অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে আর্জেন্টিনা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭:৩৪ এএম, ৪ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:১১ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে শেষ আটে পা রাখলো আর্জেন্টিনা। মেসির মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচে আর্জেন্টিনা উড়িয়েছে বিজয়ের পতাকা। মেসির পা ছুঁয়ে ম্যাচের প্রথমার্ধে গোল পায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে আলভারেস ব্যবধান দ্বিগুন করেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া এক গোল শোধ দিলেও শেষ হাসিটা হাসতে পারেনি। ষোলো বছর পর দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলেও অস্ট্রেলিয়ার পথ আটকে গেল এখানেই।
ম্যাচটা পুরোটাই ছিল মেসিময়। নিজে গোল করেছেন। একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণ এতোটাই জমাট ছিল যে দ্বিতীয় গোল পেতে মেসিকে কাঠখোড় পুড়াতে হয়েছে। গোলরক্ষক রায়ান একাধিক গোল ফিরিয়েছেন। রক্ষণের খেলোয়াড় বল ক্লিয়ার করে তাকে রুখে দিয়েছেন। পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে গোল করার সুযোগও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে ব্যবধান বাড়েনি।
অস্ট্রেলিয়া প্রথমার্ধে নিজেদের হারিয়ে খুঁজলেও দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ লড়াই করেছে। শেষ দিকে আরেকটি গোল প্রায় দিয়েই দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু গোলরক্ষক মার্টিনেজ দারুণ দক্ষতায় বল আটকে দেন।
তুমুল প্রতিন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচ না হলেও অস্ট্রেলিয়া সহজে হার মানেনি। হার মানেনি বলেই ম্যাচের অন্তিত মুহুর্ত পর্যন্ত মেসির চোখেমুখে ছিল উৎকণ্ঠা, ম্যাচ ড্র করার শঙ্কা। কিন্তু সেসব উড়িয়ে আর্জেন্টিনা ঠিকই ম্যাচ জিতে নিয়েছে। স্বস্তি ফিরে পান মেসি, তার কোটি ভক্তরা।
ক্রেইগ গুডউইনের গোলে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের ৭৭ মিনিটে এক গোল শোধ দিল। তবুও ২-১ গোলে লিড নিয়ে এগিয়ে আছে আর্জেন্টিনা। দূরপাল্লার শটে গুডউইন গোল করে ব্যবধান কমিয়েছেন। তার নেওয়া শট এনজো ফার্নান্দেজের মুখে রিফ্লেক্ট করে আর্জেন্টিনার জালে জড়ায়। মিনিট পাঁচেক পর অস্ট্রেলিয়া আরেকটি সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু রক্ষণের খেলোয়াড়ের পা ছুঁইয়ে কোনোমতে গোল হজমের থেকে বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা।
গোলরক্ষকের ভুলে দ্বিতীয় গোল হজম করলো অস্ট্রেলিয়া। দারুণ দক্ষতায় দলকে দ্বিতীয় গোলের স্বাদ দিলেন জুলিয়ান আলভারেস। প্রথমার্ধে মেসির গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৬ মিনিটে তরুণ আলভারেস ব্যবধান বড় করলেন। বক্সের মধ্যে বল নিয়ে কাড়িকুড়ি করতে গিয়ে দুই আর্জেন্টাইন ফুটবলারের সামনে পরে যান ম্যাট রায়ান। একজনকে কাটাতে পারলেও আলভারেসকে এড়াতে পারেননি রায়ান। তার পা থেকে বল ছিনিয়ে ফাঁকা বারে গোল করেন আলভারেস।
আবারো সেই বাঁ পায়ের জাদু। আবারো সেই মেসির গোল। ৩৫ মিনিটে মেসির গোলে এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। ডি বক্সের ভেতরে বাঁ পায়ে শট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণ চূরমার করে গোল করলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। নিজের পঞ্চম ও শেষ বিশ্বকাপ খেলতে এসে নক আউট পর্বে প্রথম গোল করলেন মেসি। এর আগে বিশ্বকাপে মেসির ৮ গোলের প্রতিটিই ছিল গ্রুপ পর্বে। এবার নক আউট পর্বে দলকে উঠিয়ে নিজে গোল করে লিড এনে দিলেন।
ডি বক্সের কাছে ফ্রি কিক পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসির নেওয়া শট ফিরিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার সাউটার। কিন্তু বল নাগালেই ছিল। মেসি ফিরতি পাসে বল দেন ডি পলকে। তার থেকে আবার বল পেয়ে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের মাটি ঘেঁষা শটে গোল করেন।
এমন পজিশনে মেসির অসংখ্য গোল দিয়েছেন। শটটা তার মুখস্থই ছিল। গোলরক্ষক বলের লাইনে গিয়ে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মেসির জাদুময় রাতে হার মানতে হয় সবচেষ্টাকেই। মেসির গোলে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে অস্ট্রেলিয়া ফিরে আসতে পারে কিনা সেটাই দেখার।
শুরুতে নিজেদের গুছিয়ে নিতে সময় নিলেও অস্ট্রেলিয়া এখন দারুণভাবে লড়ছে। শুরুর ২০ মিনিটে আর্জেন্টিনা যেভাবে অ্যাটাকে গিয়েছিল পরের ১০ মিনিটে সেই গতি কমে এসেছে। কারণ অস্ট্রেলিয়া তাদের বেশ ভালোভাবে আটকে রেখেছে। পাশাপাশি প্রতি আক্রমণ চালাচ্ছে। তাতে দুই দলের লড়াইয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে উত্তেজনা, উন্মাদনা। ২৫ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার পাওয়া দ্বিতীয় কর্ণার কিক থেকে মাথা ছুঁয়েছিলেন হ্যারি সাউটার। কিন্তু তেমন শক্তি প্রয়োগ করতে না পারায় সহজেই বল ক্লিয়ার করেন ডিফেন্ডাররা।
ছোট ছোট পাসে আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মেসি, আকুনারা। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা আর্জেন্টিনা এখনও ভাঙতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণদূর্গ। তবে বল দখলে এগিয়ে আছেন তারাই। ১৬ মিনিটের খেলা পেরিয়ে গেলেও অন টার্গেটে এখনও কোনো শট নিতে পারেনি কেউ। আর্জেন্টিনা নিজেদের খেলা গুছিয়ে নিলেও অস্ট্রেলিয়া থিতু হতে সময় নিচ্ছে।
হারলেই বিদায়। জিতলেই শেষ আট। এমন সমীকরণকে মাথায় রেখে রাত একটায় আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়ামে মাঠে নেমেছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও চমক দেখানো অস্ট্রেলিয়া। উত্থান-পতনের দুর্দান্ত এক গ্রুপ পর্ব পার করে শেষ ষোলোর টিকিট পেয়েছে আর্জেন্টিনা। অস্ট্রেলিয়ার ভ্রমণটাও ছিল রোলার কোস্টারের মতো। তাইতো কাতার বিশ্বকাপে দুই দলের মহারণ আজ ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে।
তবে একটি প্রশ্ন তো থেকেই যায়… শক্তি, সামর্থ্য কিংবা পরিসংখ্যান কোনো বিবেচনাতে কি আর্জেন্টিনার চেয়ে অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে রাখা যায়? ফুটবল বিশেষজ্ঞরা আর্জেন্টিনাকেই ফেভারিট মানছেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কারণ এবারের বিশ্বকাপ তো অঘটনের বিশ্বকাপ!
অস্ট্রেলিয়া কি পারবে নিজেদের বিশ্বকাপ যাত্রাকে সামনে এগিয়ে নিতে? নাকি নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয় শিরোপা জয়ের দিকে মেসি-মার্তিনেজদের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে? উত্তরগুলো পাওয়া যাবে ঘণ্টাখানেকের ভেতরেই। দুই দল এর আগে মুখোমুখি হয়েছে ৭ বার, এর ৫টিতেই জিতেছে আর্জেন্টিনা, ১টিতে জয় অস্ট্রেলিয়ার। অন্য ম্যাচটি হয়েছে ড্র।
অস্ট্রেলিয়া কোচ গ্রাহাম আরনল্ড বলেছেন, ‘এটা হলুদ জার্সি বনাম নীল-সাদা জার্সির লড়াই, এটা যুদ্ধ। এগারো বনাম এগারো। আমরা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’
আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ভালো দল। লড়াইটা হবে দুটো একাদশের মধ্যে। তাই ফেভারিটের বিষয়টি এক পাশে সরিয়েই আমাদের ম্যাচটা খেলতে হবে।’