বেনজেমার অতি মানবীয় হ্যাটট্রিকে পিএসজি'র বিদায়
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:১৮ পিএম, ১০ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:২০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) একটাই কমতি, চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা। ইউরোপ সেরা হওয়ার নেশায় মৌসুমের শুরুতে ঢেলে দল সাজিয়েছেন নাসির আল খেলাইফি। পিএসজি সভাপতি তারকা সমৃদ্ধ দলে ভিড়িয়েছেন লিওনেল মেসি, সার্জিও রামোস, জর্জিনিও ভাইনালদাম, আশরাফ হাকিমি এবং জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মাদের। তারায় তারায় ভরিয়ে দিয়ে লাভ হলো কই? ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট’ প্রবাদটা হয়তো মানানসই পিএসজির বর্তমান অবস্থার সঙ্গে। চ্যাম্পিয়নস লীগের শেষ ষোলোয় প্রথম লেগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ১-০তে এগিয়ে ছিল লা প্যারিসিয়ানরা। দ্বিতীয় লেগে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পাশার উল্টো দান দেখলো মাউরোসিও পচেত্তিনোর দল।
গতকাল বুধবার (৯ মার্চ) রাতে প্রথমার্ধে এগিয়ে গিয়েও করিম বেনজেমার অতি মানবীয় হ্যাটট্রিকে ৩-১ গোলের হারে বিদায় নিলো পিএসজি। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ গোলের অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়নস লীগের শেষ আটে রিয়াল মাদ্রিদ।
বিরতির আগে কিলিয়ান এমবাপ্পের গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। প্রতিপক্ষের মাঠে ৬১ মিনিট পর্যন্ত লিড ধরে রাখে লা প্যারিসিয়ানরা। এরপর বেনজেমার ১৮ মিনিটের তা-বে গুড়িয়ে যায় পিএসজির চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা স্বপ্ন।
চ্যাম্পিয়নস লীগে এ নিয়ে চারবার প্রথম লেগ জিতেও রাউন্ড অব সিক্সটিনের বাধা পেরোতে পারলো না পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লীগের ইতিহাসে প্রথম লেগ জয়ের পরও সবচেয়ে বেশি বাদ পড়া দল রিয়াল মাদ্রিদ, ৬ বার। আর এ নিয়ে ৪ বার দ্বিতীয় লেগের হারের পরও শেষ আটে পৌঁছালো লস ব্লাঙ্কোরা।
দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে কিংবদন্তি রাউল গঞ্জালেসকে পেছনে ফেললেন করিম বেনজেমা। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়নস লীগ গোল বেনজেমার (৬৭)। রাউল গঞ্জালেসের গোল সংখ্যা ছিল ৬৬। লস ব্লাঙ্কোদের জার্সিতে সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়নস লীগ গোলের মালিক পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (১০৫)।
ঘরের মাঠে গোটা ম্যাচে আক্রমণে ধার দেখায় রিয়াল মাদ্রিদ। ৪৪ শতাংশ বল দখলে রেখে ২১টি শটের ৭টি লক্ষ্যে রাখে স্বাগতিকরা। অপরদিকে ৫৬ শতাংশ বল দখলে রাখা পিএসজি ১০টি শটের ৪টি লক্ষ্যে রাখে। শুরু থেকেই পিএসজির ডি-বক্সের আশেপাশে ভীতি ছড়ায় রিয়াল। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দ্বুার প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে বক্সে ঢুকেও পড়ে তারা। দুবারই বল যায় মার্কো আসেনসিওর পায়ে; প্রথমবার শটই নিতে পারেননি তিনি, দ্বিতীয়বারে তার ভলি রক্ষণে প্রতিহত হয়।
কিলিয়ান এমবাপ্পের একক প্রচেষ্টার প্রতি-আক্রমণে অষ্টম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো পিএসজি। কিন্তু ফরাসি ফরোয়ার্ডের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান থিবো কোর্তোয়া। চার মিনিট পর নিজেদের ভুলে আবারও গোল খেতে বসেছিল স্বাগতিকরা। এবারও এমবাপ্পের নিচু শট ঠেকিয়ে দেন রিয়াল গোলরক্ষক।
২৫তম মিনিটে করিম বেনজেমাকে গোলবঞ্চিত করেন পিএসজি গোলরক্ষক দোন্নারুম্মা। দূর থেকে বেনজেমার বুলেট গতির শটে ঝাঁপিয়ে প্রতিহত করেন তিনি।
৩১তম মিনিটে হতাশ করেন লিওনেল মেসি। নেইমারের রক্ষণচেরা পাস পেয়ে দুরূহ কোণ থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। ২ মিনিটের ব্যবধানে লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপ্পে। তবে আক্রমণের শুরুতে নুনো মেন্দেস অফসাইডে থাকায় ভিএআরের উদ্যাপন থেমে যায় লা প্যারিসিয়ানরাদের। গোলবঞ্চিত হয় পিএসজি।
পিএসজি সমর্থকদের ফের আনন্দে ভাসাতে মোটেও সময় নেননি এমবাপ্পে। ৩৯তম মিনিটে নেইমারের পাসে দারুণ ক্ষীপ্রতায় ছুটে বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে দুর্দান্ত শটে গোল করেন ফরাসি স্টার। চ্যাম্পিয়নস লীগের নবম খেলোয়াড় হিসেবে রিয়ালের বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে গোল করলেন এমবাপ্পে।
বিরতি থেকে ফিরে আবারও জালের দেখা পান এমবাপ্পে। তবে এবার নিজেই ছিলেন অফসাইডে। দুটো গোল অফসাইডে বাতিল না হলে ম্যাচের হ্যাটট্রিক হিরো হতেন এমবাপ্পে, পিএসজি হয়তো পৌঁছাতে শেষ আটে!
৬১তম মিনিটে বোকামির দণ্ড দিয়েছে পিএসজি। অনেক দূর থেকে গোলরক্ষককে অহেতুক ব্যাকপাস দিলেন মার্কো ভেরাত্তি। সতীর্থকে পাস বাড়াতে এক মুহূর্ত দেরি করে ফেললেন দোন্নারুম্মা, ছুটে গিয়ে চ্যালেঞ্জ জানালেন বেনজেমা। চাপের মুখে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ছয় গজ বক্সের অন্য পাশে ভিনিসিউসের পায়ে বল তুলে দিলেন ইউরো-২০২০ এর সেরা গোলরক্ষক। ওখান থেকে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের পাস পেয়ে ফাঁকা জালে গোলটি করেন বেনজেমা।
৭৬তম মিনিটে মদ্রিচের পাস বক্সে পেয়ে ঘুরেই শট নিলেন বেনজেমা। ছুটে এসে স্লাইড করে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেন মার্কিনিয়োস, তার পায়ে লেগেই বল একটু ওপরে উঠে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে খুঁজে নিল ঠিকানা। উত্তেজনা তখনও শেষ হয়নি। দুই লেগ মিলিয়ে তখন ২-২ ব্যবধান!
দুই মিনিটের ব্যবধানে উত্তেজনায় পানি ঢেলে দেন বেনজেমা। জয়সূচক গোল করে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের আনন্দে ভাসান ফরাসি স্টার।
ইনজুরি টাইমে নাটকীয় মোড় দিতে পারতেন গোটা ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে কাটানো মেসি। তবে আর্জেন্টাইন মহাতারকার ফ্রি কিক ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়।