জুলাই-আগস্টে দুই রাশিয়ান হেলিকপ্টার পাচ্ছে পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩৭ পিএম, ২১ মে,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:১৯ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
আগামী অর্থবছরের শুরুতে পুলিশ সদর দপ্তরের এয়ার উইং দুটি রাশিয়ান এমআই-১৭১এ২ হেলিকপ্টার পেতে যাচ্ছে। হেলিকপ্টার দুটির দাম পরিশোধের জন্য আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার কার্যপত্র থেকে জানা যায়, আগামী জুলাইয়ে একটি এবং আগস্টে আরেকটি হেলিকপ্টার সরবরাহ করবে সরবরাহকারী সংস্থা জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টার্স।
এর আগে, ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে এই হেলিকপ্টার কেনার চুক্তি হয়। ওই সময় পুলিশ সদর দপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টার্স থেকে এমআই-১৭১এ২ ধরনের দুইটি হেলিকপ্টার কেনা হবে। তার আগে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এই হেলিকপ্টার কেনার অনুমোদন দেয়।
কিন্তু পরবর্তীতে করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যুদ্ধ পরবর্তী রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনে জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে চুক্তি হলেও রাশিয়ান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে হেলিকপ্টার দুটি সরবরাহ করতে পারেনি।
এই হেলিকপ্টার কেনার অর্থ পরিশোধের জন্য চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ১৯১ কোটি বরাদ্দ রাখে, যা সংশোধিত বাজেটেও রয়েছে। কিন্তু হেলিকপ্টার না পাওয়ায় এই বরাদ্দ আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এরসঙ্গে, হেলিকপ্টারের অর্থ পরিশোধে বাড়তি বরাদ্দও থাকবে।
গত ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জননিরাপত্তা বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রান্সপোর্ট) সারোয়ার মোর্শেদ শামীম জানান, রাশিয়ান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আগামী জুলাইয়ে একটি এবং আগস্টে আরেকটি হেলিকপ্টার সরবরাহ করবে। এজন্য তিনি চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে থাকা বরাদ্দ আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্থানান্তরের অনুরোধ করেন।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ, বিভিন্ন অপারেশন এবং উদ্ধার অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ২০২১ সালে পুলিশের এই এভিয়েশন শাখাটি গঠিত হয়। হেলিকপ্টার দুটি কেনার মাধ্যমে উইংটিতে প্রথমবারের মতো উড়োযান সংযোজন হচ্ছে।
জরুরি সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি
জননিরাপত্তা বিভাগের বাজেট সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পুলিশের হেলিকপ্টার কেনার পাশাপাশি তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নেও আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর সক্ষমতা বাড়ানো হবে। দেশের সাধারণ মানুষের এই সেবা গ্রহণ নিয়মিত বাড়ছে। সেজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
অস্ত্র, গোলাবারুদ, নিরাপত্তা সামগ্রী, মোটরযান, গোয়েন্দা নিরাপত্তা সামগ্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জাম, বেতার যন্ত্র ও কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনা বাবদ এই বাড়তি বরাদ্দ থাকছে আগামী বাজেটে।
স্মার্ট আইন প্রয়োগে বাজেট
এর পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের স্মার্ট বর্ডার সার্ভেইলেন্স বাবদ আলাদা বরাদ্দ থাকছে। উপকূলীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে আগামী বাজেটে থাকছে বরাদ্দ। সামগ্রিকভাবে স্মার্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গঠনের উদ্যোগ থাকছে আগামী বাজেটে।
বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে জননিরাপত্তা বিভাগের জন্য মোট ২৬,৮৩৭ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হচ্ছে। এরমধ্যে পরিচালন বাজেট বাবদ ২৫,১২৯ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন বাজেট বাবদ থাকছে ১,৭০৮ কোটি টাকা।
পরিচালন বাজেটের ১৭,৩৫৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ১৬,৬৩৭ কোটি টাকা পরিচালন বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জন্য পরিচালন বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ৪,২৭৭ কোটি টাকা।
এছাড়া, আনসার ও ভিডিপি অধিদপ্তরের জন্য ২,১৯২ কোটি টাকা পরিচালন বাজেট ধরা হয়েছে।
আনসার, ভিডিপির বকেয়া
জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধিরা পুলিশের সাথে বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি, মন্দির ও সরকারের কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের জন্য যে ভাতা পাওয়ার কথা সেটি ২০১৮ সাল থেকে বকেয়া রয়েছে। ফলে আনসার সদস্যদের দায়িত্বপালনে নানান ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে এই বকেয়া পরিশোধে বাজেটে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও মোট বকেয়ার পরিমাণ বাজেট বরাদ্দে উল্লেখ করা হয়নি। বাংলাদেশ পুলিশের পরিচালন বাজেটে এই বকেয়া বাবদ অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের বাজেট
এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সুরক্ষা সেবা বিভাগের জন্য ৪,১৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে ২,৬৫১ কোটি টাকা পরিচালন বাজেট এবং ১,৫৪২ টাকা উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।
সুরক্ষা সেবা বিভাগ উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অ্যাম্বুলেন্স সেবা সম্প্রসারণ করবে। একইসঙ্গে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণসহ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু এবং বিভিন্ন কারাগার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।