দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, ভারত থেকে আনা ৭০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৪ পিএম, ২০ মে,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:০৪ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
নগরীর কাজির দেউড়ি বাজার থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফাহিম আহমেদ। গতকাল রবিবার যথারীতি বাজারে গিয়ে দুই কেজি দেশি পেঁয়াজ কেনেন ৭৫ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগেও একই দর ছিল। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এতদিন বলা হয়েছে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় দাম বেশি। কিন্তু এখন থেকে ভারতের সেই নিষেধাজ্ঞা নেই তবু তো দাম কমে না।
ভারত থেকে আমদানি শুরুর ছয় দিন পরও খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার কিংবা গলির খুচরা বাজার কোথাও পেঁয়াজের দামে প্রভাব পড়েনি। আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকা সত্ত্বেও বিক্রি হচ্ছে আগের দামে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে আমদানিকারকরা খুব বেশি পেঁয়াজ আমদানি করছেন না। যে কারণে বাজারে দেশি পেঁয়াজের ঝাঁজ আগের মতোই রয়ে গেছে।
খাতুনগঞ্জের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি আড়তেই সাজানো রয়েছে পেঁয়াজের বস্তার সারি। দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি রয়েছে ভারতীয় পেঁয়াজও। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে যে দামে বিক্রি হয়েছে এখনো একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত হামিদুল্লাহ মিয়ার বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস দেশ রূপান্তরকে জানান, ভারত পেঁয়াজ আমদানির ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও আমদানি কম হওয়ার কারণে খাতুনগঞ্জের বাজারে ওভাবে পেঁয়াজ আসছে না। যে কারণে এখন পর্যন্ত দেশি পেঁয়াজের ওপরই চলছে বাজার। যে কারণে দাম প্রায় আগের মতোই রয়ে গেছে। কেজিতে হয়তো দুই থেকে তিন টাকা কমতে পারে। তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ রবিবার পাইকারি বাজারে মানভেদে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মো. শহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছে। এর ফলে আমদানি মূল্য অনেক বেশি পড়ে যাচ্ছে। আর এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশি পেঁয়াজও বাজারে রয়েছে। আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে আমদানিকারকরা খুব বেশি পেঁয়াজ আমদানি করছেন না। তিনি জানান, ‘ভারতে লোকসভা নির্বাচন শেষ হলে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা অপেক্ষা করছি। যদি শুল্ক প্রত্যাহার না হয় তাহলে আমরা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির চিন্তা করব।’
এদিকে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ এখনো প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে এ পেঁয়াজ কম।
নগরীর দেওয়ান বাজার এলাকার মুদির দোকানদার নাছির উদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান, খাতুনগঞ্জ থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনে দোকানে আনা পর্যন্ত গাড়ি ভাড়া, শ্রমিক খরচসহ ৬৮ টাকা দাম পড়ছে। তারা ৭৫ টাকা করে বিক্রি করছেন।
দীর্ঘদিন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল। তবে সে দেশের কৃষকদের দাবির মুখে লোকসভা নির্বাচনের কারণে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করার কারণে বাংলাদেশে দেশি পেঁয়াজের তুলনায় ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেশি পড়ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের পুরো বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে অসাধু সিন্ডিকেটের হাতে। বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে তারা সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রচুর দেশি এবং ভারতীয় পেঁয়াজ আছে। পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। তবুও সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমছে না। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন কারসাজির মাধ্যমে আবারও দাম বাড়ানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে এখন পেঁয়াজের চড়া দাম ধরে রাখা হচ্ছে, যাতে সামনের রমজানেও বেশি মুনাফা করা যায়। এ নিয়ে প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।