শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারালো ভারত
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:১৫ পিএম, ২৩ অক্টোবর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৩৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
টান টান উত্তেজনার ম্যাচে পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারাল ভারত। এ জয়ে গত বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধ নিল টিম ইন্ডিয়া। মূলত বিরাট কোহলির দুর্দান্ত ব্যাটেই জয় তুলে নেয় ভারত। জয়ে ব্যাটে-বলে দারুণ অবদান রাখেন হার্দিক পান্ডিয়াও।
রান তাড়ায় ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই চাপে ছিল ভারত। তবে কোহলি-পান্ডিয়ার জুটি ধীরে ধীরে স্বস্তি ফেরায় দলের শিবিরে। কিন্তু ১৭ ওভার পর্যন্ত চাপ ধরে রাখতে পারে পাকিস্তানি বোলাররা। শেষ ৩ ওভারে ৪৮ রান দরকার পড়ে ভারতের। যেখানে শাহিন শাহ আফ্রিদির করা ১৮তম ওভারে ১৭ রান তোলে ভারত। যার ১৫ রানই করেন কোহলি।
শেষ ২ ওভারে ভারতের দরকার ৩১ রান। এই সমীকরণে বোলিংয়ে আসেন তারকা হারিস রউফ। তিনি তার প্রথম ৪ বলে মাত্র ৩ রান দিয়ে ফের চাপ তৈরি করেন। তবে শেষ দুই বলে খেই হারিয়ে ফেলেন। দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরান কোহলি।
ইনিংসের শেষ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ১৬ রান। এই ওভারটিই মূলত রোমাঞ্চ ভরপুর হয়ে থাকে। যেখানে স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজ প্রথম বলেই ইনফর্ম হার্দিক পান্ডিয়াকে বিদায় করেন। পরের দুই বলে তিনি দেন স্রেফ ৩ রান।
তবে চতুর্থ বলে নো বল দিয়ে কোহলির ব্যাটে ছক্কা হজম করেন নওয়াজ। ফ্রি হিটের বল করতে গিয়ে এবার ওয়াইড বল করেন। বেঁচে থাকে ফ্রি হিট, তবে এবার নওয়াজের বল কোহলির প্রান্তে স্টাম আঘাত করলেও বল পেছনে চলে গেলে সেখান থেকে দৌড়ে ৩ রান নেন এই ডানহাতি।
পঞ্চম বলে দিনেশ কার্তিককে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ান স্টাম্পিং করে বিদায় করেন। ১ বলে ভারতের জয়ে দরকার দুই রান। কিন্তু নতুন ব্যাটার রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে পরাস্থ দূরে থাক, ওয়াইড বল করে বসেন নওয়াজ। ম্যাচ টাই হয়। আর শেষ বলে তুলে মেরে এক রান নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন অশ্বিন।
এর আগে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হয় ভারত ও পাকিস্তান। আজ রোববার মেলবোর্নে সুপার টুয়েলভের গ্রুপ টুতে খেলতে নামে দুদল। বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় ম্যাচটি মাঠে গড়িয়েছে। যেখানে প্রথমে ব্যাট করা পাকিস্তান ইফতিখার আহমেদ ও শান মাসুদের হাফসেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান করে। জবাবে ৬ উইকেট হারিয়ে ইনিংসের শেষ বলে জয় নিশ্চিত করে ভারত।
১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় ভারত। দলীয় দ্বিতীয় ওভারে নাসিম শাহকে মোকাবিলা করা লোকেশ রাহুলের (৪) ব্যাটে লেগে বল স্টাম্প ভাঙে। এক ওভার পর অধিনায়ক রোহিত শর্মাকেও হারায় ভারত। এবার হারিস রউফের বলে উইকেটের স্লিপে থাকা ইফতিখার আহমেদকে ক্যাচ দেন রোহিত।
ষষ্ঠ ওভারে ফর্মে থাকা ব্যাটার সূর্যকুমার যাদবকে হারায় ভারত। হারিস রউফের দ্বিতীয় শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন ১০ বলে ১৫ রান করা সূর্য। পরের ওভারের প্রথম বলেই রান আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন অক্ষর প্যাটেল। ৪ উইকেট হারিয়ে ভারত যখন বেশ চাপে তখনই ত্রাতা হয়ে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করতে থাকেন কোহলি ও পান্ডিয়া। এই জুটি ৭৮ বলে ১১৩ রান যোগ করেই মূলত ম্যাচ বের করেন। নওয়াজের বলে বিদায় নেওয়া পান্ডিয়া ৩৭ বলে একটি চার ও ২ ছক্কায় ৪০ রান করেন। তবে ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে কোহলি ৮২ রানে অপরাজিত থাকেন। তারকা এই ব্যাটার ৫৩ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান।
পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে ২টি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও মোহাম্মদ নওয়াজ।
টস হেরে এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের শুরুটাও ভালো হয়নি। দ্বিতীয় ওভারেই শূন্য রানে অর্শদীপ সিংয়ের বলে এলবি হন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। এরপর ধুঁকতে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিজের পরের ওভারে তুলে নেন আর্শদীপ। ব্যক্তিগত ৪ রানে রিজওয়ান ক্যাচ দেন ভুবনেশ্বর কুমারকে।
মাঝে ঝড় তোলেন ইফতিখার আহমেদ। টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। অবশেষে তাকে ফেরান মোহাম্মদ শামি ১৩তম ওভারে এলবি হন তিনি। ৩৪ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫১ করেন এই ডানহাতি।
পরের ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে জোড়া উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। দলীয় শতকের আগেই ৫ উইকেট হারায় দলটি। ওভারের দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ বলে শাদাব খান ও হায়দার আলীকে ফেরান পান্ডিয়া।
নিয়মিত বিরতিতে দলের আরও দুই তারকা ব্যাটারকে হারায় পাকিস্তান। এবার পান্ডিয়ার তৃতীয় শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন ৯ রান করা মোহাম্মদ নওয়াজ। আর ভয়ঙ্কর আসিফ আলীকে মাত্র ২ রানে ফেরান আর্শদীপ।
শেষদিকে ৮ বলে একটি চার ও ছক্কা ১৬ রানে দলীয় সংগ্রহ বাড়ান শাহিন শাহ আফ্রিদি। ইনিংসের শেষ ওভারে তিনি ভুবনেশ্বর কুমারের বলে তাকেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তবে একপাশ আগলে রাখা শান মাসুদ হাফসেঞ্চুরি করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন। এই বাঁহাতি ৪২ বলে ৫টি চারে টি-টোয়েন্টির তৃতীয় ফিফটির দেখা পান। হারিস রউফ শেষ ওভারে একটি ছক্কায় ৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে আর্শদীপ ও পান্ডিয়া ৩টি করে উইকেট দখল করেন।