিন) বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় গাভি (১৮ বছর ১২৩ দিন)।
দ্বিতীয়ার্ধেও উল্লেখযোগ্য কোনো আক্রমণ শানাতে পারেনি স্পেন। তাদের টিকিটাকা এদিন সবদিক থেকেই ব্যর্থ। ৫৫তম মিনিটে মরক্কোর পোস্টে স্পেনের প্রথম শটটি নেন দানি অলমো। কিন্তু সেটি সহজেই ফিস্ট করেন গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু। যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে অলমোর ক্রস ঠেকান বুনু। ম্যাচটা টাইব্রেকারে না গিয়ে শেষ হয়ে যেতে পারতো অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেই। প্রথম হাফে দুটি সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে মরক্কো। ৯৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে স্পেনের ডিবক্সে ঢুকে পড়েন সুফিয়ান আমরাবাত। সামনে ছিলেন কেবল গোলরক্ষক সিমন। কিন্তু শট নিতে বেশি সময় নিয়ে ফেলেন আমরাবাত। পেছন থেকে লাপোর্ত এসে বল পাঠিয়ে দেন সাইড লাইনের বাইরে। ১০৪তম মিনিটেও ওয়ান টু ওয়ানে স্পেনের গোলরক্ষকের সামনে ছিলেন মরক্কোর বদলি খেলোয়াড় ওয়ালিদ শাদিরা। তার নিচু শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে স্পেনকে ম্যাচে রাখেন সিমন। ১১৪তম মিনিটে আবার স্পেনের ডি-বক্সে ঢুকেও শট নিতে ব্যর্থ হন শাদিরা। এরপর কয়েকবার মরক্কোর গোলমুখে হানা দিলেও আর গোলের দেখা পায়নি স্পেন।
প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে নিজেদের আগের চারটি পেনাল্টি শুটআউটের তিনটিতেই হেরে যায় স্পেন। গত বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে রাশিয়া এবং ২০২০ ইউরোর সেমিফাইনালে ইতালির কাছে টাইব্রেকারে ছিটকে যায় তারা। তাই এবার ১ হাজার পেনাল্টি শট প্র্যাকটিস করেই কাতার এসেছিলেন স্পেনের খেলোয়াড়রা। লাভ কী হলো। আবার টাইব্রেকারে হারই দেখতে হলো ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়নদের।
পেনাল্টি শুটআউটে স্পেনের প্রথম তিন শটই মিস। প্রথম শটটা পোস্টে মারলেন পাবলো সারাবিয়া। কার্লোস সোলারের নেওয়া দ্বিতীয় শট আটকে দিলেন ইয়াসিন বুনো। আব্দুলহামিদ সাবিরি ও হাকিম জিয়াশের সফল স্পটকিকে ২-০তে এগিয়ে গেল মরক্কো। তবে তৃতীয় শটে মরক্কোর লিড বাড়াতে পারলেন না বদর বেনুন। যদিও সার্জিও বুসকেটসও পারেননি গোল করতে। চতুর্থ শটে আশরাফ হাকিমি ঠান্ডা মাথায় বল জালে পাঠিয়ে ইতিহাস গড়ে মরক্কোকে নিয়ে গেলেন কোয়ার্টার ফাইনালে।