সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির সম্ভাবনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৩ পিএম, ১৬ মে,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:২৫ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ডিজাইন, চিপ ফেব্রিকশন, অ্যাসেম্বেলিং, টেস্টিং ও প্যাকেজিং সংক্রান্ত সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে এ শিল্পখাতের বৈশ্বিক বাজার ৬৭৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০৩২ সালে ১ হাজার ৩০৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশ শুধু সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন করে বার্ষিক আয় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। বিপুল এই সম্ভাবনাময় খাত থেকে বাংলাদেশের আয় বাড়াতে প্রয়োজন সারকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ, সরকারের নীতিসহায়তা ও দক্ষ মানবসম্পদ।
বুধবার (১৫ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত বাংলাদেশে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পখাতের সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে বক্তাদের বক্তব্যে এসব তথ্য উঠে আসে।
ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফরউল্লাহ্ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোমেটারিয়ালস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম এ হাসীব সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সামনের দিনগুলোতে প্রযুক্তিখাতের সব স্তরে ন্যানো চিপের বহুমুখী ব্যবহার বাড়বে। তাই আমাদের এ ব্যাপারে এখনই মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে শিল্পখাতের প্রয়োজনের নিরিখে দক্ষ জনবল তৈরিতে শিক্ষা কারিকুলাম যুগোপযোগীকরণের ওপর জোর দিতে হবে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে সারাদেশে বিদ্যুৎ প্রাপ্তিসহ তথ্য-প্রযুক্তিখাতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও নীতি সহায়তার কারণেই বর্তমানে এখাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৪টি প্রতিষ্ঠান সেমিকন্ডাক্টিং খাতে বেশ ভালো করছে। তবে এ খাতের যথাযথ বিকাশে আমাদের চিপ ম্যানুফেকচারিং, অ্যাসেম্বিলিং ও প্যাকেজিংয়ের ওপর আরও বেশি গুরুত্বারোপ করতে হবে। এ ছাড়া সেমিকন্ডাক্টর খাতের চাহিদা মেটাতে ৫০ হাজার দক্ষ জনবল তৈরি একান্ত আবশ্যক।
সার্বিক উন্নয়নে একটি সেমিকন্ডাক্টর পলিসি প্রণয়ন করা হবে বলে আশ্বাস দেন পলক। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে আমাদের ৫০ বিলিয়ন রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সেমিকন্ডাক্টর খাতের রপ্তানি ১০ বিলিয়ন ডলারের উন্নীত করা আবশ্যক এবং সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে বর্তমান সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, সেখানে পৌঁছাতে হলে আমাদের স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট ইকোনমির পাশাপাশি স্মার্ট প্রাইভেট সেক্টরের সমন্বয় আবশ্যক।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানির তৈরি পোশাক খাতের নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে আমদানি বিকল্প শিল্পখাতের বিকাশ ও পণ্যের বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে সম্ভাবনাময় সেমিকন্ডাক্টর খাতকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। মোবাইল হ্যান্ডসেট, রেফ্রিজারেটর, এসি ও গাড়ির ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ অর্থবছরে আমাদের ব্যয় ছিল ১১৮.১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্থানীয় শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি এ খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদের দক্ষ জনবল তৈরির কোনো বিকল্প নেই এবং এজন্য আমাদের শিক্ষাক্রমের আমূল পরিবর্তন ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানোর ওপর মনোযোগী হতে হবে।
এছাড়া সেমিকন্ডাক্টর খাতের বিকাশে ব্যবসা পরিচালনায় লাইসেন্স প্রাপ্তি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, সহায়ক নীতি সহায়তা নিশ্চিতকরণ, ঋণ সহায়তা প্রদান বিশেষ করে এ খাতের এসএমইদের স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা প্রাপ্তি, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ, কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়াসহ একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে মত প্রকাশ করেন তিনি।