কিউইদের বিপক্ষে টাইগারদের ৪৮ রানে হার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮:৩৭ এএম, ১২ অক্টোবর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৫৭ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
পারলো না সাকিব, পারলো না বাংলাদেশও। দলকে জেতাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে পেলেন না তার যোগ্য সঙ্গী। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওঠার আশা বাঁচিয়ে রাখতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেতেই হতো বাংলাদেশের। কিন্তু কিউইদের রান পাহাড়ে চাপা পড়ে বাংলাদেশ হেরে গেলো ৪৮ রানে। ফাইনালে ওঠার স্বপ্নও শেষ হয়ে গেলো টাইগারদের জন্য।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০৮ রানের পাহাড় তুলে দিয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে সেই পাহাড় টপকাতেই হতো বাংলাদেশকে। ২০৯ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬০ রান তোলে বাংলাদেশ।
রানের পাহাড় টপকাতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। শুরুতেই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তকে হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ২০৮ রানের পাহাড় টপকাতে নেমে দুইবার জীবন পেয়েও ব্যর্থ টাইগার ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে সেখান থেকে দলকে ভালোভাবেই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন লিটন-সৌম্য মিলে। ওভারপ্রতি বাংলাদেশের রান তোলার গতিও ছিলো যথেষ্ট ভালো। তবে আচমকাই ছন্দপতন। লিটন-সৌম্য আর আফিফকে দ্রুত হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটেই পড়ে যায় টাইগাররা। তবে টাইগারদের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
শান্ত দ্রুত ফিরে গেলেও লিটন আর সৌম্য মিলে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। ঝড় তুলতে চেয়েছিলেন লিতন। তবে হঠাৎ খেই হারান তিনি। ১৬ বলে ২৩ রান করে ব্রেসওয়েলের বলে ফিরে যান তিনি।
এরপর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এসেও রানের গতি ধরে রাখেন। পাওয়ার প্লে'তে ২ উইকেটেই ৫২ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারও আশা জাগিয়েছিলেন খানিকটা। তবে সাকিবের সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়ার পর হঠাৎই নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন সৌম্য। ১৭ বলে ২৩ করে ফেরেন এই ব্যাটার।
আফিফ হোসেন এসেও করতে পারেননি তেমন কিছুই। ৪ বলে ৪ রান করেই ফেরেন আফিফ। ৯৮ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর অবশ্য ক্রিজে এসে সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। ২২ রানের জুটি গড়লেও সেখানে মাত্র ২ রান অবদান রেখেই ফিরে যান সোহান। ১২০ রানে ৫ম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সোহানের ফেরার পর ইয়াসির রাব্বি নেমেও করতে পারেননি তেমন কিছুই। ৬ বলে ৬ রান করেই ফিরে যান তিনি। ১৬তম ওভারের শেষ বলে সাউদিকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ব্রেসওয়েলের হাতে ধরা পড়েন এই দীর্ঘদেহী ব্যাটার। এর মধ্যেই কিউই বোলারদের বিপক্ষে ঝড় তুলে নিজের ফিফটি তুলে নেন সাকিব। ৩৩ বলে ৬ চারে নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন সাকিব।
শেষ ২৪ বলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ৭৪ রানের। ৭ম উইকেট জুটিতে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে সঙ্গে নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন সাকিব। তবে শেষমেশ আর একা একা পেরে উঠলেন না টাইগার কাপ্তান। টিম সাউদির করা ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটের পেছনে কনওয়ের হাতে ধরা পড়েন সাকিব। ৪৪ বলে ৮ ভার আর ১ ছক্কায় ৭৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
নির্ধারিত ২০ ওভারে শেষে ৭ উইকেটে ১৬০ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক ১০ বলে ৯ আর সাইফউদ্দিন ৫ বলে ৩ রান করে বাংলাদেশের হার মাথায় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। কিউইদের হয়ে ৩ উইকেট নেনে অ্যাডাম মিলনে। সাউদি আর ব্রেসওয়েল দুজনই নেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে ক্রাইস্টচার্চে টসে জিতে গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। টাইগারদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ উইকেটে ২০৮ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড। এ নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০ রান পেরোলো কিউইরা।
একাদশে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে টাইগাররা। দলে ঢুকেছেন সৌম্য সরকার, সাইফউদ্দিন ও এবাদত হোসেন। দল থেকে বাদ পড়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডও নামে তিন পরিবপ্ররতন নিয়ে। নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, মিচেল স্যান্টনার ও ব্লেয়ার টিকনারকে বিশ্রাম দিয়ে একাদশে ফেরানো হয়েছে অভিজ্ঞ মার্টিন গাপটিল, অ্যাডাম মিলনে ও ট্রেন্ট বোল্টকে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে কিউইদের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ফিন অ্যালেন ও ডেভন কনওয়ে। দলীয় ৪৫ রানে অ্যালেনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম।
দ্বিতীয় উইকেটে কিউইদের হয়ে কনওয়ে ও গাপটিল মিলে গড়েন ৮২ রানের জুটি। দলীয় ১২৭ রানে গাপটিল ২৭ বলে ৩৪ রান করে এবাদত শিকার হলে এই জুটি ভাঙে।
তৃতীয় উইকেটে গ্লেন ফিলিপস ও ডেভন কনওয়ের জুটিতে আসে ৩৪ রান। ৩০ বলে ৩ ছক্কা আর ৫ চারে ৬৪ রান করে দলীয় ১৬১ রানে সাইফউদ্দিনের বলে আউট হন কনওয়ে। ওই ওভারেই মার্ক চ্যাপমেনকেও ফেরান সাইফউদ্দিন।
তবে ক্রিজের অন্যপ্রান্তে গ্লেন ফিলিপস শেষ দিকে ঝড় তোলের টাইগার বোলারদের ওপর। ২৪ বলে ৫ ছক্কা আর ২ চারে ৬০ রান করেন এই কিউই ব্যাটার। দলীয় ২০৫ রানে ফিলিপসকে ফেরান এবাদত হোসেন। নির্ধারিত ২০ ওভারে শেষে ৫ উইকেটে ২০৫ রান সংগ্রহ করতে নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন এবাদত ও সাইফউদ্দিন, আর শরিফুল ইসলাম নেন ১টি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ২০৮/৫ (অ্যালেন ৩২, কনওয়ে ৬৪, গাপটিল ৩৪, ফিলিপস ৬০; সাইফ ৪-০-৩৭-২, শরিফুল ৪-০-৪১-১, ইবাদত ৪-০-৪০-২)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬০/৭ (লিটন ২৩, সৌম্য ২৩, সাকিব ৭০; সাউদি ৪-০-৩৬-২, মিল্ন ৪-০-২৪-৩, ব্রেসওয়েল ৪-০-৩৯-২)।
ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ৪৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: গ্লেন ফিলিপস (২৪ বলে ২ চার আর ৫ ছক্কায় অপরাজিত ৬০ রান)।