ব্যাংকের দ্বিগুণ গ্রাহক এখন মোবাইলে আর্থিক সেবায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৪ পিএম, ২০ এপ্রিল,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৯:৫৯ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
দেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের চেয়ে মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক হিসাবের তুলনায় এমএফএস বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবধারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সহজেই বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও লেনদেনের সুবিধার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে এমএফএসই এখন আর্থিক লেনদেনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে এমএফএস সেবার মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
দেশে বিকাশ, নগদ, উপায়সহ বেশ কিছু মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রাহক নিজের মুঠোফোন ব্যবহার করে অথবা এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর নিযুক্ত এজেন্ট পয়েন্ট থেকে লেনদেন করতে পারেন। পাশাপাশি বর্তমানে সঞ্চয় ও ঋণের মতো সুবিধাও দিচ্ছে কিছু এমএফএস প্রতিষ্ঠান। এসব কারণে এ সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
সম্প্রতি বিবিএসের প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩ প্রতিবেদনে নাগরিকদের আর্থিক সেবার অভিগম্যতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের (১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী) মধ্যে ২৮ শতাংশ মানুষের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব রয়েছে। বিপরীতে প্রায় ৪৮ শতাংশ মানুষের এমএফএস সেবায় হিসাব রয়েছে।
বিবিএস বলছে, দেশের মানুষের আর্থিক সেবার অভিগম্যতা প্রতিবছর বাড়ছে। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে মোবাইলে আর্থিক সেবায় অভিগম্যতা বেশি। যেমন ২০২১ সালে দেশের ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব ছিল, যা গত বছর বেড়ে ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে ২০২১ সালে এমএফএসে হিসাবধারী ছিল ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ, যা গত বছর বেড়ে ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, টাকা লেনদেনের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে মোবাইলে আর্থিক সেবা এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে এটি সহজে ব্যবহার করা যায়। এটি এমএফএসের বড় সুবিধা।
মুস্তফা কে মুজেরী আরও জানান, বর্তমানে এমএফএসে সঞ্চয় করা, ঋণ নেওয়া ও প্রবাসী আয় পাঠানোর মতো বিভিন্ন পরিষেবা যুক্ত হয়েছে। এসব কারণে দেশের শহর-গ্রামনির্বিশেষে সবখানেই মোবাইলে আর্থিক সেবার গ্রাহক বাড়ছে।
বাড়ছে গ্রাহক ও লেনদেন
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১০ লাখ। আর দেশে এমএফএস গ্রাহকের সংখ্যা এখন ২২ কোটির বেশি। একজন গ্রাহক একাধিক এমএফএস সেবায় হিসাব খুলতে পারেন। খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ঠিক কত নাগরিক এমএফএসের আওতায় এসেছেন, তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিটি পরিবারেই সেবাটি পৌঁছে গেছে বলা যায়।
গত পাঁচ বছরে দেশে এমএফএস গ্রাহকের সংখ্যা তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালে এমএফএস গ্রাহক ছিল প্রায় পৌনে ৭ কোটি, যা গত বছর ২২ কোটি ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, ফেব্রুয়ারি শেষে দেশে এমএফএস গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২২ কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৫ জন। শুধু গত এক বছরেই প্রায় আড়াই কোটি এমএফএস গ্রাহক বেড়েছে।
গ্রাহক বৃদ্ধির পাশাপাশি মোবাইলে আর্থিক সেবার মাধ্যমে লেনদেনও বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এমএফএসে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে এমএফএসে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৩০৪ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে ব্যক্তিপর্যায়ের লেনদেন। এরপরে এগিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মার্চেন্ট পেমেন্ট, বেতন পরিশোধ, পরিষেবা বিল, সরকারি ভাতা, টকটাইম ও প্রবাসীয় আয়সংক্রান্ত লেনদেন।
গ্রাহক বেশি গ্রামে, নারীরা পিছিয়ে
গ্রাহক বেশি গ্রামে, নারীরা পিছিয়ে
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোবাইলে আর্থিক হিসাবধারীদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীরা পিছিয়ে রয়েছেন। বিবিএসের তথ্য বলছে, এমএফএস গ্রাহকের মধ্যে ৬১ শতাংশ পুরুষ ও ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও দেখা যায়, দেশে মোবাইলে আর্থিক হিসাবধারী পুরুষের সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি; যেখানে নারীর সংখ্যা ৯ কোটির কিছু বেশি।
অন্যদিকে এমএফএস গ্রাহকের মধ্যে সাড়ে ১২ কোটির অবস্থান গ্রামে। শহর এলাকায় এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ কোটি। অর্থাৎ শহরের তুলনায় গ্রামে এমএফএস গ্রাহক বেশি।
অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, এমএফএসের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়লেও এ ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে আছেন। বিশেষ করে মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ ও প্রয়োজনীয় জ্ঞান কম থাকায় গ্রামের নারীরা এমএফএস সেবা গ্রহণে পিছিয়ে রয়েছেন।
মুস্তফা কে মুজেরী মনে করেন, দেশে এমএফএস লেনদেনে পরিষেবা খরচ অনেক বেশি। লেনদেনের খরচ কমিয়ে এই সেবাকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করা গেলে গ্রাহক বাড়বে।