প্রথম ইনিংসে ১২৬ রানেই অলআউট বাংলাদেশ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:২৪ পিএম, ১০ জানুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৩১ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভালে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড গড়েছেন টম লাথাম, খেলেছেন ২৫২ রানের এক ইনিংস। অথচ পরের ইনিংসে কি না পুরো বাংলাদেশ দল মিলেও তার অর্ধেকের বেশি রান করতে পারলো না।
ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, কাইল জেমিসনের পেস তোপে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে লাথামের ঠিক অর্ধেক, ১২৬ রানে। নিউজিল্যান্ডের করা ৫২১ রানের চেয়ে ৩৯৫ রানে পিছিয়ে সফরকারীরা। বাংলাদেশকে ফলো-অন করাবে কি না নিউজিল্যান্ড, তা জানা যাবে তৃতীয় দিন সকালে।
নিউজিল্যান্ডের করা ৫২১ রানের জবাবে নিজেদের ইনিংসের প্রথম বলে দুই রান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন সাদমান ইসলাম। টিম সাউদির করা সেই ওভারে নিয়েছিলেন সাত রান। কিন্তু পরের ওভারের দ্বিতীয় বলেই টম লাথামের হাতে ক্যাচ বানিয়ে তাকে সাজঘরের টিকিট ধরিয়ে দেন ট্রেন্ট বোল্ট।
পরের ওভারে অভিষিক্ত নাইম শেখকে সরাসরি বোল্ড করে দেন সাউদি। পাঁচ বল খেলেও কোনো রান করতে পারেননি এ বাঁহাতি ওপেনার। সাইফ হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয়ের পর অভিষেকে শূন্য রানে আউট হওয়া বাংলাদেশের তৃতীয় ওপেনার হলেন তিনি।
সাদমান আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ওভারের শেষ চার বল থেকে দুইটি ডাবলস নিয়েছিলেন নাজমুল শান্ত। সেখানেই শেষ। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে সাদমানের মতো শান্তকেও স্লিপে দাঁড়ানো লাথামের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন বোল্ট। শান্ত করতে পারেন মাত্র ৪ রান।
বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়ে পরের ওভারের প্রথম বলেই সাউদির ফুল লেন্থের ডেলিভারিতে মুমিনুল বোল্ড হয়ে গেলে। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করা অধিনায়ক মুমিনুল এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে রানের খাতা খুলতে পারেননি।
মাত্র ১১ রানে চার উইকেট হারিয়ে অবধারিতভাবেই ফলো-অনের শঙ্কায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবু সাহস নিয়ে পাল্টা আক্রমণের আভাস দেন লিটন-ইয়াসির। বিশেষ করে ইয়াসিরের একটি অফ ড্রাইভ ও লিটনের পুল শটে চারের মার আশার সঞ্চার করে বাংলাদেশ শিবিরে।
আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে চা পানের বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে এসে দ্বিতীয় বলেই ইনসাইড এজ হয়ে উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলের হাতে ধরা পড়ে যান লিটন। আউট হওয়ার আগে ৮ রান করেন তিনি।
মাত্র ২৭ রানে ৫ উইকেট পতনের পর অল্পেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। তবে সেখান থেকে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়েন ইয়াসির ও সোহান। দুজন মিলে দেখেশুনে খেলতে থাকেন ট্রেন্ট বোল্ট, নেইল ওয়াগনার, টিম সাউদিদের একের পর এক ওভার।
লেগ স্ট্যাম্পের ওপর খাটো লেন্থের ডেলিভারি পেলে পুল কিংবা অফস্ট্যাম্পের বাইরে ফুল লেন্থের ডেলিভারিতে ড্রাইভ খেলতে দ্বিধা করেননি সোহান। ইয়াসিরও খেলেন দৃষ্টিনন্দন কিছু শট। যার সুবাদে ইনিংসের ২৭তম ওভারে পূরণ হয় তাদের ৫০ রানের জুটি।
মনে হচ্ছিল, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট ফিফটি তুলে নেবেন সোহান। কিন্তু সাউদির বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে তার ইনিংস থেমে যায় ৪১ রানে। লেগ বিফোরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ নিয়েছিলেন সোহান। কিন্তু আম্পায়ারস কলের কারণে বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় তার।
এরপর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি প্রথম ম্যাচে ভালো ব্যাটিং করা মেহেদি হাসান মিরাজও। ইয়াসির রাব্বির সঙ্গে ৯.৪ ওভারের জুটিতে ২২ রান যোগ করেন বোল্টের ৩০০তম টেস্ট উইকেটে পরিণত হন ৫ রান করা মিরাজ। তার বিদায়ে ফলো-অনের শঙ্কা আরও চেপে বসে বাংলাদেশের ওপর।
এর মাঝেই নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন ইয়াসির রাব্বি। ছয় নম্বরে নেমে সাত চারের মারে ৮৫ বলে ফিফটি পূরণ করেন তিনি। তবে তার ফিফটি হওয়ার আগের বলেই অষ্টম ব্যাটার হিসেবে সাজঘরের পথ ধরেন ২ রান করা তাসকিন আহমেদ।
এরপর আর বেশি কিছু বাকি ছিল না বাংলাদেশের ইনিংসের। ৪১তম ওভারের তৃতীয় বলে জেমিসনের বাউন্সারে হাতে ব্যথা পান ইয়াসির। ঠিক পরের বলেই আরেকটি বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে ধরা পড়েন ড্যারেল মিচেলের হাতে। ইয়াসির করেন ৯৫ বলে ৫৫ রান।
পরের ওভারে বাংলাদেশকে অলআউট করার বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন বোল্ট। শরিফুল ইসলামকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারে নবমবারের মতো ফাইফার তুলে নেন নিউজিল্যান্ডের চতুর্থ বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেট নেওয়া বোল্ট। এছাড়া সাউদি তিনটি ও জেমিসনের শিকার দুই উইকেট।
এর আগে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে অধিনায়ক টম লাথামের ডাবল সেঞ্চুরি ও ডেভন কনওয়ের সেঞ্চুরিতে রানপাহাড়ে চড়ে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। লাথামের ২৫২ রানের পাশাপাশি ডেভন কনওয়ে ১০৯ এবং টম ব্লান্ডেলের অপরাজিত ফিফটির সুবাদে ৬ উইকেট হারিয়ে ৫২১ রানে ইনিংস ঘোষণা করে কিউইরা।
আগেরদিন মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৩৪৯ রান করেছিল নিউজিল্যান্ড। আজ ৫ উইকেট হারালেও, স্কোরবোর্ডে যোগ করে আরও ১৭২ রান। তাও কি না মাত্র ৩৮.৫ ওভারেই। বাংলাদেশের পক্ষে এবাদত হোসেন ও শরিফুল ইসলাম নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।