৩৬ বছর পর বিশ্বকাপে কানাডা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:৫০ এএম, ২৮ মার্চ,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৫৬ এএম, ৮ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
‘জীবনে এত সুন্দর দৃশ্য দেখিনি।’ ধারাভাষ্যকারের কণ্ঠ থরথর করছে। গলা অন্য কারণেও কাঁপতে পারত। বসন্তের বাতাস হঠাৎ হারিয়ে গিয়েছিল। টরন্টোতে হঠাৎ হাজির তুষারবৃষ্টি, সে সঙ্গে পাগলা হাওয়া। না, ধারাভাষ্যকারের কণ্ঠের ওই কাঁপাকাঁপিতে আবহাওয়ার ভূমিকা নেই। ৩৬ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটাতে এ আবহাওয়াতেই গ্যালারি উপচে পড়ছিল। পুরো গ্যালারিতে উড়ছে ম্যাপল লিফ। ক্ষণে ক্ষণে গর্জন উঠছে। আজ জ্যামাইকার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না।
ঘরের মাঠে আজ ড্র করলেও চলত কানাডার। তাতেও সব ধরনের হিসাব–নিকাশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিশ্বকাপে চলে যেত কানাডা। কিন্তু তাহলে গ্যালারির এমন ভালোবাসার যে প্রতিদান দেওয়া হয় না। প্রতিপক্ষকে ৪-০ গোলে উড়িয়েই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিল স্বাগতিক দল। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপের পর আবার কাতার বিশ্বকাপে দেখা যাবে কানাডাকে।
ম্যাচে পরিষ্কার ফেবারিট ছিল কানাডা। একদিকে কনকাকাফ অঞ্চলের বাছাইপর্বের শীর্ষে কানাডা, অন্যদিকে শেষ থেকে দ্বিতীয় জ্যামাইকা এরই মধ্যে বাদ পড়ে গেছে। পুরো বাছাইপর্বে যা দেখা গেছে, সেটাই হয়েছে আজ। গত ম্যাচে কোস্টারিকার কাছে হারের ধাক্কা সামলে আজ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে স্বাগতিক দল। তুষারবৃষ্টি আজ আর ঝড়ে রূপ নেয়নি, কিন্তু মাঠে জ্যামাইকার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। এর মধ্যে যে শুধু চারটি গোল হয়েছে, এতেই নিজেদের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিতে পারে উসাইন বোল্ট-ক্রিস গেইলদের দেশের ফুটবলাররা।
প্রথম গোলটা এসেছে ১৩ মিনিটে। স্টেফেন উস্তাকির থ্রু বলে ডি-বক্সের ভেতরে অনেকটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে যান কাইল লারিন। চমৎকার ঠান্ডা মাথার শটে গ্যালারিকে উন্মাতাল করে দেন লারিন। প্রথমার্ধের একদম শেষ দিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করে কানাডা। বক্সের ভেতর লিলের ফরোয়ার্ড জোনাথন ডেভিডের ক্রস ক্লিয়ার করতে পারেনি জ্যামাইকার রক্ষণভাগ। তাহোন বুকানন সুযোগ কাজে লাগাতে কোনো ভুল করেননি।
৮৩ মিনিটে বিশ্বকাপ যাত্রা নিয়ে সব দুশ্চিন্তা শেষ করেছেন জুনিয়র হইলেট। আবারও ডি-বক্সের ভেতরে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে বেশি জায়গা দেওয়ার ভুল করে জ্যামাইকা। প্রথমে মনে হচ্ছিল, বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন হইলেট। কিন্তু ওই অবস্থাতেই যে শট নিলেন, সেটা জালে চলে গেছে গোলকিপারকে স্তব্ধ করে। ৮৮ মিনিটে ম্যাচের আদর্শ এক হাইলাইটসের জন্ম দিয়েছে জ্যামাইকা। আবারও বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠেছে কানাডা। স্যাম আদেকুগবে ক্রস করেছিলেন। ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে বল পাঠিয়েছেন আদ্রিয়ান মারিয়াপ্পা। পায়ের বাইরের দিক ব্যবহার করে অমন গোল যেকোনো স্ট্রাইকারকে ঈর্ষান্বিত করবে।
কনকাকাফ অঞ্চলে এবার কঠিন পরীক্ষা দিয়েছে কানাডা। যুক্তরাষ্ট্র, কোস্টারিকা, মেক্সিকো, জ্যামাইকা ও হন্ডুরাস যেখানে সরাসরি তৃতীয় রাউন্ডের বাছাইপর্ব খেলেছে, সেখানে কানাডাকে একদম প্রথম রাউন্ড থেকে খেলতে হয়েছে বাছাইপর্ব। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাউন্ড মিলিয়ে গত এক বছরে ২০টি ম্যাচ খেলতে হচ্ছে কানাডাকে। আজ ভোরে ১৯তম ম্যাচে নিজেদের বিশ্বকাপের জায়গা নিশ্চিত করেছে কানাডা।
তৃতীয় রাউন্ডে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দুই দল যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর কাছে হারেনি কানাডা। এ দুই দলের সঙ্গে দুই ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট করে পেয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠিত শক্তি কোস্টারিকার বিরুদ্ধে এক ম্যাচে হেরেছে। বাছাইপর্বে এটিই তাদের একমাত্র হার। এমন দাপুটে পারফরম্যান্সই ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে নিয়ে গেছে কানাডাকে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ফ্রান্স, হাঙ্গেরি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের গ্রুপে পড়া কানাডা সব কটি ম্যাচে হেরেছিল। কিন্তু এবারের কানাডাকে সমীহ করবে অনেক বড় দলই।
আজ কাগজে-কলমে কানাডাই শুধু বিশ্বকাপে জায়গা করে নিলেও কনকাকাফ অঞ্চল থেকে সরাসরি বিশ্বকাপে যাওয়া বাকি দুই দলের নামও প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। পানামাকে ৫-১ গোলে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে হন্ডুরাসকে ১-০ গোলে হারিয়েছে মেক্সিকো। দুই দলেরই পয়েন্ট এখন ২৫, ওদিকে এল সালভাদোরকে ২-১ গোলে হারানো কোস্টারিকার পয়েন্ট এখন ২২। বাছাইপর্বে এক ম্যাচ বাকি। শেষ ম্যাচে মেক্সিকো যদি এল সালভাদোরের সঙ্গে ড্র-ও করে, তবে তারা সরাসরি বিশ্বকাপে যাবে।
ওদিকে কোস্টারিকা ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের মুখোমুখি। সে ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তত ৬ গোলের ব্যবধানে হারাতে হবে কেইলর নাভাসদের। অন্য উপায়ও আছে, সে ক্ষেত্রে মেক্সিকোকে হারতে হবে এবং দুই দলের মধ্যে +৪ গোল পার্থক্যের ব্যবধান ঘুচিয়ে নিতে হবে কোস্টারিকাকে। এ অঞ্চলের বাছাইপর্বের চতুর্থ দলের সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ নেই। তাদের ওশেনিয়া অঞ্চলের বিজয়ী দলের বিপক্ষে প্লে-অফ খেলতে হবে কাতার বিশ্বকাপের টিকিট কাটার জন্য।